বিদ্যালয়ে বিদ্যাচর্চার পাশাপাশি এবং শরীরচর্চা একটি অন্যতম অঙ্গ। শিশুদের মানসিক এবং শারীরিক বিকাশের জন্য বিদ্যাচর্চা এবং খেলাধূলা দুই-ই সমান তালে হওয়াই কাম্য। খেলাধূলার জন্য প্রতিটি বিদ্যালয়ে একটি করে খেলার মাঠ থাকা প্রয়োজন। বিনা ব্যয়ে প্রাথমিক শিক্ষার আইন, ২০০৯- এ এই একই কথা বলা আছে। শিক্ষকদের লেখাগুলি থেকে দেখা যাচ্ছে মাত্র ৮ শতাংশ শিক্ষকই বিদ্যালয়ে খেলার মাঠ প্রসঙ্গে আলোচনা করেছেন। সংখ্যাটি কম হওয়ার দু’টি কারণ থাকতে পারে বলে মনে হয়। হতে পারে বিদ্যালয়গুলিতে এই সমস্যা এতটা প্রকট নয় যা নিয়ে শিক্ষকেরা আলোচনা করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছেন অথবা শিক্ষার সঙ্গে খেলাধূলার দৃঢ় যোগাযোগটি শিক্ষকদের কাছে গুরুত্ব পাচ্ছে না। আবার যে অল্প কয়েক জন শিক্ষক খেলার মাঠ প্রসঙ্গে আলোচনা করেছেন, তাঁদের ২৬ শতাংশই বলেছেন যে উপস্থিত খেলার মাঠ খেলাধূলার পক্ষে আদৌ উপযুক্ত নয়। খেলার মাঠের সাথে সাথেই বিদ্যালয়ে একটি বাগান থাকলে শিশুদের বাগান পরিচর্যার কাজে সংযুক্ত করা যায়। এমনকী বাগানে বিশেষ কিছু সবজি চাষ করলে তা মিড ডে মিলে শিশুদের খাবারেও নিয়মিত সরবরাহ করা যায়। যেমন বারুইপুরের বিশ্বাসচক এফ পি বিদ্যালয়ের সূর্যদেব মান্নার লেখা অনুযায়ী, ‘ছাত্রদের পুঁথিবিদ্যা ছাড়াও খেলার মাঠে বা বাগানে নিয়ে গিয়েও খেলা ও বাগান পরিচর্যার মাধ্যমে যে সু্ন্দর একটি ব্যবহারিক শিক্ষা দেওয়া যেতে পারে, সে ব্যবস্থা নেই অর্থাৎ খেলার মাঠ থাকলেও ব্যবহার করার মতো অবস্থায় নেই।’ প্রসঙ্গ ক্রমেই মালদার বাগহার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মো : জিন্নাত হোসেনের অপূর্ব অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করতেই হয়। তিনি লিখছেন :
‘পাঁচ বছর হল আমরা সর্বশিক্ষার টাকা দিয়ে বিদ্যালয়ে আমগাছ লাগিয়েছি। এখন ফল দিচ্ছে। এই ক’দিন আগে আম পেড়ে অফিসঘরে রেখে পাকতে দিয়েছিলাম। গত কাল সমস্ত শিশুকে দু’টি করে পাকা আম দিয়েছি। দারুন সাড়া পড়ে গেছে গ্রামে। আমিও আরও নতুন কিছু করব ভাবছি। ভীষণ ভাবে জেদ চাপছে। দেখা যাক কী করা যায়।’
এ থেকে একটা বিষয় ভীষণ পরিষ্কার যে ছোট ছোট কিছু কিছু পদক্ষেপ বিদ্যালয়ের সমস্ত পরিবেশটিকে পাল্টে দিতে পারে।
সর্বশিক্ষা মিশনের কথা প্রসঙ্গে একটা কথা বলতেই হয় যে প্রতিটি শিক্ষকই ঐ বিষয়ে এক মত যে ডিস্ট্রিক্ট প্রাইমারি এডুকেশন কমিটি (ডিপিইপি) এবং সর্ব শিক্ষা মিশনের থেকে বিভিন্ন খাতে প্রাপ্ত টাকায় বিদ্যালয়ে তাঁরা যথেষ্ট উন্নতি ঘটিয়েছেন। ৪৬ জন শিক্ষকের লেখা থেকে জানা গেছে, তাঁরা ডিপিইপি এবং সর্বশিক্ষা অভিযান, উভয় পক্ষ থেকেই কোনও না কোনও ভাবে উপকৃত হয়েছেন। বিদ্যালয় পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য পূর্বে ডিস্ট্রিক্ট প্রজেক্ট এডুকেশন কমিটি এবং বর্তমানে সর্বশিক্ষা অভিযান থেকে বিভিন্ন খাতে তারা বিভিন্ন সময়ে টাকা পেয়েছেন যা তাদের বিদ্যালয় পরিকাঠামো সর্বাপেক্ষা উন্নয়েনর কাজে ব্যবহৃত হয়েছে।
সূত্র : কলমচারি, প্রতীচী ইনস্টিটিউট, ফেব্রুয়ারি ২০১২
সর্বশেষ সংশোধন করা : 1/20/2020