শিশুদের বিদ্যালয়ে ধরে রাখার প্রশ্নেও সরকারি পরিসংখ্যান, বেসরকারি সমীক্ষা এবং শিক্ষকদের মতামতের মধ্যে বিশেষ কোনও পার্থক্য পাওয়া যায়নি। সর্বশিক্ষা মিশনের প্রদত্ত তথ্য অনুযায়ী ২০০৭ – ০৮-এ পশ্চিমবাংলায় প্রাথমিক স্তরে বিদ্যালয় ছুটের হার ছিল ৬.৯ শতাংশ (অ্যানুয়াল রিপোর্ট ২০০৮ – ০৯, ডিপার্টমেন্ট অফ স্কুল এডুকেশন কভর্নমেন্ট অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল, কলকাতা)। যদিও রাঘবেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ও অন্যদের (১৯৯৮) মতে পশ্চিমবাংলায় প্রকৃত বিদ্যালয় ছুটের হার সরকারি পরিসংখ্যানের তুলনায় কম। রাঘবেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ও অন্যদের মতে প্রথম শ্রেণিতে শিশুভর্তির বিষয়ে প্রশাসনিক স্তরে শিক্ষকদের পাঠানো তথ্যে গরমিল থাকে। এ ছাড়াও বিদ্যালয়-ছুট হিসাব করার পদ্ধতিগত ত্রুটির কারণে বিদ্যালয়-ছুটের সরকারি পরিসংখ্যানের সঙ্গে বাস্তবের অমিল থেকে যায়। প্রথম শ্রেণিতেই যে একটা ড্রপ আউট দেখা যায় তার একটা বড় কারণ, আসলে এই শ্রেণিতে ভর্তি হওয়া কমবয়সি শিশুদের একটা বড় সংখ্যা, যারা কার্যত প্রাক প্রাথমিক স্তরের। এরা পরবর্তী বছরে প্রথম শ্রেণির পাঠ শেষ করে। কিন্তু যে হেতু ভর্তির খাতায় আগেই নাম উঠে যায়, সেই বছর ড্রপ আউটের হিসাবে সেটা প্রতিফলিত হয়। প্রতীচী ট্রাস্টের ২০০৮ – ০৯-এর সমীক্ষা অনুযায়ী প্রাথমিক স্তরের শিক্ষা শেষ হওয়ার আগেই বিদ্যালয়-ছুট হয়ে পড়া শিশুর হার ছিল ০.৬ শতাংশ। অর্থাৎ প্রতীচী সমীক্ষা অনুযায়ী ভর্তি হওয়া শিশুদের প্রায় বেশির ভাগটাই এখন প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষা শেষ করছে। শিক্ষকদের মতামতও এর থেকে কিছু আলাদা নয়। পুরুলিয়া জেলার মানপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বিধায়ক দত্তকে আমরা লিখতে দেখি, ‘আমাদের চেষ্টা অসফল হয়নি — আজ আমার এলাকায় ড্রপ আউট স্টুডেন্ট এবং ওভার-এজেড নেভার এনরোলড স্টুডেন্ট নেই বললেই চলে।’ অর্থাৎ শিশুদের বিদ্যালয়ে ধরে রাখার প্রশ্নেও প্রতীচী ট্রাস্টের সমীক্ষা ও শিক্ষকদের মতামতের বিশেষ কোনও পার্থক্য নেই। যার অর্থ ভর্তি হওয়া শিশুদের মধ্যে খুব কম শিশুই প্রাথমিক স্তরে বিদ্যালয়-ছুট হয়ে পড়ছে। তবে শিক্ষকদের মতামত অনুযায়ী বিদ্যালয়-ছুটের বিষয়টি আগ্রাহ্য করার স্তরে নেই। কিন্তু শিক্ষকরা বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন শিশুদের অনুপস্থিতির সমস্যাটিকে।
সূত্র : কলমচারি, প্রতীচী ইনস্টিটিউট, ফেব্রুয়ারি ২০১২
সর্বশেষ সংশোধন করা : 7/10/2020