পশ্চিমবাংলায় শিক্ষকতার পেশার প্রতি আগ্রহ শুধু আগের প্রজন্মের নয়, বর্তমান প্রজন্মের মধ্যেও এই আগ্রহ দেখা যায়। পশ্চিমবঙ্গে প্রাথমিক শিক্ষকদের ইতিহাস আসলে এটাই। শিক্ষাদানের প্রতি এক প্রবল আগ্রহই এখানে প্রাথমিক শিক্ষকদের বহু প্রতিকূলতার মধ্যেও এগিয়ে চলার প্রেরণা জুগিয়েছে। আমরা শিক্ষকদের অভিজ্ঞতার অনেক উদাহরণ দিয়েছি যা শিক্ষকদের এই আদর্শগত প্রেরণা ছাড়া সম্ভব ছিল না।
সময় ও পরিস্থিতির পরিবর্তনে সমগ্র শিক্ষক সমাজকে এই মর্যাদার আসনে আর রাখা যাচ্ছে না। কিছু শিক্ষকের অভিমত এমনটাই। মুর্শিদাবাদ জেলার শিক্ষকের মতে ‘মানুষ যে কাজ করে সেই কাজের প্রতি যদি তার ভালোবাসা এবং দায়বদ্ধতা না থাকে তা হলে সেই কাজ কোনও দিনই ভালো ভাবে সম্পন্ন হতে পারে না। প্রাথমিক শিক্ষকদের মধ্যে অনেকেরই এই জীবিকার প্রতি একটা গা-ছাড়া মনোভাব কাজ করে। তারা হয়ত এই কাজের জন্য নিজেদের মন-প্রাণকে উজাড় করে দিতে পারে না।’ এই ধরনের মতামত আরও অনেক শিক্ষকের লেখা থেকেই বেরিয়ে এসেছে। আলিপুরদুয়ার কর্মশালায় অংশগ্রহণকারী এক শিক্ষক লিখেছেন, ‘আমার শিক্ষকতা জীবনে নানাবিধ সমস্যার মুখোমুখি হয়েছি... কিন্তু আমি যে সমস্যাটি অধিক গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করি তা হল, আমরা কিছু সংখ্যক শিক্ষক, শিক্ষার প্রতি, শিক্ষার্থীর প্রতি দায়বদ্ধতার প্রশ্নে উদাসীন। এর ফলে বিদ্যালয়ে শৃঙ্খলাবোধের অভাব দেখা যাচ্ছে, সঠিক পঠনপাঠনের জন্য কী কৌশল অবলম্বন করা উচিত সে ব্যাপারে চিন্তাভাবনার অভাবও দেখা যাচ্ছে। যার ফলে সৃষ্টি হয়েছে শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক শিক্ষাপদ্ধতি মেনে না চলার অভাব।’ বারুইপুর কর্মশালায় উপস্থিত এক শিক্ষক লিখেছেন, বর্তমান সমাজব্যবস্থায় শিক্ষকতা এখন চাকরি। এটা এখন আর কোনও মহৎ পেশা নয়। তাই যে আন্তরিকতা নিজের সন্তানকে সমাজের এক জন করে তোলার জন্য থাকে, নিজের বিদ্যালয়ের শিশুদের জন্য সেই আন্তরিকতা থাকে না, কোথাও যেন একটা ফাঁক থেকে যায়।’ প্রতিটি কর্মশালাতেই কিছু না কিছু শিক্ষক শিক্ষকদের একাংশের দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন (যদিও শিশু শিক্ষা কেন্দ্রের সহায়িকাদের লেখাতে এমন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।)
সূত্র : কলমচারি, প্রতীচী ইনস্টিটিউট, ফেব্রুয়ারি ২০১২
সর্বশেষ সংশোধন করা : 7/1/2020