সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহ (আগস্ট ১৫, ১৯২২ - অক্টোবর ১০, ১৯৭১) আধুনিক বাংলা সাহিত্যের এক স্তম্ভপ্রতিম কথাশিল্পী। কল্লোল যুগের ধারাবাহিকতায় তাঁর আবির্ভাব হলেও তিনি ইউরোপীয় আধুনিকতায় পরিশ্রুত নতুন সাহিত্য বলয়ের শিলান্যাস করেন। জগদীশ গুপ্ত, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখের উত্তরসূরী এই কথাসাহিত্যিক অগ্রজদের কাছ থেকে পাঠ গ্রহণ করলেও বিষয়, কাঠামো ও ভাষা-ভঙ্গীতে নতুন এক ঘরানার জন্ম দিয়েছেন।
পারিবারিক পরিমণ্ডলের সাংস্কৃতিক আবহাওয়া সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহর মনন ও রুচিতে প্রভাব ফেলেছিল। পিতার বদলির চাকরির সুবাদে ওয়ালিউল্লাহ পূর্ব বাংলার বিভিন্ন অংশ দেখার সুযোগ লাভ করেন। ওয়ালিউল্লাহর শিক্ষাজীবন কেটেছে দেশের বিভিন্ন বিদ্যালয়ে। ছাত্রজীবনে তিনি একাধিক মাসিকপত্রে লেখালেখির সাথে জড়িত ছিলেন। পাকিস্তান সরকারের পররাষ্ট্র দফতরের সাথে জড়িত থাকার সূত্রে কর্মজীবনের বড় একটা সময় তিনি বিদেশে কাটান। ১৯৫৫ সালে তিনি ফরাসি আন মারি-র সাথে বিবাহসূত্রে আবদ্ধ হন।
ছাত্রাবস্থাতেই সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহ কর্মজীবনে প্রবেশ করেন। বাধ্য হয়ে নয়, স্ব-ইচ্ছায়। তাঁর পক্ষে খুব স্বাভাবিক ছিল এমএ পড়াটা। কিন্তু হয়নি। ১৯৪৮ সালে তিনি কলকাতার ইংরেজি দৈনিক দ্য স্টেটসম্যান পত্রিকায় চাকরি নেন। এ বছর তাঁর পিতাও প্রয়াত হন। তার তিন মাস আগে, মার্চ মাসে, তাঁর প্রথম গ্রন্থ নয়নচারা গল্পগ্রন্থ বের হয়। নিয়মিত লেখালেখি শুরু করেছিলেন ১৯৪১-৪২ সাল নাগাদ। এমন মনে করার সঙ্গত কারণ আছে যে,তিনি ভবিষ্যতে লেখকবৃত্তি বেছে নিতে চেয়েছিলেন। ১৯৪৭ সালের দেশ বিভাগের পরই তিনি দ্য স্টেটসম্যান এর চাকরি ছেড়ে দিয়ে ঢাকা চলে আসেন এবং সেপ্টেম্বরে রেডিও পাকিস্তানের ঢাকা কেন্দ্রের সহকারী বার্তা-সম্পাদকের চাকুরি নেন। কাজের ভার কম ছিল, লালসালু উপন্যাস লেখায় হাত দিলেন নিমতলীর বাসায়। পরের বছরই এই উপন্যাস গ্রন্থাকারে প্রকাশ করে কমরেড পাবলিসার্স। ঢাকা থেকেই বের হয়। ষাটের দশকের গোড়া থেকে প্যারিসে থাকার সুবাদে প্রকাশিত হয়েছি ‘লালসালু’র ফরাসি অনুবাদ ‘লারব্র্ সা রাসিন’। দূতাবাসের চাকুরি ছেড়ে চুক্তিভিত্তিক প্রোগ্রাম স্পেশালিস্ট পদে যোগ দেন ইউনেস্কোতে, ১৯৬৭ সালের ৮ আগস্ট, চাকুরিস্থল ছিল প্যারিস শহরেই, ইউনেস্কো সদর দফতরে। ১৯৭০ সালের ৩১ ডিসেম্বর ইউনেস্কোতে তাঁর চাকরির মেয়াদ শেষ হয়। অবসরগ্রহণের নিয়ম হিসাবে পাকিস্তান সরকার ইসলামাবাদে বদলি করে, কিন্তু তিনি প্যারিসেই থেকে গিয়েছিলেন।
বহু পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহ। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য একুশে পদক (মরণোত্তর), ১৯৮৪ বাংলা অ্যাকাডেমি পুরস্কার, ১৯৬১ সালে উপন্যাসে বিশেষ অবদানের জন্য ইত্যাদি।
সূত্র: উইকিপিডিয়া
সর্বশেষ সংশোধন করা : 4/29/2020