ছোট্ট ছোট্ট পা ফেলে অদ্ভুত এক আবেগপ্রবণ মন নিয়ে বাবা-মায়ের হাত ধরে প্রথম স্কুলে এল একটি ছেলে। বাবা-মা দুজনেই কৃষি শ্রমিক। কাজ করলে পয়সা, না করলে নয়। ছেলেটির গায়ে একটি ছেঁড়া জামা, কয়েকটি জায়গা সেলাই করা। কিন্তু সেটাই তার ভালো জামা। স্কুলে ঢুকেই তার নজর যায় অন্য দু’টি ছেলের দিকে। গায় তাদের নতুন জামা। বাবা-মা স্কুলে ভর্তি করে দিয়ে চলে যায়। দিন যায়, রোজ ঐ ছেলে দু’টিকে দেখে সে। কিন্তু কথা বলতে সাহস হয় না তার। কোথাও যেন অদ্ভুত এক পরিপাটি ভাব ছেলে দু’টির মধ্যে। বাবা-মা-এর কাছে খোঁজ নিয়ে জানতে পারে যে ওদের বাবা ‘বড়লোক’। পোশাকের বিভেদ শিশুর মনেও এনে দেয় বিভেদ। এটা যে একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার তা উঠে আসে ৪১ জন শিক্ষকের আলোচনায়। এই ৪১ জনের মধ্যে ১০ জনের কথা থেকে শিশুদের পোশাকের অভাবের কথা উঠে এসেছে। আমাদের পশ্চিমবাংলার গ্রামাঞ্চলগুলিতে মানুষের অবস্থা এতটাই খারাপ যে তাদের অনেকের কাছেই জামাকাপড় প্রায় এক রকম নেই বললেই চলে। এ রকম এক শিক্ষক জলপাইগুড়ি জেলার লোকনাথপুর ডাঙ্গি স্পেশাল ক্যাডার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তপন দাসের মতে :
‘অভিভাবকদের অর্থনৈতিক অবস্থা খুব খারাপ, যার সরাসরি প্রভাব পড়ছে ছাত্রছাত্রীদের উপর। খাওয়াদাওয়া থেকে শুরু করে পোশাক পর্যন্ত অনেকের নেই, শীতকাল হলে তো আরও কঠিন অবস্থা। ওইটুকু শিশু যখন শ্রেণিকক্ষে একটিমাত্র ছিন্ন ফি ফিনে জামা পরে শীতের ঠান্ডায় কাঁপতে থাকে তখন ভালো সোয়েটার পরে, জুতো–মোজা পরে নিজেকে ওদের সামনে দাঁড় করাতেই অপরাধ বোধ করি।’
শিক্ষকদের কথা থেকেই উঠে এসেছে যে শিশুরা নোংরা, আধছেঁড়া জামা গায়ে বিদ্যালয়ে আসছে। জামার বোতাম নেই, পায়ে চটি নেই, শীর্ণ শরীর। এমনই একটা পরিস্থিতি যা শিশুদের উপস্থিতির উপর প্রভাব ফেলে। পুরুলিয়ার গোপালগঞ্জ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মদন মণ্ডল বলেন, ‘ছাত্রছাত্রীদের শীতকালে উপস্থিতির হার ৫ – ১০% কমে যায়, কারণ ঐ সময় অনেক ছাত্র ছাত্রীর গরমের পোশাক না থাকায় তারা বিদ্যালয়ে নিয়মিত আসে না।’
সূত্র : কলমচারি, প্রতীচী ইনস্টিটিউট, ফেব্রুয়ারি ২০১২
সর্বশেষ সংশোধন করা : 7/1/2020