ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগে রমেশচন্দ্র দত্ত লিখেছেন, "বিষ্ণুপুরের প্রাচীন রাজবংশের সূচনা সেই সময় ঘটে যখন দিল্লিতে হিন্দু রাজবংশ শাসন করত। সেই সময় ভারতের কেউ মুসলমান সম্প্রদায়ের নাম শোনেনি। বখতিয়ার খিলজি হিন্দু রাজাদের হাত থেকে বাংলার শাসন অধিকার করে নেওয়ার আগে পাঁচ শতাব্দীকাল এই রাজবংশ বিষ্ণুপুর শাসন করেছিল। যদিও, বাংলায় মুসলমান বিজয় বিষ্ণুপুর রাজাদের শাসনের ক্ষেত্রে কোনো পরিবর্তন আনেনি... বাংলার উর্বর অংশের মুসলমান শাসকেরা এই অরণ্যরাজ্য সম্পর্কে সম্যক অবহিত ছিলেন না। তারা এই অঞ্চলে কখনও আসেনওনি। এই কারণে, শতাব্দীর পর শতাব্দীকাল বিষ্ণুপুরের রাজারা নির্বিঘ্নে শাসনকাজ চালিয়ে যান। পরবর্তীকালে অবশ্য মুঘল রাজশক্তি এই অঞ্চল পর্যন্ত প্রসারিত হয়েছিল। মাঝে মাঝে মুঘল বাহিনী বিষ্ণুপুরের নিকটে এসে রাজস্ব দাবি করত এবং সম্ভবত বিষ্ণুপুরের রাজারা রাজস্ব দিয়েও দিতেন। মুর্শিদাবাদের সুবাদারেরা পরবর্তীকালের বীরভূম ও বর্ধমানের রাজাদের মতো বিষ্ণুপুরের রাজাদেরও নিয়ন্ত্রণে আনতে সম্পূর্ণ সক্ষম হননি। বর্ধমান রাজাদের শক্তিবৃদ্ধি হওয়ার পর বিষ্ণুপুর রাজবংশের অবক্ষয় শুরু হয়। মহারাজা কীর্তিচাঁদ বিষ্ণুপুর আক্রমণ করে এই অঞ্চলের একটি বিস্তৃর্ণ অঞ্চল নিজ জমিদারির অন্তর্ভুক্ত করেন। বর্গী হানার সঙ্গে সঙ্গে বিষ্ণুপুর রাজবংশের পতন সম্পূর্ণ হয়। বর্তমানে এইটি দরিদ্র জমিদার পরিবার মাত্র।"
বিষ্ণুপুরে উল্লেখযোগ্য মন্দিরের সংখ্যা তিরিশের নীচে হবে না। বিষ্ণুপুরের মন্দিরগুলি দেউল, চালা, রত্ন প্রভৃতি স্থাপত্যগত দিক থেকে পৃথক পৃথক পর্যায়ে ভাগ করা যায়। দেউল পর্যায়ের সৌধগুলির মধ্যে মলেশ্বর শিবের মন্দির উল্লেখযোগ্য। রেখদেউলের অনন্য নিদর্শন এই মন্দিরটি ল্যাটেরাইট পাথরে নির্মিত। এটি নির্মাণ শুরু করেছিলেন বীর হাম্বির ১৬১২-য়। শেষ হয় ১৬৪২ খ্রিস্টাব্দে, পুত্র রঘুনাথ সিংহের হাতে। মন্দিরটি পূর্বে নাকি দেউল আকৃতির ছিল এবং বক্রাকৃতি গন্ডির উপরে আমলক ও কলস স্থাপিত ছিল। আদি মন্দিরের সঙ্গে বর্তমান মন্দিরের কিছু কিছু সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায় বিশেষ করে উদগতা অংশগুলির ক্ষেত্রে। পলেস্তারার প্রয়োগে গোটা মন্দিরটিই আধুনিকতার রূপ পেয়েছে। বর্তমান মন্দিরটি একটি চতুষ্কোণ গৃহের উপর অষ্টকোণাকৃতি এক শিখর বিশিষ্ট। মন্দিরের প্রবেশদ্বারের উপর একটি পাথরের হাতি ও শিলালিপি আছে, মন্দিরাভ্যন্তরে মেঝের উপর স্থাপিত উত্তর দিকে বিস্তৃত গৌরীপট বেষ্টিত শিবলিঙ্গ প্রতিষ্ঠিত আছে। ইনিই মল্লেশ্বর শিব নামে খ্যাত। মন্দিরের সংলগ্ন একটি বৃহৎ নহবত খানা আছে। মন্দির চত্বরে একটি চৌবাচ্চার মধ্যে জলেশ্বর শিব নিহিত আছেন।
সুত্রঃ পোর্টাল কন্টেন্ট টিম
সর্বশেষ সংশোধন করা : 8/19/2019