কিছু শিক্ষক অভিভাবকদের সাথে আলাপ আলোচনা করে গৃহশিক্ষক সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেছেন। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে অভিভাবকের কিছু বদ্ধমূল ধারা থেকে গিয়েছে, গৃহশিক্ষকই শিশুকে সঠিক মানে পৌঁছে দিতে পারে --- যা থেকে ওঁরা আর বেরোতে পারছেন না। কিছু শিক্ষক তাই এই গৃহশিক্ষকদের মানোন্নয়নের কথা বলেছেন। গৃহশিক্ষকতা যদি বন্ধ করা নাও যায়, গৃহশিক্ষকদের পাঠদান পদ্ধতি যাতে শিশুর নতুন পাঠ-পদ্ধতিতে ব্যাঘাত না ঘটায় সে দিকে নজর দেওয়াও জরুরি।
এই সমস্যা সমাধানের কথাও কিন্তু উঠে এসেছে বেশ কিছু শিক্ষকের লেখাতেই। মুর্শিদাবাদের দেওয়ানপাড়া প্রাথমিক বিদ্যায়ের মাফিকুল ইসলাম বলেছেন যে তাঁর মনে হয় সর্বশিক্ষা প্রকল্পকে সফল করতে হলে শুধু মাত্র শিক্ষক শিক্ষিকাদেরই অভিমুখী করলে চলবে না, এরই সাথে অভিভাবকদের সমস্যা নিয়েও একই রকম আলোচনা এবং পর্যালোচনার প্রয়োজন আছে। এবং শ্রেণিকক্ষে ও বাড়িতে শেখানোর পদ্ধতির এই তফাৎটুকু মেটানোর জন্য এই ধরনের কর্মসূচি নেওয়া অত্যন্ত প্রয়োজন।
শিক্ষকেরা এ কথাও বলেছেন যে, নতুন পদ্ধতিগুলি ব্যবহার করা হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু যদি তা চলচ্চিত্রায়িত করে দেখানো যায় তবে তা শিশুমনে অনেক বেশি প্রভাব বিস্তার করতে পারে। আবার বারুইপুরের প্রদীপ মান্নার কথা অনুযায়ী এই পদ্ধতিগুলি অনেক সময়ই শিক্ষকমনে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করছে। তাই শিক্ষণ পদ্ধতিতে আরও পরিবর্তন প্রয়োজন বলে তিনি মনে করছেন।
শিক্ষকেরা নিজেরাই আবার অনেক সময় নিজেদের সমালোচনাও করেছেন। যেমন মুর্শিদাবাদের রবিউল ইসলামের কথা অনুযায়ী অনেক সময় পাঠ্যপুস্তকে শিশুদের কাজের অংশের একটি বড় অংশ অবহেলিতই থেকে যায়। সে ক্ষেত্রে শিক্ষকদের অনেক বেশি সচেতন হওয়া প্রয়োজন। প্রসঙ্গক্রমে জলপাইগুড়ির একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক একটি গুরুতর অভিযোগ এনেছেন যা সত্যিই অমার্জনীয়। তিনি বলেছেন :
‘আমি বিভিন্ন প্রশিক্ষণে থাকার সুবাদে খুব বেদনার সাথে লক্ষ করেছি একটা বড় অংশ শিক্ষক/শিক্ষিকা এই সব সহজ সরল শিক্ষণ, কৌশল কোনও অবস্থাতেই প্রয়োগ করতে চান না। গতানুগতিক পদ্ধতিই প্রয়োগ করে কত তাড়াতাড়ি বিদ্যালয় ত্যাগ করা যায় তার অজুহাত খোঁজেন।’
অভিযোগটি ভীষণ গুরুতর। তবে আমাদের ধারণা এ মানসিকতা মুষ্টিমেয় কিছু শিক্ষকেরই। এবং সেখানে উদাহরণ হিসাবে আমরা এই শিক্ষকদের রাখতে পারি যাঁরা গরিব ঘরের শিশুটিকে অন্তত কিছু শেখাতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। এই একনিষ্ঠ শিক্ষকেরাই এক দিন অন্য শিক্ষকদেরও মানসিক পরিবর্তন করতে বাধ্য করবেন বলে আশা রাখি।
সূত্র : কলমচারি, প্রতীচী ইনস্টিটিউট, ফেব্রুয়ারি ২০১২
সর্বশেষ সংশোধন করা : 6/2/2020