অসমীয়া   বাংলা   बोड़ो   डोगरी   ગુજરાતી   ಕನ್ನಡ   كأشُر   कोंकणी   संथाली   মনিপুরি   नेपाली   ଓରିୟା   ਪੰਜਾਬੀ   संस्कृत   தமிழ்  తెలుగు   ردو

অপ্রথাগত ক্ষেত্রের আর্থসামাজিক সমস্যা

অপ্রথাগত ক্ষেত্রের আর্থসামাজিক সমস্যা

রাষ্ট্রসংঘের আবেদন

বিগত শতাব্দীর সাতের দশকের শুরু থেকেই আফ্রিকা মহাদেশের বেশ কয়েকটি দেশে খাদ্য সংকট তীব্র আকার নেয়। আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংঘ কাজহীন মানুষগুলির খাদ্য ও কর্মসংস্থানের জন্য বিভিন্ন সমীক্ষা চালায়। ওই সময়ের প্রকাশিত রিপোর্ট থেকেই ‘ইনফর্মাল’ বা অপ্রথাগত ‘সেক্টর’ কথাটি বিভিন্ন দেশের আর্থিক ও সামাজিক উন্নয়ন পরিকল্পনার সংগঠনগুলিতে আলোচিত হতে থাকে।

উন্নয়নশীল দেশগুলিতে অসংগঠিত ক্ষেত্রের অস্তিত্ব নগরসভ্যতা শুরু হওয়ার আগে থেকেই চালু আছে। বিধিবহির্ভূত অপ্রথাগত ও অসংগঠিত এই সব ক্ষেত্র সাধারণ মানুষের প্রয়োজনীয় নিত্যদ্রব্য ও পরিষেবাগুলি সরবরাহ করলেও পরিকল্পিত অর্থনীতিতে জাতীয় আয় ব্যয়ের পরিকাঠামোর বাইরেই ছিল। শ্রম-সংখ্যাতত্ত্ববিদদের ১৫তম আন্তর্জাতিক সম্মেলন (১৯৯৩) এই বিষয়গুলিতে যুক্ত শ্রমিকদের বিধিসম্মত ভাবে আর্থিক ও সামাজিক পরিমণ্ডলের আওতায় আনার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে। রাষ্ট্রসংঘের আর্থিক ও সামাজিক সংস্থা প্রতিটি দেশের পরিস্থিতি অনুযায়ী জাতীয় আয় নির্ধারণের পদ্ধতি প্রকরণে এই ক্ষেত্রগুলিকে যুক্ত করার আবেদন জানায়।

আর্থিক ও সামাজিক উন্নয়নের গতিধারা এক এক দেশে এক এক রকম ভাবে অভিযোজিত হওয়ার জন্য ‘ইনফর্মাল সেক্টর’–এর সঠিক সংজ্ঞা ও এর অনুক্ষেত্রগুলি চিহ্নিত হয়নি। প্রকৃতি ও কার্যকারিতার দিক থেকে অধিকাংশ কাজেই অসংগঠিত (আনঅরগানাইজড) পরিভাষাটি ব্যবহৃত হয়।

জাতীয় নমুনা সমীক্ষার নির্দেশিকা

সামগ্রিক বিচারে অসংগঠিত ক্ষেত্রকে দুই ভাগে ভাগ করা যায় : বিধিসংগত ও বিধি-বহির্ভূত বা অপ্রথাগত। আমাদের দেশের নিরিখে বিধি-বহির্ভূত বা অপ্রথাগত শ্রমজীবী মানুষের সংখ্যাই বেশি, যেখানে উত্পাদন ব্যবস্থায় কায়িক শ্রমটাই মূলধন আকারে দেখা যায়। ফলত বার্ষিক শিল্প সমীক্ষাতে অনেক বিষয়কেই অসংগঠিত ক্ষেত্রে ধরা হয় না।

পরিস্থিতির বাস্তবতা বিচার করেই জাতীয় নমুনা সমীক্ষাতে একটি নির্দেশিকা হাজির করা হয়েছে। সরকারি ব্যবস্থাপনার বাইরে যাঁরা পারিবারিক সম্পর্ক, আত্মীয়তা ও বন্ধুত্বকে সাংগঠনিক ভিত্তি করে নিজস্ব কারবার চালান তাঁরাই অসংগঠিত ক্ষেত্র হিসাবে চিহ্নিত। তবে মনে রাখা দরকার সরকারি ও অসরকারি উভয় সাংগঠনিক কাঠামোতেই অপ্রথাগত ভাবে কাজ হয়ে আসছে। কারণ প্রচলিত আইনগুলির কার্যকারিতা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তিত হয় না। এ জন্য প্রতিটি ক্ষেত্রে শ্রমিক সংখ্যা ও অন্তর্ভূক্তির প্রকৃতিকে নিয়ে হিসাব করাই যুক্তিযুক্ত। কারণ দেশে কর্মক্ষম শ্রমিকের জোগানের তূলনায় চাহিদা কম থাকার জন্য কর্মসংস্থানের বিকল্প পথ হিসাবে অপ্রথাগত নিয়োগ প্রাধান্য পায়।

সংখ্যাগত দিক থেকে নয় জন বা তার কমসংখ্যক মানুষ যদি ব্যক্তি উদ্যোগে কোনও কারবার পরিচালিত করেন তবে সমবায় বা অন্যান্য কোম্পানি আইনে লিপিবদ্ধ করার ব্যবস্থা থাকলেও তা কঠিন ভাবে প্রয়োগ করার আইনানুগ বাধ্যবাধকতা থাকে না। কোনও কোনও ক্ষেত্রে স্থানীয় স্বশাসিত সংস্থাগুলির অনুমোদন নিয়েই গ্রহণযোগ্য বিষয়গুলি পরিচালিত হতে থাকে কেবলমাত্র বেঁচে থাকার তাগিদে।

৫০ কোটি কর্মী

সমীক্ষালব্ধ ফলগুলি থেকে এটা পরিষ্কার যে আমাদের দেশে অসংগঠিত ও অপ্রথাগত ক্ষেত্রগুলিতে মোট কর্মীসংখ্যা প্রায় ৫০ কোটি। যা প্রায় মোট কর্মীবাহিনীর ৯৫ শতাংশ। এর সঙ্গে প্রতি বছর প্রায় ১৩ লক্ষ নতুন কর্মী যুক্ত হচ্ছে। অর্থাৎ জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারের থেকেও কর্মীসংখ্যার বৃদ্ধির হার বেশি।

মূল কারণগুলিকে বিশ্লেষণ করলে আমরা দেখতে পাই ---

  • সংগঠিত ক্ষেত্রগুলি কমে আসা, যন্ত্রপাতির অধিক ব্যবহার ও কম সময়ের জন্য চুক্তি ও পরবর্তী সময়গুলিতে কোনও রকম চুক্তি ছাড়াই কাজ করানো;
  • চিরাচরিত পেশা ও বাসস্থান থেকে দূরে যেতে বাধ্য হওয়া;
  • প্রকৃত মজুরি কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাজারে বৃহৎ মালিকানার উন্নত প্রযুক্তির পণ্য সামগ্রীর উপস্থিতি;
  • ন্যূনতম মজুরি আইনের শিথিলতা; ইত্যাদি। দেশের অভ্যন্তরেও উত্পাদন ক্ষেত্রগুলির তারতম্য থাকার ফলে মজুরি আইন প্রণয়নে অনেক জটিলতার সৃষ্টি হয়। শ্রমশক্তির দক্ষতা বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক সুরক্ষার বিষয়টি জরুরি ভিত্তিতে ভাবার সময় এসেছে।

অসংগঠিত শ্রমিকদের চার ভাগ

শ্রম মন্ত্রক অসংগঠিত শ্রমিকদের মোটামুটি চারটি ভাগে ভাগ করেছে—

  • পেশা কেন্দ্রিক,
  • কাজের প্রকৃতি কেন্দ্রিক,
  • শ্রম ক্লান্ত কেন্দ্রিক
  • পরিষেবা কেন্দ্রিক।

পেশা কেন্দ্রিকঃ এখানে যেগুলি অন্তর্ভুক্ত আছে তা হল— ছোট ও প্রান্তিক কৃষক, ভূমিহীন খেতমজুর, ভাগচাষি, মত্স্যজীবী ও পশুপালন, বিড়ি শ্রমিক, কৃষি ও অন্যান্য শিল্প দ্রবাদির প্যাকেজিং, নির্মাণশিল্পে যুক্ত শ্রমিক, তাঁত ও চর্মশিল্পে যুক্ত শ্রমিক, ইট ও পাথরকুচি, কাঠ ও কাঠজাত দ্রব্য প্রস্তুতি ও ডাল তেল ইত্যাদি মিলে যুক্ত মানুষজন।

কাজের প্রকৃতি কেন্দ্রিকঃ কী শর্তে শ্রমিক যুক্ত আছে কাজের সঙ্গে, এটাই বিবেচ্য। সাধারণত স্থায়ী কৃষিশ্রমিক, স্থায়ী পারিবারিক শ্রমিক, চুক্তিবদ্ধ ও সাধারণ দিনমজুর, স্থানান্তরকামী দিনমজুর ইত্যাদি।

শ্রম-ক্লান্ত কেন্দ্রিকঃ এই অংশের কাজ প্রকৃত অর্থেই অপ্রথাগত এবং ক্লান্তিকর কায়িক শ্রমে যুক্ত। গাছের পাতা সংগ্রহ, জ্বালানির জন্য উপকরণ, ঝাড়ুদার, গাড়িতে দ্রব্যের ওঠানো ও নামানো ও অন্যান্য মুটে মজদুরের কাজ।

পরিষেবা কেন্দ্রিকঃ গৃহ ও গৃহ পরিষেবা, ফল-ফুল ও সবজি বিক্রেতা, সংবাদপত্র বিক্রেতা, রাস্তা ঘাটে খাবার ও অন্যান্য দ্রব্য বিক্রেতা ইত্যাদি বিষয়গুলির সঙ্গে যুক্ত শ্রমিক।

উপরি উক্ত প্রতিটি ক্ষেত্রেই শ্রম ও শ্রমের মূল্যের কোনও সম্পর্ক নেই। অধিকাংশ ক্ষেত্রে কাজের সময় নির্দিষ্ট না থাকার জন্য বিভিন্ন ধরনের সামাজিক সমস্যাও দেখা দেয়।

৫টি অনুক্ষেত্র

শ্রম মন্ত্রকের বিভাজনেক মাথায় রেখে বর্তমান পরিস্থিতি অনুযায়ী নিম্নলিখিত ৫টি অনুক্ষেত্রের বর্তমান অবস্থা ও আগামী পরিকল্পনা :

কৃষি ও কৃষি সহযোগী বিষয় :

কৃষি, মত্স্য, পশুপালন ও উদ্যানভিত্তিক ফসলের চাষ মূলত ব্যক্তি উদ্যোগেই পরিচালিত হয়ে আসছে। রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে শুধুমাত্র গবেষণা ও গবেষণাজাত ফলগুলি প্রাথমিক কার্যকারিতা দেখার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। চা, কফি ও অন্যান্য দু’একটি বাগিচা ফসল রপ্তানিযোগ্য হওয়ার জন্য স্বাধীনতা-পরবর্তী সময় থেকে (১৯৫১) এর সঙ্গে যুক্ত শ্রমিকরা বিধিবদ্ধ ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। কারণ উত্পাদনে ধারাবাহিকতা রাখা রপ্তানির জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। অন্যান্য বাগিচা ফসলগুলি কিন্তু ব্যক্তি উদ্যোগেই চলতে থাকে। অসংগঠিত ও অপ্রথাগত শ্রমিক সংখ্যার ৬০ – ৬৫ শতাংশই এই অনুক্ষেত্রগুলিতে যুক্ত। দেশ ও আঞ্চলিক ভিত্তিতে ন্যূনতম মজুরির কথা বলা হলেও চাহিদা ও প্রয়োজন অনুসারে এর তারতম্য ঘটে। জাতীয় গ্রামীণ কর্ম নিশ্চয়তা প্রকল্পে ১০০ দিনের কাজ চালু হওয়ায় কৃষি ও আনুষঙ্গিক ক্ষেত্রগুলিতে মজুরির হার বেড়েছে। তবে এই প্রকল্পে যে সম্পদ তৈরি হওয়ার কথা যা এই সমস্ত ক্ষেত্রগুলিকে পরোক্ষ সহযোগিতা করতে পারে তা আশানুরূপ নয়। কৃষি উন্নয়ন পরিকল্পনার সঙ্গে প্রাকৃতিক সম্পদগুলির কার্যকারিতাকে যুক্ত করার জন্য আরও বেশি পরিকল্পনা ও তদারকির দরকার আছে।

পেশাগত প্রচলিত কৃষি ও অকৃষি জাত নির্মাণ শিল্প :

ইউরোপে শিল্প বিপ্লবের ফল আমাদের দেশে পৌঁছনোর আগে কৃষি ও অন্যান্য ক্ষেত্রের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি দেশের গ্রামীণ মানুষজন নিজেরাই তৈরি করতেন। সময়ের নিরিখে তা পেশায় রূপান্তরিত হয়। বংশানুক্রমিক ভাবে চলতে থাকে। যন্ত্রের বিকাশে কাজ হারালেও ওই শিল্পগুলির পূর্ণ অবলুপ্তি এখনও ঘটেনি। মানুষের প্রয়োজন মিটিয়ে চলেছে। যদিও বর্তমান সময়ে তাঁরা তাঁদের পেশার মধ্যেই সীমাবদ্ধ না থেকে অবসর সময়গুলিতে কৃষি ও অন্যান্য কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন। লৌহজাত দ্রব্য, মাটি থেকে তৈরি দ্রব্যাদি, কাঠ ও বাঁশজাত দ্রব্য, সূতা থেকে কাপড় তৈরি, অন্যান্য ধাতব দ্রব্য থেকে গৃহস্থালির প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি, বাড়ি ঘর তৈরি ইত্যাদি বিষয়গুলিতে যুক্ত মানুষজন গ্রামীণ ও শহরতলিতে পেশা হিসাবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।

দ্রুত নগরায়ণের জন্য শহরাঞ্চলে বাড়ি ঘর তৈরি করতে ইট, বালি ও পাথরের জোগানের জন্য বড় অংশের শ্রমিক যুক্ত রয়েছেন। গৃহনির্মাণ শিল্পের সঙ্গে যাঁরা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে যুক্ত রয়েছেন তাঁদের মজুরি হার ও অন্যান্য সুযোগসুবিধার জন্য স্থানীয় স্বশাসিত সংস্থাগুলির প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। বর্তমানে অপ্রথাগত শ্রমিকসংখ্যার প্রায় ১০ ভাগই এই শিল্পগুলিতে যুক্ত।

স্থানীয় বাজার ও ছোট মাঝারি ও খুচরো বিক্রেতা :

উদার অর্থনীতির একটি প্রধান বিষয়ই হল বাজার ব্যবস্থার পূর্ণ সংস্কার। আমাদের দেশে পরিকাঠামোগত সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা আর্থিক মহলে দীর্ঘ দিন থেকেই আলোচিত হয়ে আসছে। কিন্তু সেখানে উদার অর্থনীতিকেন্দ্রিক চিন্তাভাবনা নতুন মাত্রা নিয়েছে। কৃষিজাত দ্রব্য, গ্রামীণ ও শহরতলির অকৃষিজাত নির্মিত দ্রব্য বাজারজাত করার জন্য ছোট মাঝারি ও খুচরো বিক্রেতারা যুক্ত আছেন। এর সঙ্গে যুক্ত মানুষগুলি একাধারে প্রস্তুতকারক ও বিক্রেতা। আয় খুব বেশি না হলেও রুটি-রুজির জন্য সাধারণ মানের আয় করতে পারেন। খুচরো বিক্রির বাজারগুলিতে বিদেশি পুঁজির অনুপ্রেবশ একটি বড় অংশের মানুষকে আশঙ্কিত করছে তাঁদের ভবিষ্যৎ নিয়ে। গোটা দেশে তাই বিতর্কও তৈরি হচ্ছে। পদ্ধতি প্রকরণ ঠিক না করে অধিক মূলধনের বৃহৎ পুঁজি বর্তমানে যুক্ত শ্রমিকের ১২-১৫ শতাংশের বেশি কাজে লাগাতে পারবেন না। প্রায় ৮০–৮৫ শতাংশ মানুষ তাঁদের প্রস্তুত সামগ্রীও আর তৈরি করতে পারেন না বাজারজাত না হওয়ার জন্য। বিশ্বায়নের প্রদর্শিত পথে চলতে গিয়ে পরিস্থিতি অনুযায়ী আইন প্রণয়নে অসুবিধা হচ্ছে।

খনি, রাস্তাঘাট ও পরিবহণ, জল ও বিদ্যুৎ, হোটেল ও অন্যান্য খাদ্য প্রস্তুতকারী সংস্থা :

এই বিষয়গুলিতে যুক্ত শ্রমিকদের আয় প্রকৃত অর্থেই অপ্রথাগত। কাজের ক্ষেত্রগুলিও ঝুঁকিপূর্ণ। প্রয়োজনমাফিক সুরক্ষাব্যবস্থা না থাকার জন্য অধিকাংশ সময়ে শ্রমিক-মৃত্যু ঘটে থাকে। আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংঘ এই বিষয়গুলিতে যুক্ত শ্রমিকের আয়, বাসস্থান, পেশাগত দক্ষতার দিকে নজর দিতে উন্নয়শীল দেশগুলিকে আবেদন জানিয়েছে। দেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন ধরনের শ্রম আইন অনেক সময়েই জটিলতা সৃষ্টি করে। কাজের সময় শ্রমের মূল্য ও সুসংহত আইন প্রণয়নের দরকার আছে।

গৃহ ও অন্যান্য নিত্য পরিষবা :

গৃহকর্ম ও আনুষঙ্গিক কাজের সঙ্গে যুক্ত শ্রমিকের সংখ্যা সার্বিক নিরূপণ এখনও হয়নি। অপ্রথাগত ক্ষেত্রের প্রায় এক চতুর্থাংশ মানুষ এই পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত হলেও সামগ্রিক ভাবে আর্থিক ও সামাজিক ব্যবস্থার যে পরিমণ্ডল তার বাইরেই অবস্থান করছে। শেষ আদমশুমারি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদনে এ বিষয় সম্পর্কে আমরা আরও বেশি অবহিত হতে পারব। এই ক্ষেত্রে যাঁরা পরিষেবা দিয়ে থাকেন তাঁদের একটি বড় অংশই ১৮ বছরের নীচে কিশোর কিশোরী ও মহিলারা। আয়, কাজের সময় ও নিরাপত্তা ইত্যাদির মতো বিষয় খুবই অস্বচ্ছ। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে বার বার আলোচিত হলেও পরিস্থিতির কোনও বদল নেই বললেই চলে। এমনকী বিধিবদ্ধ সংস্থাতেও অলিখিত ভাবে তাদের যুক্ত করার ধারা অব্যাহত আছে। দারিদ্র, পারিবারিক সমস্যা, জাত পাত সমস্যা ও শিক্ষার ধারাবাহিকতা বজায় না রাখতে পারার জন্যই শিশু শ্রমিকের সংখ্যা বাড়ছে। বিগত দুটি পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায়, এদের শিক্ষার জন্য স্কুল পরিচালিত হলেও পারিবারিক আয় খুবই কম থাকার জন্য তা ফলপ্রসূ হয়নি। বৃত্তিমূলক পরিকাঠামো গঠন করে আয়ের ব্যবস্থা ছাড়া এ সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়।

আগামী দিনের ভাবনার বিষয়

গবেষণালব্ধ ফল থেকে এটা পরিষ্কার যে, গ্রামাঞ্চলে অপ্রথাগত শ্রমিকসংখ্যা শহরের থেকেও বর্তমান সময়ে কমছে। কিন্তু শিল্পসংস্থাগুলিতে অপ্রথাগত শ্রমিকের হার বেড়ে যাচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে দারিদ্রের পরিমাণ বাড়ছে। বর্তমান আর্থিক ও সামাজিক পরিকাঠামোতে নিম্নলিখিত বিষয়গুলিকে পরিকল্পনায় আনা দরকার।

  • শ্রম আইনে কাজের সময়কে ৮ ঘণ্টায় সীমাবদ্ধ রাখা। এতে সামাজিক বিষয়গুলি শ্রমিকদের শিক্ষা ও দক্ষতা বাড়াতে সাহায্য করবে।
  • শহর ও গ্রামে কাজের ক্ষেত্রগুলি চিহ্নিত করে স্থানীয় স্বায়ত্তশাসনে নিবন্ধভুক্ত করা জরুরি। ‘শ্রমিক মঙ্গল কেন্দ্র’ প্রতিষ্টা করে কাজ ও চুক্তির বিবরণ, কাজের দক্ষতা ও নিয়োগকর্তা ও নিয়োজিত উভয় তরফের অভিজ্ঞতা তথ্য আকারে সংরক্ষণ করা দরকার। কাজ না পাওয়া পরিবারগুলিও যাতে কেন্দ্রে উপস্থিত থেকে স্থায়ী কিছু প্রকল্পে কাজ করেত পারেন তারও ব্যবস্থা থাকা দরকার।
  • গ্রামীণ ও শহরাঞ্চলের চিরাচরিত পেশায় যুক্ত শ্রমিকদের দক্ষতা বাড়ানোর জন্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রচলিত শিল্পকে সময়ানুয়ায়ী করা।
  • প্রতিটি অপ্রথাগত অনুক্ষেত্রকে জাতীয় উত্পাদন ও আয়ব্যবস্থায় অন্তর্ভূক্ত করা।
  • প্রচলিত শ্রম আইনগুলিকে এক সুসংবদ্ধ রূপ দেওয়া।
  • শিশু শ্রমিকদের বৃত্তিমূলক শিক্ষায় যুক্ত করে আয়ের ব্যবস্থা করা।
  • মহিলাদের জন্য কাজের সময় নির্ধারণ করা ও কর্মরত মহিলাদের শিশুদের দেখভালের ব্যবস্থা যাতে থাকে তা দেখা দরকার।

(লেখক বিভাগীয় প্রধান, কৃষি অর্থনীতি বিভাগ, বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববদ্যালয়, নদীয়া)।

সূত্র : যোজনা, অক্টোবর, ২০১৪।

সর্বশেষ সংশোধন করা : 1/28/2020



© C–DAC.All content appearing on the vikaspedia portal is through collaborative effort of vikaspedia and its partners.We encourage you to use and share the content in a respectful and fair manner. Please leave all source links intact and adhere to applicable copyright and intellectual property guidelines and laws.
English to Hindi Transliterate