শিশুভর্তির ক্ষেত্রে শতকরা ১০০ ভাগ সাফল্যের পিছনে একটা বড় কারণ হল শিক্ষকদের উদ্যোগ। শিক্ষকরা নিজেরা উদ্যোগী হয়ে গ্রামের বাড়ি বাড়ি ঘুরে ছেলেমেয়ে জোগাড় করেছেন। কিন্তু শুধুমাত্র শিক্ষকের ব্যক্তিগত প্রণোদনার উপর নির্ভর করে সব কিছু বদলে দেওয়া যায় না। এর জন্য একই সঙ্গে দরকার সুষ্ঠু সরকারি ব্যবস্থাপনা। শিক্ষকের প্রণোদনার সঙ্গে পরিকাঠামোগত ব্যবস্থা যে কত বড় ভূমিকা পালন করতে পারে তার একটা নমুনা পাওয়া যায় দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার রূপাহাটা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক জয়ন্ত বর্মনের লেখা থেকে। তিনি লিখেছেন :
‘আমি যখন বিদ্যালয়ে যোগদান করি, তখন বিদ্যালয়ে ১৫ থেকে ২০ জন ছাত্রছাত্রী উপস্থিত হত। ঘর বা কক্ষ মাত্র একটি। ... আমি যোগদান করার তিন মাসের মধ্যে প্রধান শিক্ষক বদলি হয়ে অন্যত্র চলে গেলেন। ফলে আমি এক-শিক্ষক হয়ে গেলাম। আমি তখন পাঠদান খুবই কষ্টের সঙ্গে পরিচালনা করতাম। মাঝে মাঝে উৎসাহ হারিয়ে ফেলতাম। ২০০১ সালে বিদ্যালয়ে তিন জন শিক্ষক যোগদান করলেন। তখন বিদ্যালয়ে পাঠদান করার ক্ষেত্রে ব্যাপক উৎসাহ পেলাম। আমি তখন গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে গিয়ে ছাত্রছাত্রী সংগ্রহ করে আনতে শুরু করলাম। গ্রামের লোকজনও তখন ছাত্রছাত্রী সংগ্রহ করতে শুরু করল। ঐ বৎসরেই আমি নতুন ৯০ জন ছাত্রছাত্রী পেলাম।’
এখানে দেখা যাচ্ছে শিক্ষকের সংখ্যা বৃদ্ধি হতেই তাঁরা ঝাঁপিয়ে পড়েছেন ছাত্রছাত্রী জোগাড় করতে। জয়ন্ত বর্মনের এই অভিজ্ঞতাটি শুধুমাত্র শিক্ষকের উৎসাহ বৃদ্ধিতে পরিকাঠামোর ভূমিকাটি তুলে ধরে না, এটি পশ্চিমবাংলায় শিশুভর্তির সাফল্যের পিছনে গণ অংশগ্রহণের দিকটিও তুলে ধরে। অভিভাবক, শিক্ষক এবং সরকারি নীতির রূপায়ণ --- সব মিলিয়ে আজ পশ্চিমবাংলায় শিশুভর্তির এই সাফল্য। আজ অভিভাবকদের ক্ষেত্রে এটা প্রায় একটা নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে যে শিশু প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উপযোগী হলেই তাকে বিদ্যালয়ে পাঠাতে হবে, তা সে শহর গ্রামের, বালক বালিকা, জনজাতি বা সংখ্যালঘু যা-ই হোক না কেন। তাই মালদা জেলার শিক্ষক বিশ্বরূপ সরকারের লেখায় পড়ি, ‘বিদ্যালয়ে ভর্তির ব্যাপারে অভিভাবকগণকে আর বোঝাতে হয় না।’
সূত্র : কলমচারি, প্রতীচী ইনস্টিটিউট, ফেব্রুয়ারি ২০১২
সর্বশেষ সংশোধন করা : 7/22/2020