যখন নাকি অধিকাংশ শিক্ষকই মিড–ডে মিলের উপযোগিতার কথা বলছেন, সেখানে দু’এক জনের কথায় অন্য সুরও ভেসে আসে। মিড–ডে মিল অপ্রাসঙ্গিক বা ক্ষতিকারক এমন কথা অবশ্য দু’ একজনই মাত্র বলেছেন — অধিকাংশই মনে করেছেন যে এর ফলে বিদ্যালয় শিক্ষায় অনেক সুফল ফলেছে। কিন্তু এই সুফলের মাত্রা অনেক বাড়ানো যায় যদি মিড–ডে মিল পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত সমস্যাগুলিকে দূর করা যায়। বস্তুত এর সঙ্গে যুক্ত যে বিভিন্ন প্রশাসনিক ও সামাজিক সমস্যা আছে সেগুলো শিক্ষকদের লেখায় উঠে আসে। দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলার নড়িদানা নিম্ন বুনিয়াদি বিদ্যালয়ের শিক্ষক অভিজিৎ কুমার মণ্ডলের মতে :
‘আমাদের বিদ্যালয়ে দীর্ঘ দিন মিড–ডে মিল বন্ধ ছিল কোনও স্বনির্ভর গোষ্ঠী গঠিত না হওয়ায়। সম্প্রতি মিড–ডে মিল চালু হয়েছে। দেখা গেছে যে মিড–ডে মিল বন্ধ থাকার সময় বিদ্যালয়ে যে উপস্থিতি ছিল মিড–ডে মিল চালু হবার পর সেই উপস্থিতি একই রয়েছে। কিন্তু যে সুষ্ঠু পরিবেশের মধ্যে আমরা বিদ্যালয় পরিচালনা করতে পারতাম বা যত বেশি সময় দিতে পারতাম মিড–ডে মিল চালু হওয়ার পর সেই সুষ্টু পরিবেশ নেই এবং পঠনপাঠনের সময়ও কিছুটা কমাতে হয়েছে।’
মুর্শিদাবাদ জেলার পশ্চিম কাজিসাহা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক দীপক কুমার রায়ের গলাতেও এই একই অভিযোগের সুর :
‘মিড–ডে মিল আমার মতে শিক্ষার মানোন্নয়নে একটি প্রতিবন্ধক। সচেতন অভিভাবকরা তাঁদের সন্তানদের বেসরকারি বিদ্যালয়ে ভর্তি করাচ্ছেন এবং তাঁদের সন্তানরা স্বভাবত ভাল ফল করছে। আর গ্রামের নিম্ন দরিদ্র ঘরের সন্তানরা দুপুরের আহারের জন্য বিদ্যালয়ে এসে দুপুরের আহার খাওয়া হলে বিভিন্ন প্রকার অছিলায় বিদ্যালয় ত্যাগ করে পালায়।’
মুর্শিদাবাদের ৩২ নং কালিগঞ্জ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষিকা সাহারা বসু বলেন,
‘মিড–ডে মিল পরিচালনার ক্ষেত্রে গোষ্ঠীর মেয়েদের নিয়ে শিক্ষকদের প্রতিনিয়ত সংঘাত বাগবিতণ্ডা করতে হয়, এতে শিক্ষার সুস্থ পরিবেশ অনেক সময় ব্যাহত হয়।’
সূত্র : কলমচারি, প্রতীচী ইনস্টিটিউট, ফেব্রুয়ারি ২০১২
সর্বশেষ সংশোধন করা : 4/14/2020