অপ্রথাগত ক্ষেত্রের কর্মীদের কোনও নিরাপত্তা নেই, নেই মালিক ও কর্মীর মধ্যে কোনও রকম চুক্তি। এদের মজুরিও যেমন কম, তেমনি কাজও করতে হয় অনেক বেশি সময় ধরে; কর্মীদের নানা ধরনের ঝুঁকির মধ্যে দিয়ে কাজ করতে হয়; ন্যূনতম মৌলিক শ্রম অধিকারের সুবিধা এরা ভোগ করে না। এক কথায় শ্রমিক ও মালিক সংক্রান্ত কোনও আইনের আওতায় তারা পড়ে না। অপ্রথাগত ক্ষেত্রে এর কোনওটাই ভোগ করে না শ্রমিকরা। তবে দু’টি ক্ষেত্রের সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট্যের এই সুস্পষ্ট ফারাক সত্ত্বেও সব সময় সব ধরনের কাজেক কোন শ্রেণিতে ফেলা উচিত, তা নিয়ে একটু ধাঁধা লেগেই থাকে। যেমন অসংগঠিত ক্ষেত্রভুক্ত উদ্যোগ সংক্রান্ত জাতীয় কমিশন (এনসিইউএস)-এর মতে ‘প্রথাগত ক্ষেত্রে যেমন অপ্রথাগত ক্ষেত্রের বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে নিয়োগ হয়ে থাকে।’ তেমনি ‘অপ্রথাগত ক্ষেত্রেও কোনও কোনও সময়ে প্রথাগত ক্ষেত্রের নিয়ম মেনে নিয়োগ হয়।’ ফলে প্রথাগত ক্ষেত্রে এমন ‘কাজ বা চাকরি’ আমরা দেখি যাতে অপ্রথাগত ক্ষেত্রের বৈশিষ্ট্য বর্তমান। এর উল্টোটাও ঘটতে দেখা যায়। অতএব প্রথাগত বা অপ্রথাগত নিয়োগ সম্পর্কে ধারণাটা স্পষ্ট হওয়া দরকার। তা না হলে একের সঙ্গে অপর ক্ষেত্রের জড়িয়ে, মিশে থাকার ব্যাপারটা আমাদের কাছে কখনওই পরিষ্কার হবে না। কোন কাজটায় প্রথাগত ক্ষেত্রের নিয়ম মানা হচ্ছে, আর কোন কাজটায় অপ্রথাগত ক্ষেত্রের বঞ্চনাই বেশি, সে সম্পর্কে বুঝতে হলে এই ক্ষেত্র দু’টি সম্পর্কে ধারণা থাকা অত্যন্ত জরুরি। এই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা এমন একটি চাকরি সম্পর্কে আলোচনা করব যা আপাতদৃষ্টিতে প্রথাগত ক্ষেত্রভুক্ত হলেও প্রকৃত পক্ষে অপ্রথাগত ক্ষেত্রের সমস্ত বৈশিষ্ট্য সম্নন্ন। আজকালকার যুগের তরুণ-তরুণীরা অনেকেই এই চাকরিতে বহাল --- কলসেন্টার-এর চাকরি।
পরিষেবা ক্ষেত্রের এক অপরিহার্য অঙ্গ এই ‘কলসেন্টার’গুলি। যে সব সংস্থার সঙ্গে কলসেন্টারগুলি যুক্ত যে হেতু সেগুলি সব সংগঠিত ক্ষেত্রভুক্ত, ঝাঁ-চকচকে আধুনিক প্রযুক্তির সমস্ত সুবিধাযুক্ত বিরাট বিরাট অফিস বাড়ির অংশ বিশেষ এবং আকর্ষণীয় এ চাকরির বেতন এবং অন্যান্য ‘প্যাকেজ’ যে হেতু যথেষ্ট লোভনীয় তাই একে কখনওই অপ্রথাগত ক্ষেত্রভুক্ত বলে মনে না হতে পারে। কিন্তু খুব কাছ থেকে দেখলে বোঝা যাবে এ চাকরিতেও নিরাপত্তার অভাব যথেষ্ট। এই প্রবন্ধে কলসেন্টার এবং বড় বড় সংস্থায় ‘আউটসোর্সড’ চাকরির বাড়বাড়ন্ত, তার কারণ ও প্রবণতাগুলি সম্পর্কে আলোচনা করা হবে।
আশির দশকে, বিশ্বের উন্নত দেশগুলিতে যখন প্রতিদ্বন্দিতার ঢেউ উঠেছে, তখন থেকেই আউটসোর্সি-এর প্রক্রিয়া বাড়তে থাকে। তবে আউটসোর্সি-এর ধারণাটা আগেও ছিল এবং তা কাজেও লাগানো হত। বড় বড় বাণিজ্য ও শিল্প সংস্থা তাদের তূলনামূলক ভাবে কম গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলি পূর্ব নির্ধারিত ছোটখাটো সংস্থাগুলিকে দায়িত্ব দিয়ে করিয়ে নিতে আরম্ভ করে। যে সব অঞ্চলে কম পারিশ্রমিকের বিনিময়ে সহজে কাজ করিয়ে নেওয়া হয়। বড় বাণিজ্য সংস্থার সঙ্গে এই সমস্ত ছোট ছোট সংস্থার যোগাযোগ স্থাপন করা হত প্রযুক্তির সাহায্যে। প্রথম প্রথম এ কাজ উন্নত রাষ্ট্রের গ্রাম অথবা শহরতলি অঞ্চলের মানুষ দিয়েই করানো হত কারণ সেখানে মজুরির হার শহরের তুলনায় কম। অর্থাৎ তখনও পর্যন্ত শিল্পপতিরা খরচ বাঁচিয়ে বেশি মুনাফা অর্জনের জন্য দেশের গণ্ডির বাইরে যেতেন না।
নব্বই-এর দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে ভারতের নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের সামনে চাকরির এক নতুন ক্ষেত্র খুলে যেতে দেখলাম -- আমরা তথ্যপ্রযুক্তি, তথ্যপ্রযুক্তি সংক্রান্ত পরিষেবা ও ব্যবসায়িক প্রক্রিয়ার জন্য প্রয়োজনীয় আউটসোর্সিং। বর্তমানে ভারত এই পরিষেবা ক্ষেত্রে এক নম্বর স্থান অধিকার করে এবং এই ক্ষেত্রটি বিশ্বের সব থেকে দ্রুত বেড়ে ওঠা ক্ষেত্রগুলির অন্যতম। ‘ন্যাসকম’-এর হিসাবমতো ১৯৯৮ সালে দেশের মোট জিডিপিতে এই বিশেষ ধরনের পরিষেবার হিসসা ছিল ১.২ শতাংশ। ২০১২-তে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৭.৫ শতাংশে। অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০১৩-১৪ জানাচ্ছে যে, ২০১৩ সালে টোটাল গ্লোবাল সোর্সি মার্কেটের ৫৫ শতাংশ ( ইঞ্জিনিয়ারিং সংক্রান্ত পরিষেবা ও আর অ্যান্ড ডি ক্ষেত্র ছাড়া) আসে ভারত থেকে। ২০১২ সালে এই হার ছিল ৫২ শতাংশ। সমীক্ষা এ-ও জানায় যে ২০১৩-১৪ সালে আইটি বিজনেস প্রসেস ম্যানেজমেন্ট (বি পি এম) ক্ষেত্র (হার্ডওয়্যার বাদে) ১০.৩ শতাংশ বৃদ্ধি পায় যার আর্থিক মূল্য ১০৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তথ্য প্রযুক্তি সংক্রান্ত জাতীয় নীতির অনুমান আইটি ও তত্সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রের থেকে আয়ের পরিমাণ ২০১১-১২ সালের ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে বেড়ে ২০২০ সাল নাগাদ ৩০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হবে। এ ছাড়া এ ক্ষেত্রে রপ্তানির পরিমাণও ২০১১-১২ সালের ৬৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে বেড়ে ২০২০ সালে হবে ২০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, এমনটাই অনুমান করা হচ্ছে।
ভারতে তথ্যপ্রযুক্তি ও সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রের বৃদ্ধিকে মোটামুটি ভাবে দু’টি পর্যায়ে ভাগ করা যায়। প্রথম পর্যায়ে (১৯৯০ সালের মাঝামাঝি থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত)। আন্তর্জাতিক স্তরে নিয়োগ করা হত এবং তাতে ভারতীয় কর্মীরা ছিলেন অন্যতম কর্মী। পরে, অর্থাৎ (২০০৫ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত) ভারতে তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রের দ্রুত প্রসারের ফলে বহু কর্মী দেশি সংস্থাগুলিতেই কর্মসংস্থানের সুযোগ পাচ্ছেন। ২০০৯ সাল পর্যন্ত ভারতেই কর্মসংস্থানের সুযোগ ঘটে ৪, ৫০,০০০ জনের। এ ক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের সুযোগ ক্রমশ বাড়ছে ২০১২ সালে আইটি বিপিও ক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের হারে ২০.৭ শতাংশ বৃদ্ধি ঘটে বলে ‘ন্যাসকম’ জানাচ্ছে।
তথ্যপ্রযুক্তি ও তত্সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের হারে এই অকল্পনীয় বৃদ্ধি গত কয়েক বছরে ঘটে গেল, তার মধ্যে সব থেকে বেশি চোখে পড়ার মতো বৃদ্ধি ঘটেছে ‘কলসেন্টার’গুলিতে। যদিও এ ক্ষেত্রে হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যার ডেভেলপেমন্ট, মেডিক্যাল ট্রান্সক্রিপশন, ওয়ার্ড প্রসেসিং, ডেস্কটপ প্রিন্টিং, ডিজাইনিং ও গ্রাফিক্স ইত্যাদির মতো বহু ধরনের কাজ রয়েছে, তবু ‘কলসেন্টার’-এর নিয়োগের হার ছিল সব থেকে বেশি। জিডিপিতে কলসেন্টার এর অবদানও কম নয়।
কলসেন্টার-এর কাজের সঙ্গে আমরা সবাই অল্পবিস্তর পরিচিত। ফোনের মাধ্যমে মার্কেটিং, ক্রেতাদের সঙ্গে পণ্যের কেনাবেচা, তার যত্ন ও মেরামত সংক্রান্ত কথোপকথন ইত্যাদি তো আছেই, সেই সঙ্গে আছে ক্লায়েন্টদের প্রয়োজন অনুযায়ী পরিসংখ্যান সংকলন, বেতন সংক্রান্ত হিসাবনিকাশ প্রস্তুত করার মতো অন্যান্য কাজও। আমাদের ধারণা কলেসন্টার-এর কর্মীরা কথোপকথনের মাধ্যমেই তাঁদের কাজ করেন। কিন্তু তা সব সময় নয়। ইন্টারনেট এবং ই-মেলের মাধ্যমে যোগাযোগ স্থাপনও করা হয় এ ধরনের কাজে।
এ ছাড়াও যেটা জানা দরকার, তা হল কলসেন্টারগুলি শুধু মাত্র এক জন ক্লায়েন্ট-এর প্রয়োজন পূরণ করে না, একাধিক সংস্থার জন্য একই সঙ্গে কাজ করে ‘নন ক্যাপিটভ’ কলসেন্টারগুলি। আকার, কাজের ধরন, কাজের সময়, ক্লায়েন্টের চাহিদা, কর্মীদের আর্থ সামাজিক অবস্থা, কমেপনসেশন প্যাকেজ অনুযায়ী কলসেন্টারগুলির বৈচিত্র বাড়ে।
আগেই বলেছি প্রথম দিকে কলসেন্টারগুলি আন্তর্জাতিক আউটসোর্সড সার্ভিস-এর অঙ্গ হিসেবে প্রসার লভ করে। এগুলি ছিল মূলত টেলিফোনভিত্তিক কাজ এবং ইংরাজি ভাষাতেই কথাবার্তা বলতে হয়। কিন্তু এখন দেশেই কলসেন্টার-এর রমরমা। এ ক্ষেত্রে কাজের ধরনেও বৈচিত্র আছে এবং যোগাযোগের মাধ্যম হিন্দি, ইংরাজি এবং কোনও কোনও আঞ্চলিক ভাষা। তবে আন্তর্জাতিক ও দেশি কলসেন্টার কর্মীদের ক্ষেত্রে এ ছাড়াও অনেক তফাত। সমীক্ষায় দেখা গেছে, যে বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত কলসেন্টার কর্মীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা তূলনামূলক ভাবে ভালো, তাদের উপার্জন বেশি। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রের কর্মীরা সমাজের উচ্চবিত্ত শ্রেণিভুক্ত অথচ দেশের কলসেন্টার কর্মীরা অসচ্ছল পরিবারের ছেলেমেয়ে, তাদের শিক্ষার মানও তেমন ভাল নয়, এবং বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় তারা গ্রামাঞ্চলের ছেলেমেয়ে। আন্তর্জাতিক ও দেশি কলসেন্টার কর্মীদের মধ্যে আর্থ-সামাজিক ফারাকটা যখন এতটাই বেশি, তখন এদের কর্ম নিরাপত্তার বিষয়টিও পৃথক ভাবে আলোচনা করা ভাল।
আন্তর্জাতিক কলসেন্টার কর্মীদের বেতন বেশি হলেও বা তাদের কাজের চোখ ধাঁধাঁনো পরিবেশ সত্ত্বেও এই ক্ষেত্রে কাজের নিরাপত্তা অত্যন্ত কম। এঁরা চুক্তিবদ্ধ ভাবে কাজ করেন; এদের কাজ প্রজেক্টভিত্তিক; এই ধরনের প্রজেক্টগুলি বিপিও বা বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে পাওয়া, নিজস্ব কোম্পানির প্রয়োজন ও চাহিদা অনুযায়ী সৃষ্ট কাজ নয় (যা দেশি কলসেন্টার-এর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য)। ফলে প্রজেক্ট এর কাজ সম্পন্ন হলে অনেক ক্ষেত্রেই কর্মহীন হয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে।
আন্তর্জাতিক উত্পাদন শৃঙ্খল বা গ্লোবাল প্রোডাকশন চেনগুলির নির্দিষ্ট সময়, কাজের চাহিদা এবং অর্থ ব্যয়ের কাঠামোর মধ্যে থেকেই কলসেন্টারগুলিকে কাজ করতে হয়। ফলে ন্যূনতম কর্মী নিয়োগ করে তাদের দিয়ে যথাসম্ভব কাজ করিয়ে নেওয়া এদের বৈশিষ্ট্য। কর্মীদের অত্যাধিক কাজের চাপ থাকে বলে অনেক সময়ে এদের ‘সাইবার কুলি’ বলা হয়।
কোম্পানির নিজস্ব চাহিদা ও নিয়ম মেনে, কাজের কোনও নির্দিষ্ট সময়ের তোয়াক্কা না করে এদের বহাল করা হয়। ফলে এরা সামাজিক ভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে, আবার অনেক সময়ে অসুস্থও হয়ে পড়ে। কর্মী অধিকার বলে কোনও কিছু এ ক্ষেত্রে নেই। কর্মী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার স্বাধীনতা তাদের নেই।
সুপরিকল্পিত ব্যবস্থাপক কৌশলের সাহায্যে কর্মীদের এমন ভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় যাতে তারা একক ব্যক্তি হিসেবে কাজ করে, সহকর্মীদের সঙ্গে বেশি মেলামেশার বা সামাজিকতা বজায় রখার অভ্যাস গড়ে না তোলে। মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনার নীতি এখানে পরিবর্তিত এবং সে নীতি অনুযায়ী কর্মীদের উপর পরোক্ষ ভাবে একটা নিয়ন্ত্রণের বেড়াজাল সব সময়ই অদৃশ্য ভাবে কাজ করে। মোটের ওপর, প্রথম পর্যায়ে (নব্বই এর দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে ২০০৫ পর্যন্ত) ভারতের কলসেন্টারগুলিতে দেখা যাচ্ছে যে দক্ষ কর্মী নিয়োগ করা হলে এই নতুন ধরনের কাজ গুলিতে নিরাপত্তার অভাব ছিল ভীষণ ভাবে।
এ পর্যায়ের প্রথম দিকে কর্মী নিয়োগের মান ছিল উন্নত এবং কাজও হত ভালো। কিন্তু দ্বিতীয় পর্যায়ে এর অবনতি ঘটে। আন্তর্জাতিক কলসেন্টারগুলির সঙ্গে তূলনা করলে দেখা যায় যে দেশের কলসেন্টারে কর্মীদের যোগ্যতা ও দক্ষতা সুপরিকল্পিত ভাবে কাজ করবার ক্ষমতা, কর্মক্ষেত্রে সহকর্মী ও অন্যদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা ইত্যাদির অবস্থা ও মান অত্যন্ত খারাপ। ঠিক তেমনি কাজের পরিমণ্ডলও খুব ভালো নয়; বেতন পর্যাপ্ত নয়; কাজের শর্ত কর্মীদের অনুকূল নয়; দক্ষতার চাহিতা বা কদর নেই এবং নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা বেশ কড়া।
দেশের কলসেন্টারগুলিতে পরিকাঠামোর অভাব, প্রযুক্তগত ভাবেও এগুলি আধুনিক নয়। অল্প পরিসরে সুপারভাইজারের কড়া নজরদারিতে সেই প্রাচীন কালের পরিমণ্ডলে কাজ করে দেশি কলসেন্টার কর্মীরা। অনেক বেশি সময় ধরে, প্রায় স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনার কঠোর নিয়ন্ত্রণে কাজ করাই এখানকার প্রচলিত ধারা। এক চরম শোষণ চলে কলসেন্টারগুলির কর্মীদের উপর। কারণ কোনও জোট বাঁধার নিয়ম নেই এদের। এদের সামাজিক নিরাপত্তাহীনতা ও শ্রমিকদের জন্য কল্যাণমূলক পদেক্ষেপের চূড়ান্ত অভাব এই বিশেষ ক্ষেত্রের একটি ত্রুটি।
আমরা উপরের আলোচনা থেকে যে সিদ্ধান্তে আসতে পারি তা হল, কলসেন্টারে নিয়োগ আপাতদৃষ্টিতে প্রথাগত ক্ষেত্রের মতো বলে মনে হলেও এ ক্ষেত্রে বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য এমন আছে যা একে অপ্রথাগত ক্ষেত্রের সমগোত্রীয় করে তোলে। কলসেন্টার-এর কর্মীদের কল্যাণসাধনের জন্য তাই উপযুক্ত নীতি ও আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ একান্ত দরকার। কলসেন্টার-এর মতো এ যুগের আরও অন্যান্য কাজ সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে জেনে সে সব কাজের পরিবেশ, কর্মীদের নিরাপত্তা বোধ ইত্যাদি সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে উপযুক্ত পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।
(লেখক ইন্দিরা গান্ধী মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘স্কুল অব ইন্টারডিসিপ্লিনারি অ্যান্ড ট্রান্সডিসিপ্লিনারি স্টাডিজ’-এ সহযোগী অধ্যাপক।
Email : babu@ignou.ac.in
সূত্র : যোজনা, অক্টোবর, ২০১৪।
সর্বশেষ সংশোধন করা : 6/22/2020