এই নিগ্রহের যে দিকটা সব চেয়ে বেশি ক্ষুব্ধ করে, তা হল নিগ্রহকারীরা শিশুদের সঙ্গে ভদ্র, ভাল ও স্নেহপূর্ণ ব্যবহার করে। ফলে শিশুরা নিজেদেরই অপরাধী ভাবে এবং প্রত্যেককেই অবিশ্বাস করতে শুরু করে, এমনকী নিজেকেও।
এক জন শিশু পরিচিত এবং অপরিচিত ব্যক্তি দ্বারা অত্যাচারিত হতে পারে। এ ধরনের ঘটনার ৯০ শতাংশ শিশুদের পরিচিত ব্যক্তি দ্বারাই হয়। অত্যাচারী ব্যক্তি প্রথমে সম্পর্ক ও বিশ্বাসকে কাজে লাগিয়ে তার ক্ষমতাকে অপব্যবহার করে। এবং অনেক ক্ষেত্রেই খুব কাছের মানুষ এ ধরনের কাজ করে -- যেমন বাবা, ভাই, সম্পর্কিত ভাই, কাকা, মামা, প্রতিবেশী। যখন নিগ্রহকারী পরিবারেরই লোক হয় তখন তাক বলে অজাচার। যে দিন থেকে সমাজ গঠিত হয়েছে, সে দিন থেকেই সমাজে যৌন নিপীড়ন রয়েছে। যৌনব্যবসার জন্য মেয়েদের বিক্রি করা, দেবদাসী ও যোগিনী প্রথার মতো ধর্মীয় বা সাংস্কৃতিক প্রথা যেমন এর উদাহরণ। যদিও দীর্ঘ সময় ধরে এ সব ব্যাপারে সচেতনতা বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। প্রাপ্তবয়স্ক মহিলাদের মধ্যে সমীক্ষা করে দেখা গেছে শতকরা ৭৫ জন মহিলা শৈশব অবস্থায় যৌন নিপীড়নের শিকার। এদের মধ্যে অধিকাংশ মহিলাই পরিচিত বা আত্মীয়দের দ্বারা এই নিপীড়নের শিকার। সংবাদমাধ্যমের বাড়াবাড়ির প্রচলিত ধারণাটি অস্বস্তিকর সত্যকে এড়ানোর জন্যই তৈরি।
যে পুরুষেরা শিশুদের প্রতি এ ধরনের যৌন নিপীড়ন চালায় তারা তাদের স্ত্রী অথবা সঙ্গিনীদের সঙ্গে করার পাশাপাশি এটা করে, তাদের দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হয়ে নয়। অনেকে যেমন মনে করেন, তারা মানসিক ভাবে অসুস্থ, মোটেই তা নয়। এরা খুবই স্বাভাবিক এবং বিচিত্র প্রকৃতির। শিশুদের যৌন নিপীড়নকে তারা যুক্তি দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করে, এটা কোনও অন্যায় নয়।
কিছু কিছু পুরুষ মানুষ আবার লোকজনের সামনেই এই ধরনের ব্যবহার করে থাকে। শিশুরা এত ভয় পেয়ে যায় যে তারা কিছুতেই তাদের এই লাঞ্ছনার কথা বলে না। নিপীড়িতর বয়স কত এ কথা কেউ ভাবে না। অত্যাচারী সব সময় ক্ষমতাবান হয়, অত্যাচারীর ধূর্ততার কোনও থই পায় না নিপীড়িত। যে শিশুটির উপর অত্যাচার করা হয় তার কোনও ক্ষমতাই থাকে না তা প্রতিরোধ করার, বিশেষত যদি সেই অন্যায়কারী পরিবারের লোক হয়। এমনকী মায়েরাও ঘটনা জেনে প্রতিবাদ করতে পারেন না কারণ তাঁরা ক্ষমতাহীন। পরিবার ভেঙে যাওয়ার ভয়ে অথবা তাঁর কথা কেউ বিশ্বাস করবে না, এই ভেবে তাঁরা চুপ করে থাকেন। পরিবারের বড়রা ও বাবা-মা, এমনকী সমাজও পুরো ব্যাপারটাকেই উপেক্ষা করে অথবা অস্বস্তি এড়াতে পুরো ব্যাপারটাই অস্বীকার করে।
বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই শিশুদের উপর এই অত্যাচারের ঘটনা কিন্ত্ত সত্য বলে প্রমাণিত হয়। সব রকমের শিশু নিপীড়নকে অস্বীকার করা এবং শিশুদের কল্পনা বলে মনে করে সমস্যা থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখা, আজ আমাদেরই কটাক্ষ করছে।
শিশুরা ভীষণ সরল এবং অনুভুতিপ্রবণ। শিশুদের যৌনতা সম্পর্কে কোনও ধারণাই থাকে না এবং এ ব্যাপারে তাদের কোনও ভাবাবেগও থাকে না। এমনকী যদি কেউ এ ব্যাপারে ওয়াকিবহাল হয় তবুও তাকে দোষী সাব্যস্ত করা যায় না। এক জন যৌনকর্মীও ধর্ষিতা হতে পারেন সে ক্ষেত্রে আইন তার হয়েই কথা বলবে। এ ধরনের অত্যাচারিত শিশুদের দোষারোপ করে আমরা অপরাধীকে প্রশ্রয় দিই।
‘অনুমতি’ ছিল কি ছিল না, এই প্রশ্ন শিশুদের ক্ষেত্রে ওঠেই না। আইনানুসারে, ১৬ বছরের নীচে মেয়ের সঙ্গে যৌন সঙ্গম করা মানে তাকে ধর্ষণ করা।
যখন শিশুরা নিগ্রহকারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনে তখন তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়, তাদের আত্মবিশ্বাসের উপর অনাস্থা প্রকাশ করা হয়। এই জন্য শিশুদের মনে অন্যায়বোধ জাগে এবং তারা নিজেদের দায়ী মনে করে। তারা ভাবে কোনও ভাবে হয়তো নিগ্রহকারীর প্রতি তাঁর আচরণেই এমন কাণ্ড ঘটেছে।
সূত্র: সেমান্টিক্স অর সাবস্ট্যান্স ? সাবগ্রুপ আগেন্সট দ্য সেক্সচুয়াল এক্সপ্লয়টেশন অফ চিলড্রেন, এনজিও গ্রুপ ফর দ্য কনভেনশন অন দ্য রাইটস অফ দ্য চাইল্ড, জানুয়ারি, ২০০৫।
সর্বশেষ সংশোধন করা : 4/25/2020
কেন শিশুদের দিকে বিশেষ নজর দেওয়া দরকার জানানো হয়েছ...