আবিষ্কার : ১৯২০ খ্রিস্টাব্দ
বিজ্ঞানী : মেঘনাদ সাহা
তারকা-সংক্রান্ত গবেষণার ক্ষেত্রে যে বারোটি মৌলিক আবিষ্কারকে বিজ্ঞানী আর্থার এডিংটন মাইল-স্টোন হিসাবে চিহ্ণিত করেছেন ব্রিটানিকায়, তার মধ্যে মেঘনাদ সাহার তাপীয় আয়নন তত্ত্ব অন্যতম। কালানুসারে এই তালিকায় আছেন এডমন্ড হ্যালি, উইলিয়াম হার্সেল -প্রথম দিকে, সাহার আবিষ্কারকে এডিংটন দ্বাদশতম বলে গণ্য করেছেন । বিষয়ের গভীরে যাওয়ার আগে এই স্বীকৃতি থেকেই আমরা এই আবিস্কারের গুরুত্ব বুঝতে পারি।
যদি কোনও পরমাণু থেকে কোনও রকমে একটি ইলেকট্রন বেরিয়ে আসে বা তার সঙ্গে যুক্ত হয়, তা হলে এরূপ তড়িতাহত কণাকে আয়ন বলে। সেই পদ্ধতিকে বলে আয়নীকরণ (আয়োনাইজেশন)। উচ্চ চাপে জটিল রাসায়নিক অণু ভেঙে গিয়ে সরল অণুতে পরিণত হয়, তার পর হয় পরমাণু। আরও উচ্চ চাপে পরমাণুর ইলেকট্রন বিযুক্ত হয়ে পরমাণুগুলি আয়নিত হয়। মেঘনাদ সাহা প্রস্তাব করেন যে নক্ষত্রদের ভিতরে যে উচ্চতাপ আছে তাতে মূল পরমাণুগুলি আয়নিত হয়ে যায়। নক্ষত্রদের বর্ণালীতে যে সকল মৌলের উজ্জ্বল রেখা পাওয়া যায় না তার কারণ হল যে নক্ষত্রের বর্ণালীতে মূল পরমাণুর রেখা থাকা সম্ভব নয়, তাই ঐ আয়নিত পরমাণুর রেখা পাওয়া যায় না। অসাধারণ গাণিতিক প্রতিভায় তিনি হিসাব করে এদের স্থান নির্ধারণ করেন। পর্যবেক্ষকগণ বর্ণালী-বিশ্লেষণে এদের পান সাহা- নির্দেশিত স্থানে। সাহার গাণিতিক ফর্মুলাটি ‘সাহাস আয়োনাইজেশন ফর্মুলা’ নামে জগদ্বিখ্যাত হয়ে যায়।
সাহার আয়নন সূত্র ১৯২০ খ্রিস্টাব্দ গবেষণা-আকারে ‘আয়োনাইজেশন ইন দ্য সোলার ক্রোমোস্ফিয়ার’-এ প্রকাশিত হলেও ঐ সময়ে প্রকশিত বিভিন্ন গবেষণা-প্রবন্ধে তাঁর আয়নন তত্ত্ব সংক্রান্ত ভাবনার পরিচয় পাওয়া যায়। এই বত্সরেই প্রকশিত ‘এলিমেন্টস ইন দ্য সান’ গবেষণাপত্রে তিনি বলেন, পৃথিবীর সব মৌলিক উপাদানেরই সূর্যে বর্তমান থাকা স্বাভাবিক। সূর্য ও নক্ষত্রের আবহমণ্ডলে তাপ ও চাপই তার উপাদান মৌলিক পদার্থের উত্তেজিত বা আয়নিত অবস্থা নিয়ন্ত্রিত করে।
সূত্র : বিংশ শতাব্দীর পদার্থবিদ্যা ও ব্যাক্তিত্ব : ডঃ শঙ্কর সেনগুপ্ত, বেস্টবুকস
সর্বশেষ সংশোধন করা : 4/19/2020