অসমীয়া   বাংলা   बोड़ो   डोगरी   ગુજરાતી   ಕನ್ನಡ   كأشُر   कोंकणी   संथाली   মনিপুরি   नेपाली   ଓରିୟା   ਪੰਜਾਬੀ   संस्कृत   தமிழ்  తెలుగు   ردو

অপ্রথাগত ক্ষেত্র ও ভারতীয় অর্থনীতিতে এর অবদান

ভূমিকা

আধুনিক বিশ্বে শ্রমশিক্তর বাজারে একটা বড় অংশ জুড়ে আছে অপ্রথাগত ক্ষেত্রের শ্রম। এই শ্রমিকরা পুরোপুরি ভাবে অসংগঠিত এবং বিভিন্ন ধরনের কাজের সঙ্গে যুক্ত। বিগত বেশ কয়েক দশক ধরে দেখা গেছে যে উন্নয়নশীল দেশগুলি তাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের হার বেশ উচ্চগ্রামে বেঁধে রাখতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু মজার কথা এই যে উন্নয়নের হার উচ্চ হলেই যে শ্রম নিযুক্তির হার সেই পরিমাণে বাড়বে তা নয়। এই সত্য প্রতিভাত হয়েছে উন্নয়নশীল দেশগুলির প্রথাগত নিযুক্তির ক্ষেত্রে। প্রথাগত নিযুক্তি উন্নয়ন বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে হয় আদৌ বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়নি, নতুবা খুবই কম হারে বেড়েছে। অন্য দিকে দেখা গেছে যে উন্নয়নশীল দেশগুলিতে ওই একই সময়ে অত্যন্ত দ্রুতহারে প্রথামুক্ত ক্ষেত্রের নিযুক্তি বৃদ্ধি পেয়েছে (আইএলও– ডবলুটিও, ২০০৯)।

অর্থনৈতিক মন্দার ফল

এ ছাড়া বর্তমান শতাব্দীর গোড়ার দশকে সারা বিশ্ব জুড়ে যে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিয়েছিল এবং তার ফলশ্রুতিতে উন্নয়নশীলসহ বিশ্বের তাবৎ দেশে প্রথাগত ক্ষেত্রে যে ব্যাপক কর্মচ্যুতি দেখা দেয়, তা পরবর্তী বছরগুলিতে অপ্রথাগত ক্ষেত্রে শ্রমশক্তি বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। উন্নয়নশীল দেশগুলিতে প্রথাগত ক্ষেত্রের ছাঁটাই হওয়া শ্রমিকরা এক প্রকার বাধ্য হয়েই অপ্রথাগত ক্ষেত্রের শ্রমের বাজারে যুক্ত হয়েছিল (আইএলও,২০০৯)। ভূমিকায় এই উল্লেখটুকুর দরকার এই কারণে যে বর্তমানে আমাদের দেশসহ বিশ্বের বহু উন্নয়নশীল দেশেই প্রথাগত ক্ষেত্রের চাইতে প্রথামুক্ত ক্ষেত্রের শ্রমিক সংখ্যা ব হুগুণ বেশি। তাই আজকের দিনে কোনও দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন পর্যালোচনা তথা দেশের শ্রমবাজারের পরিস্থিতি নিরূপণ ও কর্মক্ষম জনসংখ্যার নিযুক্তি বিশ্লেষণে অপ্রথাগত ক্ষেত্রকে উপেক্ষা করা তো যায়ই না, বরং তা সবিশেষ পর্যবেক্ষণের দাবি রাখে।

অপ্রথাগত ক্ষেত্র কী

১৯৭১ সালে কীথ হার্ট ‘প্রথামুক্ত আয়ের সুযোগ এবং ঘানায় শহরাঞ্চলে নিযুক্তি’ শীর্ষক গবেষণাপত্রে প্রথম ‘অপ্রথাগত ক্ষেত্র’ বিষয়ের আলেচনা করেন। তবে হার্টের বিশ্লেষণে প্রথামুক্ত ক্ষেত্রটি এই ভাবে বিচার করা হয়েছিল যে শ্রমদান বাবদ শ্রমিক আদৌ মজুরি হাতে পাচ্ছে, না কি শ্রমিকের শ্রমদান স্বনিযুক্তিতে সীমাবদ্ধ। কারণ স্বনিযুক্তিতে শ্রমিকের মজুরি নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট হারে পাওয়ার উপায় থাকে না, কেননা সে নিজেকেই নিজে তার আপন অর্থনৈতিক কাজ কারবারে নিয়োজিত করেছে।

তবে ১৯৭২ সালে আফ্রিকার কেনিয়াতে আন্তর্জাতিক শ্রম সংঘের (আইএলও) বিশেষ কার্যক্রমের মাধ্যমে ‘অপ্রথাগত ক্ষেত্রের’ আলোচনা ও বিশ্লেষণ অর্থনীতিবিদদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ১৯৯৩ সালে আন্তর্জাতিক শ্রম সংঘ প্রথামুক্ত ক্ষেত্রের তথ্য‌ ও পরিসংখ্যান সংগ্রহের উদ্দেশ্যে যুক্তিনিষ্ঠ এক নিয়মাবলি প্রণয়ন করে এবং পরবর্তীকালে রাষ্ট্রসংঘ উক্ত নিয়মাবলিকে মান্যতা দেয়। এর পর থেকেই অপ্রথাগত ক্ষেত্রের সম্পর্কে যথেষ্ট আগ্রহ ও গবেষণার সুযোগ বৃদ্ধি পেয়েছে।

কয়েকটি ভাগ

অপ্রথাগত ক্ষেত্রে নিযুক্ত শ্রমশক্তির বিশালতা ও ব্যাপকতা আন্দাজ করা বাস্তবিকই শক্ত। তবু বিভিন্ন জীবিকায় নিযুক্ত শ্রমিকদের মোটের ওপর নিম্নলিখিত কয়েকটি ক্ষেত্রে ভাগ করা যেতে পারে—

  • ক) কৃষিকার্য : ভূমিহীন কৃষি শ্রমিক, ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষি, পশুপালন, শস্য সংরক্ষণ ও খামারশিল্পে নিযুক্ত শ্রমিক, কারুজীবী প্রভৃতি।
  • খ) শিল্প : ইটভাটায় ও নির্মাণ প্রকল্পে নিযুক্ত শ্রমিক, বিড়ি শিল্প, ধূপকাঠি শিল্প ও অন্যান্য কুটির শিল্পে নিযুক্ত শ্রমিক।
  • গ) সেবাক্ষত্র : স্থানীয় পরিবহণে নিযুক্ত শ্রমিক, দোকান ও গৃহকর্মে নিযুক্তি, রাস্তার হকার, কাগজ কুড়ানি প্রভৃতি।
  • ঘ) কর্মশালা : জুতা তৈরি, দরর্জির কাজে, সূচীশিল্পে নিযুক্তি। তা ছাড়া কামারশালা, গ্রিল তৈরি প্রভৃতি।
  • ঙ) ঘরোয়া বা পারিবারিক ক্ষেত্র : পোশাক তৈরি, হস্তশিল্প এবং কারুশিল্পে নিযুক্তি।

অনেকটাই ঘরোয়া ক্ষেত্র

উপরে বর্ণিত ক্ষেত্রগুলি বলা চলে উদাহরণমূলক, এর বাইরে অসংখ্য জীবিকা ও উপজীবিকা আছে যা মূলত অপ্রথাগত ক্ষেত্রের অন্তর্গত। এ কথা বলা চলে যে প্রথাগত ক্ষেত্রের মতোই অপ্রথাগত ক্ষেত্র দ্রব্য ও সেবার উত্পাদন এবং বণ্টনে নিযুক্ত থাকে। কিন্তু প্রথামুক্ত ক্ষেত্রের বৈশিষ্ট্য এই যে এখানে কোনও একটি অর্থনৈতিক ক্রিয়াকর্মে নিযুক্ত শ্রমশক্তি সংখ্যায় খুবই অল্প (আইএলও-এর সংজ্ঞানুসারে যা দেশবিভেদে ৫ থেকে ১০-এর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে) এবং শ্রমিকরা তাদের আয়ের উত্স হিসেবে এই ক্ষেত্রে শ্রমদান করে। এখানে কোনও সামাজিক নিরাপত্তা, এমনকী মজুরির হার দেশে প্রযোজ্য আইন অনুযায়ী নির্দিষ্ট থাকে না। অপ্রথাগত ক্ষেত্রের শ্রমিক প্রায়শই ঘরোয়া ভাবে নিযুক্ত হন, অনেক ক্ষেত্রেই তা আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব বা চেনা-পরিচিতের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। তাই অপ্রথাগত ক্ষেত্রের অনেকটাই ঘরোয়া ক্ষেত্রের অন্তর্ভুক্ত।

ভারতের ছবি

১৯৪৮ সালের কারখানা আইনের বিধান এই যে, কোনও উত্পাদন প্রতিষ্ঠান যদি শক্তি ব্যবহার করে কমপক্ষে ১০ জন অথবা শক্তির ব্যবহার ব্যতিরেকে কমপক্ষে ২০ জন শ্রমিক নিযুক্ত করে তবে উক্ত প্রতিষ্ঠানটি এই আইনের আওতায় আসবে এবং তা প্রথাগত ক্ষেত্র হিসেবে বিবেচিত হবে। এর বাইরে থাকা সমস্ত উত্পাদন প্রতিষ্ঠানকেই অপ্রথাগত ক্ষেত্র হিসেবে গণ্য করা হবে।

ভারতীয় বৈশিষ্ট্য

ভারতে জাতীয় নমুনা সমীক্ষা দফতর (এনএসএসও) বেশ কিছু কাল ধরে অপ্রথাগত ক্ষেত্রের বিভিন্ন পরিসংখ্যান সংগ্রহের কাজে ব্যাপৃত আছে এবং বলাই বাহুল্য অপ্রথাগত ক্ষেত্রের আলোচনায় এই পরিসংখ্যানই যথাযথ মান্যতা পায়। ভারতে অপ্রথাগত ক্ষেত্রের বৈশিষ্ট্যসমূহেক নিম্নলিখিতভাবে চিহ্নিত করা যায়—

  • ১) অপ্রথাগত ক্ষেত্রে শ্রম ও মূলধনের পার্থক্য খুব সামান্যই বা অনেক সময় প্রায় থাকে না বললেই চলে। এর সাংগঠনিক কাঠামো খুবই ছোট এবং প্রতিষ্ঠানটি ক্ষুদ্র মাত্রিক।
  • ২) অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানই পারিবারিক ভাবে গড়ে তোলা হয় এবং ঘরোয়া আত্মীয়স্বজন এতে প্রয়োজন অনুযায়ী নিযুক্ত হন।
  • ৩) প্রায় সকল প্রতিষ্ঠানেই প্রথামাফিক হিসাবনিকাশের কোনও খাতাপত্র থাকে না। এর ফলে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ অসুবিধাজনক হয়ে দাঁড়ায়।
  • ৪) প্রতিষ্ঠানের মালিক নিজস্ব দায়বদ্ধতা ও ঝুঁকিতে অর্থ বিনিয়োগ করে থাকেন এবং এই প্রতিষ্ঠানের দায় সীমাহীন হয়, কেননা প্রাতিষ্ঠানিক যা কিছু ক্রিয়াকার্য তা সবটাই ব্যক্তিকেন্দ্রিক।
  • ৫) বহু ক্ষেত্রে দেখা যায় যে বাড়ির নিজস্ব খরচ খরচার সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের উত্পাদন খরচ জড়িয়ে ফেলা হয়েছে। এ জন্য প্রকৃত উত্পাদন খরচ নির্ণয় করা কঠিন হয়ে পড়ে।

অপ্রথাগত ক্ষেত্রের অবস্থান

ভারতবর্ষের অর্থনীতিতে অপ্রথাগত ক্ষেত্র এক অতীব গুরুত্বূপর্ণ স্থান গ্রহণ করে আছে। ২০০৪-০৫ সালের এক সমীক্ষায় (এনএসএসও সমীক্ষা ) প্রকাশ যে ভারতবর্ষের মোট শ্রমশক্তির প্রায় ৮৬ শতাংশ প্রথামুক্ত ক্ষেত্রে নিযুক্ত। বাকি অংশের মধ্যে ৪.৫ শতাংশ সরকারি সংগঠিত ক্ষেত্রে, ২.৫ শতাংশ যৌথমূলধনি কারবারি প্রতিষ্ঠানে এবং অবশিষ্ট প্রায় ৭ শতাংশ নিয়োগ সংগঠিত ও প্রথাগত ঘরোয়া প্রতিষ্ঠানে হয়েছে যেখানে ৫ বা ততোধিক শ্রমিক নিয়োজিত। আর যদি দেশের সামগ্রিক নিট অভ্যন্তরীণ উত্পাদনের কথা দেখা যায়, সে ক্ষেত্রে বর্তমান বাজারদরের নিরিখে অপ্রথাগত ক্ষেত্রের অংশভাগ ৬০ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। এনএসএসও-এর এক হিসাবে দেখানো হয়েছে যে ২০০৪-০৫ সালে ভারতবর্ষে শ্রমিক সংখ্যা প্রায় ৪৫ কোটি ৭৫ লক্ষের মতো। সংখ্যাটি তার বছর পাঁচেক আগে ছিল সাড়ে উনচল্লিশ কোটির মতো। ২০০৪-০৫ সালে সমগ্র ভারতে প্রায় চল্লিশ কোটির কাছাকাছি মানুষ অপ্রথাগত ক্ষেত্রে যুক্ত ছিলেন যা ভারতের মোট শ্রমিক সংখ্যার প্রায় ৮৬ শতাংশ।

বেড়েছে নিযুক্তি

বর্তমান শতাব্দীর গোড়ার পাঁচ বছরে ভারতে কী হারে প্রথাগত ও প্রথামুক্ত ক্ষেত্রের নিযুক্ত শ্রমিক সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছ তা সারণি-১ এ দেখানো হয়েছে। এখানে দেখা যাচ্ছে যে গ্রাম ও শহর নির্বিশেষে প্রথাগত ও অপ্রথাগত ক্ষেত্রে নিযুক্ত শ্রমিক সংখ্যা উক্ত পাঁচ বছরের সময়কালে উভয়ক্ষেত্রেই বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে গ্রামাঞ্চলে গড় বার্ষিক শ্রমিক নিযুক্তি বৃদ্ধির হার প্রথাগত ক্ষেত্রে (৩.৬৯ শতাংশ) বেশি, প্রথামুক্ত ক্ষেত্রে (২.৭ শতাংশ) কিছু কম। কিন্তু শহরাঞ্চলে বিষয়টা ঠিক উলটো। সেখানে ওই সময়কালে (১৯৯৯-০০ থেকে ২০০৪-০৫ সাল) প্রথাগত ক্ষেত্রে গড় বার্ষিক বৃদ্ধির হার (২.৬৭ শতাংশ) অপ্রথাগত ক্ষেত্রে বৃদ্ধির হারের (৪.৩৬ শতাংশ) বেশ কম।

সারণি-

ভারতে অপ্রথাগত ও প্রথাগত ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের নিযুক্তির সংখ্যা

(১০ লক্ষের হিসাবে)

ক্ষেত্র

লিঙ্গ

অপ্রথাগত ক্ষেত্র

প্রথাগত ক্ষেত্র

সর্বমোট

 

 

১৯৯৯-২০০০

২০০৪-২০০৫

১৯৯৯-২০০০

২০০৪-২০০৫

১৯৯৯-২০০০

২০০৪-২০০৫

গ্রামীণ

পুরুষ

১৭৮.৫০

১৯৭.৮৭

১৮.২৪

২১.১৭

১৯৬.৭৪

২১৯.০৪

নারী

৯৮.৬৩

১১৭.২১

.৩৯

.৮২

১০৪.০২

১২৪.০৩

মোট জনসংখ্যা

২৭৭.১৩

৩১৫.০৮

২৩.৬৩

২৭.৯৯

৩০০.৭৫

৩৪৩.০৭

নগরাঞ্চল

পুরুষ

৫১.৬২

৬১.৯৪

২৫.৪২

২৮.৪৬

৭৭.০৫

৯০.

নারী

১৩.৮৯

১৭.৮৮

.০৭

.১২

১৮.৯৬

২৪.

মোট জনসংখ্যা

৬৫.৫১

৭৯.৮২

৩০.৫০

৩৪.৫৮

৯৬.০১

১১৪.

সর্বমোট

পুরুষ

২৩০.১২

২৫৯.৮১

৪৩.৬৬

৪৯.৬৩

২৭৩.৭৮

৩০৯.৪৪

নারী

১১২.৫২

১৩৫.০৯

১০.৪৬

১২.৯৪

১২২.৯৮

১৪৮.০৩

মোট জনসংখ্যা

৩৪২.৬৪

৩৯৪.৯০

৫৪.১২

৬২.৫৭

৩৯৬.৭৬

৪৫৭.৪৭

উত্সঃ ভারতের NSSO-এর ৫৫তম (১৯৯৯-২০০০) এবং ৬১ তম (২০০৪-০৫) সমীক্ষা থেকে গৃহীত।

অপ্রথাগত ক্ষেত্রে নিযুক্তি

সারণি-

কৃষি ব্যতিরেক ক্ষেত্রে অপ্রথাগত নিযুক্তি (তিনটি দেশের তুলনা)

সময় কাল ২০০৯-১০

দেশের নাম

পরিবহণে নিযুক্তি

নির্মাণকার্যে নিযুক্তি

ব্যবসায় নিযুক্তি

উত্পাদনক্ষেত্রে নিযুক্তি

পরিবহণ ও বাণিজ্য ব্যতীত অন্যান্য সেবা

সামগ্রিক অকৃষি ক্ষেত্রের প্রথামুক্ত নিযুক্তি

কত শতাংশ প্রথামুক্ত

সামগ্রিক অ-কৃষি নিযুক্তির কত শতাংশ

কত শতাংশ প্রথামুক্ত

সামগ্রিক অ-কৃষি নিযুক্তির কত শতাংশ

কত শতাংশ প্রথামুক্ত

সামগ্রিক অ-কৃষি নিযুক্তির কত শতাংশ

কত শতাংশ প্রথামুক্ত

সামগ্রিক অ-কৃষি নিযুক্তির কত শতাংশ

কত শতাংশ প্রথামুক্ত

সামগ্রিক অ-কৃষি নিযুক্তির কত শতাংশ

কত শতাংশ প্রথামুক্ত

সামগ্রিক অ-কৃষি নিযুক্তির কত শতাংশ

ভারত

৮৪.

.

৯৭.

২০.

৯৭.

২১.

৮৭.

২৩.

৫৯.

২৫.

৮৩.

১০০

পাকিস্তান ২

৮৪.

.

৯৬.

১২.

৯৬.

২৯.

৮০.

২৫.

৪১.

২৩.

৭৮.

১০০

চীন ৩

২১.

.

৩৫.

.

৫৯.

২০.

১৭.

১৫.

২৭.

৫০.

৩২.

১০০

উত্সঃ) ভারতের জাতীয় নমুনা সমীক্ষা (৬৬তম)। ২) পাকিস্তানের শ্রমশক্তি সমীক্ষা। ৩) চীনের নগরকেন্দ্রিক শ্রম সমীক্ষা (ছয়টি শহরে)

 

অপ্রথাগত ক্ষেত্রের নিযুক্তি কোনও দেশের সামগ্রিক নিয়োগের নিরিখে কী স্থান অধিকার করে থাকে তুলনামূলক ব্যাখ্যার জন্য এশিয়ার তিনটি দেশ যথা—ভারত, পাকিস্তান এবং চীনের ‘কৃষিক্ষেত্র বহির্ভূত নিযুক্তির’ বিশ্লেষণ করা হয়েছে (সারণি-২) যার সবটুকু অপ্রথাগত ক্ষেত্রের অন্তর্গত। কৃষি বহির্ভূত ক্ষেত্রগুলিকে পাঁচ ভাগে ভাগ করা হয়েছে—পরিবহণ, নির্মাণকার্য, উত্পাদন, ব্যবসা এবং ‘ব্যবসা ও পরিবহণ ব্যতীত’ অন্যান্য সেবামূলক কার্যক্ষেত্র। সারণি-২ পর্যালোচনা করলে দেখতে পাওয়া যাচ্ছে যে ভারত এবং পাকিস্তানের ক্ষেত্রে পরিবহণ, ব্যবসা, নির্মাণকার্য ও উত্পাদন—এই চারটি অ-কৃষি ক্ষেত্রে প্রথামুক্ত নিযুক্তি প্রায় সমান বা কম বেশি কাছাকাছি। তবে পাকিস্তানে নির্মাণ কার্যের ভূমিকা সামগ্রিক অ-কৃষি নিযুক্তির নিরিখে কম, মাত্র ১২.৩ শতাংশ (ভারতে ২০.৮ শতাংশ)। আর চীনের ক্ষেত্রে এই হার আরও কম—মাত্র ৪.১ শতাংশ। ভারত ও পাকিস্তানে যেখানে অপ্রথাগত অ-কৃষি ক্ষেত্রে নিযুক্তি যথাক্রমে ৮৩.৬ এবং ৭৮.৪ শতাংশ, চীনের ক্ষেত্রে তা বেশ কম, মাত্র ৩২.৪ শতাংশ। অর্থাৎ চীনের সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে যে অপ্রথাগত ক্ষেত্রের নিযুক্তি প্রথাগত নিযুক্তির চেয়ে অনেক কম যা ভারত ও পাকিস্তানে সম্পূর্ণ বিপরীত। চীনে ‘পরিবহণ ও বাণিজ্য ব্যতীত অন্যান্য সেবাক্ষেত্র’-এ নিযুক্তি ভারত ও পাকিস্তানের দ্বিগুণ—৫০.৪ শতাংশ। এ কথা তাই বলা যেতে পারে যে এশিয়া মহাদেশে অর্থনৈতিক ভাবে অন্যতম এক প্রতিশ্রুতিপূর্ণ দেশ হওয়া সত্ত্বেও ভারত কিন্তু চীনের থেকে অনেক বিষয়ে পিছিয়ে আছে; যার একটি দক হল অপ্রথাগত ক্ষেত্রে ব্যাপক সংখ্যায় নিযুক্তি যা কিনা অনুন্নত বা উন্নয়নশীল দেশগুলির অন্যতম বৈশিষ্ট্য।

উপসংহার

বর্তমানে দেশে ঠিক কত সংখ্যায় শ্রমিক অপ্রথাগত ক্ষেত্রে নিযুক্ত আছেন এবং দেশের মোট অভ্যন্তরীণ উত্পাদনের ঠিক কতটা অংশ অপ্রথাগত ক্ষেত্রের দান তা সঠিক ভাবে নিরূপণ করা শক্ত। কারণ এ বিষয়ে প্রকৃত তথ্য আহরণের অনেক প্রতিবন্ধকতা আছে। অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রেও এই সীমাবদ্ধতা কম বেশি সত্য। তবে যাই হোক এনএসএসও সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে বলতে হয় যে ভারতবর্ষের অর্থনীতিতে অপ্রথাগত ক্ষেত্রের যে অবদান তা প্রথাগত ক্ষেত্রের চেয়ে কোনও অংশে কম তো নয়ই বরং অপ্রথাগত ক্ষেত্রের নিযুক্তি দেশের এক বিশাল সংখ্যক কর্মক্ষম মানুষকে উপার্জনের রাস্তায় এনেছে। কিন্তু এ কথা অনস্বীকার্য যে অপ্রথাগত ক্ষেত্রের শ্রমিকরা দীর্ঘকাল ধরেই চরম অর্থনৈতিক বঞ্চনার শিকার। তাদের না আছে ন্যূনতম মজুরি পাওয়ার নিশ্চয়তা, না আছে কোনও সামাজিক সুরক্ষা। এমনকী বছরে সব দিন কাজও জোটে না এবং অসুস্থতা, আঘাতজনিত কারণে শারীরিক সক্ষমতা নষ্ট হলে অনাহার ও মৃত্যুই যেন অবশ্যম্ভাবী পরিণতি।

সুবাতাসের প্রতীক্ষায়

উল্টো দিকে প্রথাগত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের, বিশেষত সরকারি ক্ষেত্রে, চাকুরি জীবন এবং অবসরকাল সবটাই অর্থনৈতিক ভাবে যথেষ্ট সচ্ছল। এ কথা তো অস্বীকার করার উপায় নেই যে, কেউই জেনে বুঝে শখ করে কম বেতনে ও কঠোর শর্তে প্রথামুক্ত ক্ষেত্রে নিযুক্ত হতে চায় না। প্রথাগত ক্ষেত্রে নিয়োগে সুযোগের অভাব তাকে অপ্রথাগত ক্ষেত্রে যুক্ত হতে বাধ্য করে। অথচ, এটাও সত্য যে দেশের অর্থনীতির সিংহ ভাগ এই অপ্রথাগত ক্ষেত্রে নিযুক্ত শ্রমিকদের শ্রমদানে গড়ে উঠছে। ওই বিষয়টিতে আমাদের দেশের সরকারের আশু নজর দেওয়া প্রয়োজন যাতে করে অপ্রথাগত ক্ষেত্রের একটা বড় অংশ, যারা বৃহৎ শিল্পের অনুসারী ক্ষেত্রে যুক্ত তাদের জীবনযাত্রার মানের উন্নয়ন সম্ভব হয়। উন্নয়নশীল অনেক দেশেই ওই বিষয়ে নজর দেওয়া হচ্ছে। ভারেতও বেশ কিছু পরিবর্তন এসেছে। তবে আরও গুরুত্বপূর্ণ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। আগামী দিনগুলোতে আশা করা যায় যে ওই বিষয়ে আরও সুসংবদ্ধ নীতি নির্দেশিকা প্রণয়ন করা হবে যার সঠিক রূপায়ণ কিছুটা হলেও অপ্রথাগত ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত শ্রমিকদের জীবনে সুবাতাস বহন করে আনবে।

সূত্র : যোজনা, অক্টোবর, ২০১৪।

সর্বশেষ সংশোধন করা : 6/26/2020



© C–DAC.All content appearing on the vikaspedia portal is through collaborative effort of vikaspedia and its partners.We encourage you to use and share the content in a respectful and fair manner. Please leave all source links intact and adhere to applicable copyright and intellectual property guidelines and laws.
English to Hindi Transliterate