বিষয়ের প্রতি প্যাশন বা ভালো লাগাটা জরুরি। অনেকের ধারণা রসায়নে নাকি নানা বিষয় মুখস্থ করতে হয়। এটা ভুল ধারণা। রসায়ন শাস্ত্রের যুক্তি যদি ছেলেবেলা থেকে ঠিক ভাবে অনুধাবন করা যায়, তা হলে রসায়ন আর নীরস থাকে না। এক জন পড়ুয়ার কাছে রসায়ন বিষয়টা আকর্ষণীয় মনে হচ্ছে কি না, তা কী ভাবে বোঝা যাবে ? একটা পাঠ্যবই নিজে নিজে পড়ো। এক বার নয়, দু’ বার, তিন বার পড়ো। দেখো বিষয়টা কতখানি বোধগম্য হচ্ছে। যেটা পড়ছ, ভালো লাগছে কি না, পড়তে পড়তে মনে উৎসাহ আসছে কি না, একটা বিষয় থেকে অন্য বিষয়ে যাওয়ার পথটা সহজ, সাবলীল ও যুক্তিগ্রাহ্য মনে হচ্ছে কি না। এই ভাবেই কোনও বিষয়কে ধীরে ধীরে হৃদয়ঙ্গম করা যায়। তখন সেটা আর কঠিন থাকে না তোমার কাছে। পড়ুয়ারা দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত কেমিস্ট্রি নিয়ে যা পড়ে, তা খানিকটা হলেও সুবিধা দেয় স্নাতক স্তরের পড়াশোনায়। দু’টো বিষয় মাথায় রেখো। প্রথমটা মূলত বাংলা মিডিয়মের পড়ুয়াদের জন্য। স্নাতক স্তরের প্রায় সব বই-ই ইংরাজিতে। বইয়ের ভাষা সহজ হলেও অনেক ক্ষেত্রেই তারা ইংরাজি পরিভাষাগুলো বুঝতে পারে না। যেমন তারা হয়তো পড়েছে জারণ-বিজারণ। কিন্তু যেই সেটা ইংরাজিতে অক্সিডেশন-রিডাকশন হিসেবে পড়ে, তারা ধরতে পারে না। এই সমস্যা থাকবে না, যদি দ্বাদশ শ্রেণিতে টেক্সট বা রেফারেন্স বইগুলো পড়ার সময় পরিভাষাগুলোর ইংরাজি সংস্করণগুলো খেয়াল করো। বাকিটা তোমরা নিজেরাই পড়ে বুঝতে পারবে। আর দুই, অনার্স স্তরে কেমিস্ট্রি থাকলে পাস-এ ফিজিক্স ও অঙ্ক নিতেই হয়। তা ছাড়া অন্য কোনও পথ নেই। কিছু জায়গায় বায়োলজির কিছু কিছু বিষয় নেওয়া যায়। তবে সে ক্ষেত্রে মুশকিল হয়, কোনও ভালো প্রতিষ্ঠানে দু’ বছরের এমএসসি প্রবেশিকা পরীক্ষা দেওয়ার সময়। এই সব পরীক্ষায় গণিত আর পদার্থবিদ্যার ব্যাকগ্রাউন্ড না থাকলে চলে না।
দ্বাদশ শ্রেণির পর এখনও অধিকাংশ ছেলেমেয়ে ডাক্তারি, ইঞ্জিনিয়ারিং-এর মতো প্রফেশনাল কোর্সের দিকেই আগে ঝোঁকে। বেসিক সায়েন্স নিয়ে পড়াশোনা করার ইচ্ছে অনেকেরই থাকে না। মূলত কেরিয়ার গড়তে অনেকখানি সময় লাগার কারণে। তবে এটুকু বলতে পারি, কেমিস্ট্রি এমনই একটা বিষয়, যেটা পড়ে অন্যান্য অনেক ক্ষেত্রে যাওয়ার সুযোগ থাকে।
টেক্সটাইল, পেট্রোলিয়াম, রাবার ও প্লাস্টিক, ফার্টিলাইজার, কসমেটিক্স – এই সব শিল্প ক্ষেত্রে কাজের সুযোগ তো অনেক রকমের। ফুড টেকনোলজি, বায়োটেকনোলজি সংক্রান্ত সংস্থা তো বটেই, কেমিস্ট্রির ছেলেমেয়েরা বিভিন্ন ফার্মাসিউটিক্যাল সংস্থার রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট বিভাগেও চাকরি পায়। কেউ অ্যাকাডেমিক্সে থাকতে চাইলে স্কুল বা কলেজে শিক্ষকতাও করতে পারে। স্কুলের শিক্ষকতা করতে সাধারণত বি এড করতে হয়। আর কলেজের জন্য এমএসসি-র পর পিএইচডি করতে হয়। যদি কেউ কোনও প্রতিষ্ঠানে অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর হিসেবে যোগ দিতে চায়, তা হলে পিএইচ ডি-র পর কমপক্ষে তিন-চার বছরের পোস্ট ডক্টোরাল ফেলোশিপ করে রাখতে হয়।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা, প্রস্তুতি, ৩ মার্চ, ২০১৫
সর্বশেষ সংশোধন করা : 12/21/2019