মিড–ডে মিল খাওয়ার ফলে শিশুর স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে এই কথাটি যেমন সত্য তেমনই শিশুদের পেট ভর্তি হলে তাদের পড়াশোনায় মনোযোগ বৃদ্ধি হয় সেটাও সত্য। দক্ষিণ ২৪ পরগনার গঙ্গাপুর অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক তপন কুমার ভুঞ্যাঁ লিখছেন :
‘অধিকাংশ বাড়ির ছেলেমেয়েরাই না খেয়ে কিংবা টিফিন না করে বিদ্যালয়ে আসে। সে ক্ষেত্রে মিড–ডে মিল সেই সব শিক্ষার্থীর কাছে ক্ষুধা মেটানোর এক বিশেষ দিক। পেটের চাহিদা মেটার ফলে তারা পঠনপাঠনে বিশেষ মনোযোগী হয়। শেষে খেলাধূলা, সৃজনশীলতা ও উৎপাদনশীল কাজেও তারা মনোযোগী হয়। এক কথায় ছুটি হওয়া পর্যন্ত এই সব শিশুকে বিদ্যালয়ে ধরে রাখা যায়।’
দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার জগদ্দল কলোনি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক তোংকর রায় চৌধুরী লিখেছেন, ‘বিদ্যালয়ে মিড–ডে মিল চালু হবার পর থেকেই শিশুদের উপস্থিতি বেড়ে গেছে। শিশুরা পড়াশোনায় মন দিক বা না দিক কিছুটা হৃষ্টপুষ্ট হয়েছে বলা যায়। আমরা এটাকে কাজে লাগিয়ে চেষ্টা চালিয়ে যাব যাতে তাদের মনে পড়াশোনা সম্পর্কে আগ্রহ জন্মানো যায়।’ এটা যেমন আশার কথা, তেমনই এর মধ্যে আমাদের সামনে উঠে আসছে কিছু অস্বস্তিকর ঘটনার কথাও, যে ঘটনা ক্ষুধার প্রচণ্ডতার সঙ্গে যুক্ত। মালদা এবং পুরুলিয়া জেলার দু’ জন শিক্ষকের কথা থেকে আমরা জানতে পারছি অনেক অভিভাবকই নাকি পাঁচ বছরের আগেই তাঁদের শিশুদের বিদ্যালয়ে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। তাঁরা ভাবছেন শিশুরা পড়ুক বা না পড়ুক এক বেলা পেট ভরে খাবার তো পাবে। আজ সমাজ ও রাষ্ট্রর সামনে সমস্যাটি এক বিরাট রূপ নিয়েছে এবং এই সমস্যা সমাধানে জরুরি মনোযোগ দাবি করে। শিক্ষকদের মতে এ রকম এক পরিস্থিতিতে প্রত্যেকটি শিশুকে পড়াশোনা করানো খুব সমস্যা হয়ে যাচ্ছে, কারণ পাঁচ বছরের আগে একটি শিশুর পড়া বোঝার মতো ক্ষমতাই জন্মায় না। কিন্তু ক্ষুধার তীব্রতা শিশুদের স্কুলে ভর্তির বয়সকে এগিয়ে আনে।
সূত্র : কলমচারি, প্রতীচী ইনস্টিটিউট, ফেব্রুয়ারি ২০১২
সর্বশেষ সংশোধন করা : 4/16/2020