যেসব সূক্ষ কণিকা দ্বারা পরমাণু গঠিত, তাদেরকে মৌলিক কণিকা বলে। এরা হচ্ছে ইলেকট্রন, প্রোটন এবং নিউট্রন। এ তিনটি কণিকা বিভিন্ন সংখ্যায় একত্রিত হয়ে ভিন্ন ভিন্ন পরমাণু সৃষ্টি করে। প্রোটন এবং নিউট্রন একত্রিত হয়ে নিউক্লিয়াস গঠন করে।
পরমাণুর ক্ষুদ্রতম কণিকা ইলেকট্রন।১৮৯৭ খ্রিষ্টাব্দে স্যার জে. জে. থমসন সর্বপ্রথম ইলেকট্রনের অস্তিত্ব আবিষ্কার করেন। একটি ইলেকট্রনের আসল ভর অতি সামান্য 9.1085×10−28g। ইলেকট্রনের আধান -1.6×10−19কুলম্ব। ইলেকট্রন নিউক্লিয়াসের চারদিকে ঘুর্ণায়মান। ইলেকট্রনকে সাধারণত e প্রতীক দ্বারা প্রকাশ করা হয়ে থাকে।
প্রোটন ধণাত্মক আধান বিশিষ্ট কণিকা যা নিউক্লিয়াসের মধ্যে থাকে। ১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দে বিজ্ঞানী আর্নেস্ট রাদারফোর্ড প্রোটনের অস্তিত্ব প্রমাণ করেন।একটি পরমাণুতে ইলেকট্রনের সমান সংখ্যক প্রোটন থাকে। প্রোটনের ভর 1.673×10−24g যা পারমাণবিক ভর স্কেল অনুসারে 1.007276 amu (এখানে amu হল atomic mass unit)। একটি হাইড্রোজেন পরমাণু থেকে একটি ইলেকট্রন সরিয়ে নিলেই প্রোটন পাওয়া যায় তাই একে H+বলা যেতে পারে। একে সাধারণত p দ্বারা প্রকাশ করা হয়ে থাকে।
ইলেকট্রন ও প্রোটনের ন্যায় নিউট্রনও একটি মৌলিক কণিকা তবে এটি আধানবিহীন ।আধানবিহীন(neutral) হওয়ায় এর এই নাম দেয়া হয়েছে। নিউট্রন নিউক্লিয়াসের মধ্যে অবস্থান করে। ১৯৩২ সালে জেমস চ্যাডউইক নিউট্রন আবিস্কার করেন। এর আসল ভর 1.675×10−24g যা পারমাণববিক ভর স্কেল অনুসারে 1.008665 amu। এর ভর ইলেকট্রনের ভরের প্রায় 1839 গুণের সমান। একে সাধারণত n দ্বারা প্রকাশ করা হয়ে থাকে।
আবিষ্কার : ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দ
বিজ্ঞানী : অটো হান, লিজে মাইটনার
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার ঠিক এক বছর আগে জার্মানিতে অটো হান একটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছিলেন, সঙ্গে ছিলেন লিসে মাইটনার। তাঁরা ভারী পরমাণু সহ মৌল সৃষ্টি করার চেষ্টা করছিলেন যা প্রকৃতিতে লভ্য নয়, নিউট্রন দিয়ে ইউরেনিয়ামকে উত্তেজিত করে ।
পরীক্ষার মাঝামাঝি সময়ে নাত্সিদের অত্যাচারে ইহুদি-বংশোদ্ভূত লিসে মাইটনারকে জার্মানি ত্যাগ করে সুইডেনে চলে যেতে হল। অটো হান একাকী পরীক্ষার ফল নিরীক্ষা করে দেখলেন যে তাঁরা ভারী মৌলের স্থানে সৃষ্টি করেছেন অপেক্ষাকৃত হালকা মৌল - রেডিয়াম এবং বেরিয়াম। হান ধন্ধে পড়লেন- রেডিয়াম খুব বেশি হালকা নয়, কিন্তু বেরিয়ামের পরমাণু-ভর (অ্যাটোমিক মাস) ইউরেনিয়ামের ঠিক অর্ধেক। বেশি হালকা পরমাণু তৈরি করতে নিউট্রনকে ইউরেনিয়ামের নিউক্লিয়াস থেকে এক শতের মতো কণাকে আঘাত করে বের করতে হবে যা বাহ্যত অসম্ভব। হতোদ্যম হান পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফলগুলি পাঠালেন মাইটনারকে। মাইটনার এই ফল আলোচনা করলেন তাঁর ভাগ্নে পদার্থবিদ অটো ফ্রিশ- এর সঙ্গে; তাঁদের বেশি সময় লাগেনি মীমাংসা করার। যখন একটি নিউট্রনকে ইউরেনিয়াম পরমাণুর দিকে ‘ফায়ার’ করা হয়, সেটি নিউক্লিয়াসে শোষিত হয়, পরমাণুটি হয় অস্থির। পরমাণুটির পক্ষে সব থেকে সুবিধাজনক ভাবে সুস্থির হওয়ার একমাত্র উপায় দুই সমান ভাগে ভাগ হয়ে যাওয়া, উত্পাদিত হয় দু’টি বেরিয়াম পরমাণু। এই দু’টি পরমাণুর সম্মিলিত ভর হবে একটি ইউরেনিয়াম পরমাণুর থেকে কম, হৃত ভর পরিবর্তিত হবে শক্তিতে, আইনস্টাইনের বিখ্যাত সমীকরণ E = mC2 দ্বারা।
অনবধানতা হেতু এই আবিষ্কার পরমাণু বোমা নির্মাণের রাস্তা খুলে দিল।
সূত্র : বিংশ শতাব্দীর পদার্থবিদ্যা ও ব্যাক্তিত্ব : ডঃ শঙ্কর সেনগুপ্ত, বেস্টবুকস
সর্বশেষ সংশোধন করা : 1/6/2020