ধলিয়াবাড়িতে পোড়ামাটির ফলকযুক্ত দক্ষিণমুখী সিদ্ধনাথ শিবের পঞ্চরত্ন মন্দির দেখা যায়। অলংকরণ যুক্ত মন্দিরটির উচ্চতা প্রায় ৩০ ফুট। দেবালয়ের বাঁকানো চালের উপরে চার কোণে চারটি রত্ন আছে কিন্তু মাঝখানের রত্নটি ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে বলে অনুমিত হয়। অনাথনাথ শিবমন্দিরের মতো এই মন্দিরেও মুসলিম স্থাপত্যের কিছু কিছু আধিপত্য নজরে পড়ে। পশ্চিম দিকের দেওয়ালে ৯ ফুট উচ্চতাবিশিষ্ট মিহরাবের উপস্থাপনা সে কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়। মন্দিরের প্রবেশপথের দ্বারের খিলান বহুমুখী এবং ছুঁচলো। তার নীচে ও দু’পাশে দুটি স্তম্ভ রয়েছে। স্তম্ভের গায়ে পলকাটা আমলকের অলংকরণ দেখা যায়। দেওয়ালের গায়ে খাঁজকাটা অনেকগুলি কুঠুরি বা খোপ আছে। সেই সমস্ত খোপে দশাবতার, পৌরাণিক দেবীর মূর্তি, বন্দুকধারী পল্টন, নর্তকী মূর্তি এবং লতাপাতার অলংকরণ দেখা যায়। সম্ভবত রাজা প্রাণনারায়ণ এটির নির্মাণকার্য শুরু করেছিলেন তবে সমাপ্ত হয়েছিল দেবনারায়ণের সময়ে। মন্দিরাভ্যন্তরে বিগ্রহটি সাড়ে চার ফুট উচ্চতাবিশিষ্ট। সিদ্ধনাথ শিবমন্দির ছাড়া আর সর্বত্রই পোড়ামাটির অলংকরণ অনুপস্থিত। এরই অদূরে যে স্তূপ দেখা যায় তা সম্ভবত উপেন্দ্রনারায়ণের রাজপ্রাসাদের ধ্বংসাবশেষ।
বৈরাগী দিঘির উত্তর পাড়ে মদনমোহন মন্দির মহারাজা নৃপেন্দ্রনারায়ণ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৮৮৯ খ্রিস্টাব্দে। বিগ্রহটি কোচবিহার মহারাজাদের গৃহদেবতা। মন্দির প্রকোষ্ঠে রৌপ্যনির্মিত বৃহৎ মঞ্চ এবং মঞ্চের উপর রুপোর সিংহাসনে অলংকরণভূষিত অষ্টধাতুর মদনমোহন বিগ্রহ। চারকক্ষবিশিষ্ট মন্দিরটির প্রতিটিই কক্ষেই দেবদেবীর অবস্থান লক্ষ করা যায়। এদের মধ্যে সবচেয়ে বড় কক্ষে মদনমোহন বিগ্রহটি অধিষ্ঠান করছেন। এই কক্ষটির ওপরে সোনালি রঙের গম্বুজ, গম্বুজের মাথায় পদ্ম, কলস, আমলক ইত্যাদি শোভা পাচ্ছে। মদনমোহন মন্দিরের বাঁ দিকের কক্ষে রয়েছেন অষ্টধাতুর অন্নপূর্ণা, নয়নতারা ও মঙ্গলচণ্ডী বিগ্রহ। দক্ষিণ দিকের ঘরে রয়েছেন শ্বেতপাথরের শায়িত মহাকাল মূর্তির উপর কষ্টিপাথরের এক কালিকা মূর্তি। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যায় যে বর্তমান মন্দিরে দু’টি মদনমোহন বিগ্রহ রয়েছে। ছোট বিগ্রহটির গঠন কার্য, আকার দেখলে অতি প্রাচীন বলে মনে হয়। রাসযাত্রা উপলক্ষে দশদিন ধরে সাড়ম্বরে পূজাভোগ, যজ্ঞাদি অনুষ্ঠিত হয়।
সুত্রঃ পোর্টাল কন্টেন্ট টিম
সর্বশেষ সংশোধন করা : 7/11/2020
কোচবিহার রাসমেলা এই বাংলার শতাব্দী প্রাচীন মেলাগুল...