উচ্চশিক্ষা ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার পেশার দ্বন্দ্ব কোনও কোনও উচ্চশিক্ষিত শিক্ষকের লেখাতেও ধরা পড়ে। তবে শিক্ষকদের লেখা থেকে বোঝা যায় যে, দায়িত্ব ও কর্তব্যের সমস্যা বেশি শিক্ষিত, কম শিক্ষিত, গ্রামের, শহরের ইত্যাদি ভেদাভেদ মানে না। এই রোগ সব ধরনের শিক্ষকের মধ্যেই আছে। এবং তা যে এক শিক্ষক থেকে আর এক শিক্ষকের মধ্যে সংক্রামিত হতে পারে তাও জানতে পারি শিক্ষকের অভিজ্ঞতা থেকেই। পুরুলিয়া জেলার এক শিক্ষকের আত্মসমালোচনা --- তিনি লিখেছেন, ‘১৯৮৮ সালের ৮ অক্টোবর আমি প্রাথমিক শিক্ষকতার দায়িত্ব গ্রহণ করি। ১৯৯০-এর কাছাকাছি স্থানীয় এক আদিবাসী স্কুলে বদলি হই আমি। সেখানে প্রধান শিক্ষকের অভ্যাস ছিল দেরিতে আসা এবং বেলা ২টোর মধ্যে ছুটি দেওয়া। আমার প্রথমে খারাপ লাগত, পরে আমিও মেনে নিলাম। উচ্চতর শিক্ষার জন্য পড়াশোনার করতে হবে। তাই স্কুল পালিয়ে আসা চলতে থাকল।’
এই আত্মসমালোচনা থেকে বুঝতে পারা যায় যে শিক্ষকদের একাংশের দায়িত্ব ও কর্তব্যে অবহেলার বিষয়টি শুধুমাত্র তাঁদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ না থেকে, কী ভাবে ধীরে ধীরে আরও অনেকের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। এবং এই মনোভাব প্রাথমিক শিক্ষার অগ্রগতির পথে এক বিরাট বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। প্রতীচী ট্রাস্টের সমীক্ষা অনুযায়ী শিক্ষকদের বিদ্যালয়ে অনুপস্থিতির সমস্যা ২০০১–০২-এর তুলনায় ২০০৮–০৯-এ কিছুটা কমেছিল। শিক্ষকদের লেখা থেকে বুঝতে পারা যায় যে, সমস্যাটি কিন্তু এখনও বেশির ভাগ শিক্ষককে গ্রাস করেনি। কিন্তু সমস্যাটি যে নির্মূল হয়নি, সেটাও শিক্ষকদের লেখা থেকে বেরিয়ে আসছে। কিন্তু, বড় ব্যাপার যেটা সেটা হল এই যে, শিক্ষকরা নিজেরাই এই সমালোচনাগুলি তুলে ধরেছেন। এর অর্থ হল, যে সব সমস্যা আছে সেগুলো সম্পর্কে তাঁরা সচেতন এবং সেগুলো দূর করার লড়াইটিও তাঁরা চালিয়ে যাচ্ছেন। আশা, এই লড়াইয়ে নিশ্চয় একদিন সাফল্য মিলবে।
সূত্র : কলমচারি, প্রতীচী ইনস্টিটিউট, ফেব্রুয়ারি ২০১২
সর্বশেষ সংশোধন করা : 9/7/2019