অরুণা সামন্ত, রেখা সামন্ত, মীনারা খাতুনরা সকলেই গৃহবধূ। এত দিন হেঁশেল আর ঘর সামলানো ছাড়া দ্বিতীয় কোনও কাজও ছিল না তাঁদের। সেই পরিচয়ের বাইরে ভিন্ন পরিচয়ও তাই গড়ে ওঠেনি। কিন্তু, পরিস্থিতি বদলে গিয়েছে গত বছর থেকে। ঘরের কাজ সামলেই এখন তাঁরা নেমেছেন এলাকার জন জীববৈচিত্র্য নথি তৈরির কাজে। আর তা নিয়ে স্থানীয় মানুষকে সচেতন করার কাজেও এখন নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাঁরাই। জীববৈচিত্র্য আইন অনুযায়ী ব্লক এবং পুরসভা স্তরে ‘বায়ো ডাইভার্সিটি ম্যানেজমেন্ট’ তৈরির কাজ চালাচ্ছে রাজ্য সরকার। সেই কর্মসূচির অঙ্গ হিসেবে কোলাঘাট ব্লকে যে ‘বায়ো ডাইভার্সিটি ম্যানেজমেন্ট’ কমিটি তৈরি হয়েছে, অরুণা সামন্ত, লক্ষ্মী দলুই, অপর্ণা পালরা তারই সদস্য। শুধু তাই নয়, এটিই রাজ্যের একমাত্র ‘বায়ো ডাইভার্সিটি ম্যানেজমেন্ট’ কমিটি, যা পুরোপুরি ভাবে মহিলা পরিচালিত। কোলাঘাটের গোপালনগর অঞ্চল।
এলাকা দিয়ে বয়ে গিয়েছে রূপনারায়ণ নদী। সেই নদীর চর আর তাকে ঘিরে এলাকাগুলিতেও রয়েছে জীববৈচিত্র্যের এক বড় সম্ভার। যা রাজ্যের অন্যান্য প্রান্তের থেকে খানিকটা পৃথকও বটে। অন্যান্য চাষের সঙ্গে এই এলাকায় গাঁদা, রজনীগন্ধা, জবা, লাল রঙ্গন, জারবেরার মতো ফুলের চাষও হয় যথেষ্ট। রূপনারায়ণেরও রয়েছে জীববৈচিত্র্যের বড় ভাণ্ডার। সেই গোপালনগরের মারবেড়িয়া, কিসমত গোপালনগর, গোপালনগর, রাইনের মতো মৌজাগুলিতেই এখন সেই জন জীববৈচিত্র্য নথি তৈরির কাজ চালাচ্ছেন অরুণা সামন্তরা। পাঁচ জনের ওই কমিটির চেয়ারপার্সন অরুণাই। কেন এগিয়ে এলেন এ কাজে? অরুণা সামন্ত জানালেন, এত দিন তো আমাদের একমাত্র পরিচয় ছিল গৃহবধূ। কিন্তু, যখন দেখলাম এলাকায় কোন কোন প্রাণী, উদ্ভিদ রয়েছে, তার উপর ভিত্তি করে কেমন ভাবে চলছে আমাদের জীবন এবং তা জানারও সুযোগ রয়েছে, তখন তাতে আগ্রহ পেলাম। এখন একই সঙ্গে আমরা নতুন নতুন জিনিস জানার সুযোগ পাচ্ছি, আর তা নিয়ে স্থানীয় মানুষকে জানাতেও পারছি। বলা চলে, এত দিন এখানে থেকেও নিজের এলাকার প্রকৃতি, পরিবেশ সম্পর্কে এমন ধারণা আমাদেরও ছিল না।
রাজ্যের একমাত্র মহিলা পরিচালিত ‘বায়ো ডাইভার্সিটি ম্যানেজমেন্ট’ কমিটির সাফল্য নিয়ে দারুণ আশাবাদী পশ্চিমবঙ্গ জীববৈচিত্র্য পর্ষদও। পর্ষদের বিজ্ঞানী ডঃ অনির্বাণ রায় জানান, সম্প্রতি এ নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে ওই কমিটির উদ্যোগেই একটি সচেতনতা শিবিরের আয়োজন করা হয়েছিল। তাতে অংশ নিয়েছিলেন স্থানীয় চারটি স্কুলের ছাত্রছাত্রী এবং শিক্ষক-শিক্ষিকারা। এ ছাড়াও স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলা, আশা সদস্যরাও অংশ নিয়েছিলেন তাতে। ওই শিবিরে অংশ নিয়েছিলেন রচনা রায়চৌধুরীর মতো অনেক ছাত্রছাত্রী। ভবিষ্যতে ওই কাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে যুক্ত হতে চায় রচনার মতো স্থানীয় ছাত্রছাত্রীদের অনেকেই। কোলাঘাটের কাছেই পটাশপুর-১ ব্লক৷ ওই ব্লকের ‘বায়ো ডাইভার্সিটি ম্যানেজমেন্ট’ কমিটিটি নিজের হাতে গড়েছেন সোমনাথ দাশঅধিকারী। কোলাঘাট-সহ স্থানীয় মোট পাঁচটি ‘বায়ো ডাইভার্সিটি ম্যানেজমেন্ট’ কমিটি তৈরিতে উদ্যোগ রয়েছে তাঁরও। সোমনাথবাবু জানান, ‘গোপালনগর অঞ্চলের জন জীববৈচিত্র্য নথি তৈরির জন্য সমীক্ষার কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। খুব শীঘ্রই সেই কাজ শেষ হয়ে যাবে। সম্পূর্ণ মহিলা পরিচালিত ওই কমিটি প্রেরণা জোগাচ্ছে আশপাশের গ্রামের মহিলাদেরও। বিশেষ করে স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে এ নিয়ে দারুণ আগ্রহ দেখা যাচ্ছে।’
সূত্র: কৌশিক সরকার, এই সময়, ২৩ মার্চ, ২০১৫,
সর্বশেষ সংশোধন করা : 4/29/2020