ধারণাগত পার্থক্যগুলি যে শিক্ষকদের দায়িত্ব ও কর্তব্যে অবহেলার প্রশ্নে কী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে তা উপরের আলোচনাগুলি থেকে পরিষ্কার। প্রাথমিক শিক্ষার উদ্দেশ্যকে বৃহৎ প্রেক্ষাপটে দেখতে না পারাও শিক্ষকদের উৎসাহের ঘাটতির একটা উৎস। কিন্তু আশার কথা এই আমরা এমন শিক্ষকও দেখতে পাচ্ছি যাঁরা শিশুদের উচ্চশিক্ষায় অংশগ্রহণ ও প্রতিষ্ঠার বাইরেও, প্রাথমিক শিক্ষার সার্থকতা খুঁজে পেয়েছেন। মালদা জেলার শিক্ষক অসীম কুমার দাস লিখেছেন, ‘শিক্ষকদের বিদ্যালয়মুখী করতে পেরে গর্বিত। শিক্ষার নির্দিষ্ট মানে হয়ত পৌঁছতে পারিনি ঠিকই। কিন্তু নিরক্ষরতা কাটিয়ে আনতে পেরেছি।’ এই যে আত্মবিশ্বাস এটা শিক্ষকদের লেখাগুলো থেকে একটা বড় প্রাপ্তি, যা অন্যদের অনুপ্রাণিত করতে পারে। আমরা ইতিমধ্যেই বহু শিক্ষকের বিভিন্ন ইতিবাচক ভূমিকার কথা উল্লেখ করেছি যা আদর্শবান, কর্তব্যপরায়ণ শিক্ষকেরই দৃষ্টান্ত তুলে ধরে। আমরা প্রসেনজিৎ বিশ্বাসের মতো শিক্ষককে দেখেছি যাঁরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার আগ্রহে অর্থকরী স্বার্থকে গৌণ দেখেছেন। এ রকম আরও অনেক শিক্ষকই আমরা খুঁজে পাই শিক্ষকদের অভিজ্ঞতার লিখনগুলি থেকে যাঁরা নিজেদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে যথেষ্ট সজাগ। সহকর্মীর কর্তব্যের গাফিলতিতে প্রভাবিত হওয়ার উদাহরণ যেমন আমরা দেখেছি, আবার তাতে প্রভাবিত না হয়ে পরিস্থিতি বদলের প্রচেষ্টা নিয়েছেন এমন উদাহরণ পেয়েছি। এরকম একটি উদাহরণ আমরা আপাতত তুলে ধরছি। পুরুলিয়া জেলার এক শিক্ষক লিখেছেন :
‘আমি প্রথম যে দিন বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসাবে যোগদান করলাম ... জানতে পারলাম যে বিদ্যালয়টি নিয়মিত খোলা হয় না। মাস্টারমশাই নিজের ব্যক্তিগত কাজ নিয়ে বেশি ব্যস্ত থাকেন, বিদ্যালয়ের দিকে নজর দেন না। ... আমরা নতুন দু’জন মাস্টারমশাই ঠিক করলাম প্রথমত স্কুলটিকে নিয়মিত সঠিক সময়ে খুলতে হবে। অভিভাবকদের সাথে যোগাযোগ করে গ্রামের ছেলেমেয়েদের যাতে বিদ্যালয়ে আনা যায় তার ব্যবস্থা করতে হবে। আমরা তাই করলাম এবং দেখলাম আমাদের উদ্দেশ্য সফল।’
সূত্র : কলমচারি, প্রতীচী ইনস্টিটিউট, ফেব্রুয়ারি ২০১২
সর্বশেষ সংশোধন করা : 6/26/2019