অনেকের অভিযোগ বেশির ভাগ অভিভাবকই তাঁদের সন্তানদের পড়াশোনার ব্যাপারে বড় বেশিই উদাসীন। মালদা জেলার এক শিক্ষক তাঁর লেখায় একটি অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেছেন। তাঁর লেখা থেকে --- ‘এক তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র প্রায়ই বিদ্যালয়ে আসে না। এক বার দীর্ঘ দিন অনুপস্থিত। বিদ্যালয় থেকে ১ কিমি দূরে ওদের বাড়ি গিয়ে শিশুর মাকে পেলাম। অনেক খোঁজে ছেলেটিকে মাঠে পাওয়া গেল। শিশুর বাবাকে ডেকে আনলাম। বিদ্যালয়ে না যাওয়ার কারণ জিজ্ঞাসা করায় মা বললেন, ছেলে স্কুলে যেতে চায়, ওর বাবা যেতে দেয় না। বলে লেখাপড়া শিখে কী হবে?’
এই বাস্তবতার সঙ্গে অনেকেই পরিচিত। সামাজিক বিন্যাসের কারণে মানুষের একাংশের সুযোগহীনতা ও বঞ্চনা তাঁদের জৈবিক বেঁচে থাকার নিশ্চয়তাটিও কেড়ে নেয়। সেই বাধ্যবাধকতা থেকে তাঁদের মধ্যে যে চেতনা কাজ করে তা শিক্ষার সুযোগ পাওয়া লোকেদের পথ ধরেই হাঁটবে এমন কোনও কথা নেই। কিন্তু তাঁদের মধ্যেও যে সন্তানের শিক্ষার আকাঙ্ক্ষা বহু গুণ বেড়েছে তা তো শিক্ষকরাই জানাচ্ছেন। তা হলে সমস্যাটা কোথায়? এই দ্বন্দ্বের নিরসনও করেছেন কিছু শিক্ষক। জলপাইগুড়ি জেলার এক শিক্ষক আমাদের সামনে একটা অন্য রকম ছবি তুলে ধরেছেন : ‘এমন অনেক অভিভাবক আছেন যাঁরা স্বামী–স্ত্রী উভয়ে চা বাগানের কাজে চলে যান এবং তাঁদের শিশু বা শিশুদের বিদ্যালয়ে যাওয়ার কথা বলে যায়। সারা দিন কাজের শেষে বাড়ি ফিরে ছেলেমেয়েদের কাছে বিদ্যালয়ে কী শেখালো কিংবা ক্লাসে কী গল্প হল সেটা জানতে চান। এর ফলে ঐ ছেলে বা মেয়ের মধ্যে একটা বদ্ধমূল ধারণা তৈরি হয় যে যা শিখব তা মনে রাখতে হবে নয়তো বাবা-মাকে বলতে পারব না। আমার বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে এমন কিছু ছেলে ও মেয়ে আছে যারা প্রায়ই বলে ‘স্যাস ইয়ে কহানি তো পিতাজিকো সুনায়া হ্যায়, দুসরা কহানি আউর ক্লাস ওয়ার্ক দিজিয়ে না।’
সূত্র : কলমচারি, প্রতীচী ইনস্টিটিউট, ফেব্রুয়ারি ২০১২
সর্বশেষ সংশোধন করা : 6/29/2020