আমি যেখানে প্রথম কাজ করতে গেলাম সেখানে দেখতে পেলাম যে শিশুর শিখনের ক্ষেত্রে মূল সমস্যা হল বিদ্যালয়ে শিশুদের অনুপস্থিতি, যার জন্য শিশু দায়ী নয়। দায়ী করা যেতে পারে তার অভিভাবক–অভিভাবিকাকে, বিশেষ করে শিশুর মা-কে। ২০০১ সালের ILIP নিয়ে কাজ করতে গিয়ে প্রথমত এটা দেখতে পাই। তখন আমি বিদ্যালয়ে তাদের উপস্থিতি বাড়ানোর জন্য প্রতিটি শিশুর অভিভাবকের সঙ্গে আলোচনায় বসি। তাতেও যখন পুরো কাজ হয় না তখন প্রতি দিন নাম ডাকার পর সেই শিশুর খোঁজ নিই এবং তার অভিভাবক-অভিভাবিকাকে ডেকে পাঠিয়ে শিশুকে বিদ্যালয়ে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে বলি। এর জন্য অনেক ব্যতিক্রমী ভাষা শুনতে হয়েছে। কারণ সেই বিদ্যালয়টি ছিল একটি প্রত্যন্ত গ্রামে, যেখানে সেই সময় মাধ্যমিক পাশ বলতে ২–৪ জন। তাঁদের অর্থনৈতিক কাঠামো ছিল অত্যন্ত দুর্বল। আমি তাঁদের সঙ্গে আত্মীয়তা গড়ে তুলি, এর সাথে শিশুদের আনন্দদায়ক কাজকর্ম ও তাদের চাহিদা পূরণের প্রচেষ্টা নিতে থাকি। তাতে দেখা যায় ছাত্রছাত্রীর উপস্থিতি বাড়তে লাগল। তখন আমি আরও জোর কদমে প্রচেষ্টা চালাতে লাগলাম। ILIP শিখতে যে সম্ভার দেওয়া হয়েছিল তার সাহায্যে এবং পাঠ্যপুস্তক নিয়ে অভিভাবকদের বা অল্পশিক্ষিত মায়েদের বোঝাতে লাগলাম যে, আপনার শিশু যদি এক দিন স্কুলে না যায় তবে তার এই পাতার পড়া পিছিয়ে যাবে। এই ভাবে দু’ তিন দিন পর সে অনেক পিছিয়ে গেলে পড়াশোনায় আর এগোতে পারবে না।
আর একটা কথা আমার মনে কাজ করেছিল। কচি বাচ্চারা স্কুলে প্রতি দিন হয়ত আসবে আর আমি যদি স্কুলে না যাই তবে দ্বিতীয় দিনই সেই বাচ্চারা স্কুলমুখী হবে না। কারণ সেই বাচ্চারা আমাকে প্রচণ্ড ভালবাসত। আমি তাদের অন্তঃস্থলে জায়গা করে নিয়েছিলাম। এর ফলে দেখা গিয়েছিল পরিকাঠামোর অভাব থাকা সত্ত্বেও সই সময় ৭৪ শিশুর মধ্যে কোনও দিন ৬৮, কোনও দিন ৭০, কোনও দিন ৭২ উপস্থিতি ছিল। তার পরেই আমি শ্রেণিকক্ষেই তাদের গ্রহণক্ষমতা অনুযায়ী পড়া তৈরি করে দিতাম আর বলে দিতাম বাড়িতে গিয়ে একটু দেখবে আর খেলবে, কোনও প্রাইভেট পড়তে হবে না। তাতে অভিভাবক –অভিভাবিকাও একটু একটু করে আকর্ষিত হলেন।
সূত্র : কলমচারি, প্রতীচী ইনস্টিটিউট, ফেব্রুয়ারি ২০১২
সর্বশেষ সংশোধন করা : 4/27/2020