কোচবিহার শুধু রাজপ্রাসাদ আর মন্দিরেরই শহর নয়। যে শহরের পরতে পরতে ইতিহাস জড়িয়ে রয়েছে, সেখানে তা হওয়ার কথা নয়। ঐতিহাসিক এই শহরে রয়েছে বহু মসজিদ ও মাজার। এছাড়া রাজার শহর যখন, তখন দুর্গ যে থাকবে, তা কি আর বলতে হয়।
কোচবিহার জেলার যে সমস্ত মসজিদ এবং মাজার আছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য মহারানিগঞ্জে তোর্সাপীরের ধাম এবং হলদিবাড়ির পীর ত্রক্রাশুল মাজার। জনশ্রুতি অনুযায়ী, মহারাজ হরেন্দ্রনারায়ণ তোর্সাপীরের ভক্ত ছিলেন। তাঁরই উৎসর্গীকৃত সাতবিঘা জমিতে তোর্সাপীরের মসজিদ বা মাজার অবস্থিত। এখানেই আছে পাগলা পীর, সত্য পীর ও খেয়াজ পীরের ঢিবি। মহরম উপলক্ষে এই বিশাল চত্বরে মেলা বসে এবং ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে এই মেলায় লোক সমাগম হয় এবং পীরের সমাধিতে বাতাসা, নকুলদানা, খই ইত্যাদি উৎসর্গ করেন। প্রতি বছর ফাল্গুন মাসে হুজুর সাহেবের মেলা বসে। আগে এখানে ধর্মসভা অনুষ্ঠিত হত এবং ধর্মপ্রাণ পণ্ডিত মুসলিমরা এই মাজার শরিফে ধর্মসভায় যোগ দিতেন। এখন শুধু মেলা বসে এবং জাতি ধর্ম নির্বিশেষে লোকজন এই মাজারে এসে ফুল, চাদর, ধূপকাঠি এবং মুরগি উৎসর্গ করে যান। এ ছাড়া আছে পুরানী মসজিদ, খাগড়াবাড়ির মসজিদ, শিবপুরের মসজিদ। এই সমস্ত মসজিদে মহরম উপলক্ষে নানা উৎসব ধুমধাম সহকারে পালিত হয়।
কিছু দুর্গ যেমন ফেঙ্গয়াগড়, বৈদ্যেরগড়, বিক্রমরাজার গড়, প্রতাপগড়, কামতাপুর দুর্গ, বারোপাইকের গড়, বিশ্বসিংহের কেল্লা, চিলারায় (শুক্লধ্বজ) কোট ইত্যাদি সম্ভবত খ্রিস্টীয় পঞ্চদশ ও ষোড়শ শতাব্দীতে নির্মিত। এদের মধ্যে চিলারায়ের কোট এবং কামতাপুর দুর্গ উল্লেখ করার দাবি রাখে। চিলারায়ের কোট হল মাটি-ইট-চুন মেশানো উঁচু পাঁচিলঘেরা এক গড়। উত্তর-দক্ষিণে ৮৪ মিটার বিস্তৃত। দুর্গের ঘরগুলি ছিল বাঁশ বা কাঠ দিয়ে তৈরি। দুর্গের মধ্যে ছিল অন্দরমহল। তাই স্থানের নাম হয় অন্দরান ফুলবাড়ি। নীলধ্বজ নির্মিত কামতাপুর দুর্গ মাটির পাঁচিল, প্রায় ২২ কিলোমিটার বিস্তৃত। দুর্গের অভ্যন্তরে রাজপ্রাসাদের প্রবেশদ্বার শীলদুয়ার, সন্ন্যাসী দুয়ার, জয় দুয়ার, নিমাই দুয়ার ও হেঁকোদুয়ার।
সুত্রঃ পোর্টাল কন্টেন্ট টিম
সর্বশেষ সংশোধন করা : 7/27/2019