এখন আমরা পরিচিত হবো হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার শব্দ দু’টির সঙ্গে। এগুলিও কম্পিউটারের অংশ। কম্পিউটার চালানোর জন্য দরকার হয় হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যারের। কম্পিউটার নামক যন্ত্রটিকে পরিচালনা করার সঙ্গে এই দু’টি শব্দই ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে আছে।
এখন আমরা যেগুলি সম্পর্কে জানব, সেগুলি হল —
একটি কম্পিউটার ব্যবস্থার বিভিন্ন অংশ বা যন্ত্রাংশকে হার্ডওয়্যার বলে। যেমন, সিস্টেম ইউনিট বা পরিচালনা শাখা (যা কম্পিউটারের ভিতর থাকে), মনিটর, যাতে থাকে কম্পিউটারের পর্দা, কি বোর্ড, মাউস, প্রিন্টার, স্ক্যানার, স্পিকার এবং জয় স্টিক।
বিভিন্ন প্রোগ্রাম বা পদ্ধতি বা প্রণালীকে কাজে লাগিয়ে কম্পিউটারের তথ্যকে ব্যবহার করা হয়। সফটওয়্যার বলতে এই সব প্রোগ্রামকেই বোঝায়। বস্তুত, একেকটি সফটওয়্যার প্রোগ্রাম কম্পিউটারকে নির্দেশ দেয়, কী করতে হবে। ধরা যাক, একটি কম্পিউটারের বাংলা হরফের সফটওয়্যার প্রোগ্রামকে কাজে লাগানো হলো। সে ক্ষেত্রে কি বোর্ডের মাধ্যমে যে তথ্যই (সংখ্যায় বা শব্দে) কম্পিউটারের স্মৃতিকক্ষে পাঠানোর চেষ্টা হবে, তা জমা পড়বে বাংলা হরফে, যা দেখা যাবে কম্পিউটারের পর্দায়। অর্থাৎ এ ক্ষেত্রে ঐ সফটওয়্যার প্রোগ্রামটি কম্পিউটারকে বাংলা হরফে তথ্য সংরক্ষণের নির্দেশ দিয়েছে। সফটওয়্যার বিভিন্ন ধরনের হতে পারে।
কোনও নির্দিষ্ট কাজের জন্য অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যারকে ব্যবহার করা হয়। প্রকৃত পক্ষে এই ধরনের সফটওয়্যার কোনও কম্পিউটারকে একটি কাজের যন্ত্রে পরিণত করে। যেমন ওয়ার্ড, এক্সেল, অ্যাক্সেস ইত্যাদি।
কম্পিউটার ব্যবস্থা ও তার বিভিন্ন উপকরণকে অর্থাৎ ডিস্ক ড্রাইভ, মাইক্রো প্রসেসর, স্মৃতি বা মেমোরিকে নিয়ন্ত্রণের জন্য এয সফটওয়্যার ব্যবহার করা হয়, তাকে সিস্টেম সফটওয়্যার বলে। যেমন, যে কোনও অপারেটিং সিস্টেম (ডস, উইন্ডোজ এক্সপি, উইন্ডোজ 7, লিনাক্স)।
অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার নকশা বা ডিজাইন তৈরি করার জন্য ইউটিলিটিসকে ব্যবহার করা হয়। এটি সিস্টেম সফটওয়্যারেরও অংশ হতে পারে। কিছু সাধারণ কাজ, যেমন প্রতিলিপি তৈরি বা কোনও তথ্য সংবলিত ফাইল মুছে ফেলার কাজ দ্রুত ও সহজে করে ফেলতে ব্যবহারকারীকে সাহায্য করে ইউটিলিটিস।
তথ্য, বক্তব্য ও ধারণার আদানপ্রদানের জন্য যত রকমের পাঠযোগ্য সঙ্কেত এবং অভিব্যক্তি ব্যবহার করা হয়, সেগুলি সবই ল্যাঙ্গুয়েজের অন্তর্ভুক্ত। ল্যাঙ্গুয়েজ দু’ ধরনের। লো লেভেল ল্যাঙ্গুয়েজ বা নিম্ন পর্যায়ের ভাষা (এল এল এল) এবং হাই লেভেল ল্যাঙ্গুয়েজ বা উচ্চ পর্যায়ের ভাষা (এইচ এল এল)।
এই ল্যাঙ্গুয়েজ কম্পিউটারের হার্ডওয়্যারের সঙ্গে সম্পর্ক যুক্ত। এর মধ্যে রয়েছে যুগল সংখ্যা ০ (শূন্য) ও ১ (এক) এবং কিছু বিশেষ প্রতীক।
এই ল্যাঙ্গুয়েজটি ইংরাজি ভাষার মতো। তাই এটি তুলনামূলক ভাবে সহজবোধ্য। যেমন, বেসিক, কোবল, সি, প্যাসকেল ইত্যাদি।
কেউ যখন কম্পিউটার ব্যবহার করেন, তখন তিনি কম্পিউটারে যে সব তথ্য ঢোকাতে চান বা কম্পিউটারকে যে সব নির্দেশ দেন, কম্পিউটার তা সরাসরি গ্রহণ করে না। বলা ভাল, কম্পিউটার তা সরাসরি গ্রহণ করতে পারে না। কারণ সেগুলি কী, সরাসরি তা বুঝতে পারে না কম্পিউটার।
সেই জন্য ঐ সব তথ্য ও নির্দেশকে কম্পিউটার ব্যবস্থার মধ্যেই বিশেষ পদ্ধতিতে এমন ভাষা অর্থাৎ যান্ত্রিক ভাষার অনুবাদ করে নিতে বা বদলে নিতে হয়, যাতে কম্পিউটার তা অনুধান করতে পারে এবং প্রয়োজনীয় ভূমিকা পালন করতে পারে। কম্পিউটারের মধ্যেই এই অনুধাবনের ব্যবস্থা থাকে।
অর্থাৎ, কোনও ব্যবহারকারী যখন কম্পিউটারে কোনও তথ্য ঢোকাতে চান বা কম্পিউটারকে কোনও নির্দেশ দিতে চান, তখন কম্পিউটার তার নিজস্ব পদ্ধতির সাহায্যে সেগুলিকে নিজের বোঝার মতো করে নিজ নিজেই বদলে নেয় বা সেগুলিকে নিজস্ব যান্ত্রিক ভাষায় অনুবাদ করে নেয় এবং তার পরে সেই অনুযায়ী তথ্য ও নির্দেশকে ব্যবহার করে কম্পিউটার ফলাফল জানায়। কম্পিউটারের এই ব্যবস্থাকে বলে ট্রান্সলেটর। এটি তিন রকমের হতে পারে।
এটি ইনপুট বা উপকরণ হিসাবে সম্পূর্ণ প্রোগ্রাম কোড বা সঙ্কেত গ্রহণ করে অবং সেগুলিকে যান্ত্রিক সঙ্কেতে পরিণত করে।
প্রতিটি লাইন ধরে ধরে প্রোগ্রাম কোড বা সঙ্কেত গ্রহণ করে ও সেগুলিকে যান্ত্রিক সঙ্কেতে পরিণত করে ইন্টারপ্রেটর। এই যান্ত্রিক সঙ্কেত অনুযায়ী কাজ হবার পর আবার পরবর্তী লাইনকে যান্ত্রিক সঙ্কেতে রূপান্তর করা হয়। এই প্রক্রিয়া প্রোগ্রামের শেষ অবধি চলতে থাকে। কমপাইলার ইন্টারপ্রেটরের থেকে বেশি দক্ষতার সঙ্গে কাজ করে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই। তবে কিছু ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত কারণে কম্পাইলারের বদলে ইন্টারপ্রেটর ব্যবহার হয়। যেমন, জাভা।
এটি প্রোগ্রামকে অ্যাসেম্বলি ল্যাঙ্গুয়েজে ইনপুট বা উপকরণ হিসাবে গ্রহণ করে এবং তাকে যান্ত্রিক সঙ্কেতে পরিণত করে।
পরিচালন ব্যবস্থা বা অপারেটিং সিস্টেম হলো মধ্যবর্তী সফটওয়্যার, যা ব্যবহারকারী এবং কম্পিউটারের মধ্যে অনুবাদকের বা দোভাষীর ভূমিকা পালন করে। অর্থাৎ এই সিস্টেমের সাহায্যেই ব্যবহারকারী ও কম্পিউটারের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপিত হয়। কম্পিউটারের সমস্ত উপকরণ ও কাজকর্মকে পরিচালনা করতে এটিকে ব্যবহার করা হয়। প্রচলিত অপারেটিং সিস্টেমের মধ্যে রয়েছে উইন্ডোজ, লিনাক্স, এম এস ডস, ইউনিক্স। অপারেটিং সিস্টেম আরও বহু কাজ করে থাকে। উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, কোনও কাজ করার সময় কম্পিউটারের বিভিন্ন যান্ত্রিক ব্যবস্থা যেমন স্মৃতি, প্রসেসর ইত্যাদির মধ্যে সমন্বয় সাধন করে।
একটি কম্পিউটারকে চালু করা হলে তার সি পি ইউ বা সেন্ট্রাল প্রসেসিং ইউনিট প্রথমেই যাচাই করে নেয় যে, কি বোর্ড, মাউস, মনিটর ইত্যাদি যন্ত্রাংশ তার সঙ্গে সঠিক ভাবে যুক্ত আছে কি না। এই যাচাই করার প্রক্রিয়াকে বলে পোস্ট (POST), যার পুরে কথা পাওয়ার অন সেল্ফ টেস্ট (Power of self test)।
যদি এই যন্ত্রাংশগুলি সঠিক ভাবে যুক্ত থাকে, তা হলে সি পি ইউ কম্পিউটারের অপারেটিং সিস্টেমকে হার্ডডিস্ক থেকে স্বয়ংক্রিয় ভাবে র্যামের মধ্যে তুলে নেয় এবং কম্পিউটারকে ব্যবহারকারীর নির্দেশ গ্রহণের জন্য প্রস্তুত করে। এই সামগ্রিক প্রক্রিয়াকেই বলা হয় বুটিং (Booting)। অর্থাৎ বুটিং একটি স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়া, যা সম্পূর্ণ হওয়ার পরেই কম্পিউটারকে ব্যবহার করা হয়।
সূত্র : কম্পিউটার প্রশিক্ষণ, আই আই আই এম
সর্বশেষ সংশোধন করা : 6/22/2020