পাঠ্যসূচি বা সিলেবাস নিয়ে কথা বলেছেন ৩৯ জন শিক্ষক। এবং তাঁরা সকলেই পাঠ্যসূচি পরিমার্জনের ওপর বিশেষ জোর দিয়েছেন। অনেকেরই মতামত সিলেবাস শিশুদের পক্ষে উপযুক্ত নয়। তাঁদের উপর অযথা চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। বিশেষত বাংলা, ইংরাজি, ইতিহাস, ভূগোল বইগুলির পরিমার্জনের কথা তাঁরা বলেছেন। আবার জলপাইগুড়ির জয়দীপ রায় বলেছেন যে বাংলা, ইতিহাস, ভূগোলে সরকার নতুন যে পাঠ্যসূচি তৈরি করেছেন তাতে পরিমার্জনের প্রয়োজনীয়তা খুব সামান্যই।
লেখাগুলি থেকে এটা বোঝা যায় যে এক একটি বিদ্যালয়ের এক এক রকম পরিস্থিতি। শিক্ষকদের পড়ানোর পদ্ধতি ভিন্ন। ফলত এক জন শিক্ষক কোনও একটি পদ্ধতি বা বিষয় বা অন্যান্য কিছুকে যতটা সহজ মনে করছেন, অন্য একটি জেলার বা অন্য একটি বিদ্যালয়ের অপর এক জন শিক্ষক সেই পদ্ধতিটিকেই অপেক্ষাকৃত কঠিন বলে মনে করছেন। সমস্যার পাশাপাশি শিক্ষকেরাই সমাধানের কথাও নিজেরাই আলোচনা করেছেন। যেমন পুরুলিয়ার বিদ্যুৎ ব্যানার্জি বলছেন :
‘পাঠ্যবিষয়কে কেন্দ্র করে, যাতে আনুষঙ্গিক বিষয়ের উপর পাঠদান করা যায়, তার জন্য কলাকৌশলগত আলাপচারিতা কর্মশালাগুলিতে প্রাধান্য পাওয়া দরকার। Non formal Education ছাত্রছাত্রীদের আকৃষ্ট করে। Work Sheet তৈরি করার জন্য বন্ধুত্বপূর্ণ পরামর্শ ও নজরদারি শিশুদের আগ্রহান্বিত যেমন করে, ঠিক তেমনি তাদের Activity level-কে বাড়ায়।
ঠিক তেমনি মালদার নবনীতা সরকার একটি মূল্যবান কথা বলেছেন :
‘যে শিশুটি শ্রেণিকক্ষে বন্ধুর সঙ্গে গুছিয়ে কথা বলতে পারছে, আমাদের নিয়ে তাদের ভূত দেখার গল্প ভাগ করে নিচ্ছে, যে কোনও নতুন খেলার নিয়ম সুন্দর ভাবে বুঝতে পারছে, সে শুধু বুঝতে পারছে না পড়া। কারণ পড়াটা সে পাচ্ছে পড়ার মতো করে, খেলার মতো নয়। বিশেষত ইতিহাস ও ভূগোল। সে ক্ষেত্রে আমরা দায়বদ্ধ, পাঠ্যপুস্তককে তাদের মতো করে মনোগ্রাহী করে তোলার।’
সিলেবাস নির্ধারণ নিয়েও শিক্ষকেরা বিভিন্ন মতামত দিয়েছেন। তাঁদের মতে সিলেবাস নির্ধারণের ক্ষেত্রে শিক্ষকদের যুক্ত করা উচিত। তাঁদের মতামতও পাঠ্যসূচি নির্ধারণের ক্ষেত্রে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই কোনও কোনও শিক্ষক এ কথাও বলেছেন যে গ্রামীণ বিদ্যালয়গুলিকে মডেল করে সরকারের সিলেবাস তৈরির আগে চিন্তাভাবনা করা উচিত। এ প্রসঙ্গে মূল্যবান একটি কথা বলেছেন রায়গঞ্জের দেবব্রত ভট্টাচার্য। তিনি লিখেছেন :
‘ঠান্ডা ঘরে বসে যে ভাবনাচিন্তা নিয়ে পাঠক্রম তৈরি করা হয় আর আমরা শিক্ষকেরা যখন শ্রেণিকক্ষে পাঠদান করি, দু’টি পরিস্থিতি কিন্তু একেবারে ভিন্ন। যেমন গ্রামের শিশুকে পঠনপাঠনের পাশাপাশি মাথায় মোট বহন করা, অন্য কারও জমিতে ধান, পাট, গম কাটা, তারপর সেগুলি বহন করে নিয়ে যাওয়া এ সকল কাজও করতে হয়। সেখানে একটি শহরের শিশুর কিন্তু এত কাজের বোঝা থাকে না, তাদের অভিভাবকদের বাড়তি রোজগার সংসার আরও সচ্ছলতা আনার জন্য। এ সমস্ত ব্যাপারগুলি ভুলে গিয়ে যে পাঠ্যক্রম তৈরি করা হয় তাতে শিক্ষকের পাঠদানের সাথে শিক্ষার্থীর গ্রহণক্ষমতার একটি বিশাল পার্থক্য তৈরি হয়।
সূত্র : কলমচারি, প্রতীচী ইনস্টিটিউট, ফেব্রুয়ারি ২০১২
সর্বশেষ সংশোধন করা : 4/8/2020