শিক্ষকদের সঙ্গে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের যে সম্পর্ক তা শিক্ষকদের মধ্যে এক ধরনের বিচ্ছিন্নতাবোধ তৈরি করে এবং বিদ্যালয়ের কাজ চালানোর ক্ষেত্রে দিনের পর দিন শিক্ষকদের যে অসুবিধার মুখে পড়তে হয় তাতে সেই বিচ্ছিন্নতাবোধ আরও পোক্ত হয়। প্রাথমিক শিক্ষা ক্ষেত্রে নানা সমস্যা ---শিক্ষকের অভাব, শিক্ষকদের নানা ধরনের শিক্ষা-বহির্ভূত কাজে নিযুক্ত করা, প্রশাসনিক নানা সমস্যা, যেমন মিড ডে মিলের টাকা পয়সা ঠিকমতো না আসা, মিড ডে মিলের তদারকি করা, বই বা অন্যান্য জিনিস দেরিতে সরবরাহ, শিশুদের পোশাক বা অন্যান্য উৎসাহবর্ধক জিনিসপত্রের সরবরাহ নিয়ে সমস্যা, ইত্যাদি নানাবিধ অসুবিধার মধ্যে দিয়ে তাঁদের দৈনন্দিন কাজ চালিয়ে যেতে হয়। এই যে নীতি সংক্রান্ত বিষয়গুলিতে তাঁদের সংযোগের সুযোগটি থাকা, না থাকা, এবং নানান প্রশাসনিক অসুবিধা, এটা শিক্ষকদের একাংশের মধ্যে একটা বিতৃষ্ণার জন্ম দিয়েছে এটা যেমন ঠিক, তেমনি এটাও বোধ হয় সত্য যে অধীনস্থতার যে ধারণা সমাজে বিদ্যমান রয়েছে তা শিক্ষকদের কিছুটা হলেও প্রভাবিত করে, যার ফলস্বরূপ তাঁরা অভিভাবকদের খাটো নজরে দেখতে থাকেন। বেশ কয়েকটি উদাহরণ থেকে আমরা দেখছি যে, অভিভাবকদের সঙ্গে শিক্ষকদের সম্পর্ক অত্যন্ত আন্তরিক। সেটা যদি এক জনের ক্ষেত্রে হতে পারে, তা হলে অন্য জনের ক্ষেত্রে না হতে পারার তো কোনও কারণ নেই।
বস্তুত, জনসাধারণ যে স্কুল পরিচালনায় একটা কেন্দ্রীয় ভূমিকায় থাকতে পারেন, এ ব্যাপারটা নিয়ে যে বিস্তৃত ও গভীর আলোচনার দরকার ছিল, তা হয়নি। গণ অংশগ্রহণের জন্য যে কমিটি ব্যবস্থা তৈরি করা হয়েছিল, তা নিয়েও ব্যাপক আলাপ আলোচনা ও বহু মানুষের মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কাজটি করা হয়নি। পুরো প্রক্রিয়াটি হয়েছে, অত্যন্ত আমলাতান্ত্রিক ভাবে। শিক্ষকদের একতরফা দোষ দিয়ে এর সমাধান হবে না। এর সমাধানের জন্য তাঁদের ভালোমন্দ দু’ ধরনের অভিজ্ঞতাকেই কাজে লাগানোর প্রয়োজন। তেমনি আবার শিক্ষকদেরও পরস্পরের অভিজ্ঞতা থেকে অনেক কিছু শেখার আছে।
সূত্র : কলমচারি, প্রতীচী ইনস্টিটিউট, ফেব্রুয়ারি ২০১২
সর্বশেষ সংশোধন করা : 12/4/2019