প্রায় সাড়ে চারশো কোটি বছর আগে কোনও একটি অগ্ন্যুৎপাতের ফলে মঙ্গল গ্রহে একটি শিলা তৈরি হয়। পঞ্চাশ কোটি বছর পর কাছকাছি একটি উল্কাপাতের ফলে শিলাটি ছোট ছোট টুকরো হয়ে যায়। শিলাতে কিছু জলও ঢুকে যায়। ১ কোটি ৬০ লক্ষ বছর আগে একটি গ্রহাণু শিলাটির কাছাকাছি এলায় মঙ্গলে ধাক্কা মারে। এর ফলে ওই শিলার টুকরোগুলি মহাকাশে ছড়িয়ে যায়। ১৩ হাজার বছর আগে পর্যন্ত একটি ২ কিলোগ্রাম ওজনের টুকরো সূর্যের কক্ষপথের মধ্যে ছিল। তখন সেটি পৃথিবীর কাছাকাছি এসেছিল। টুকরোটি আন্টার্কটিকার হিমবাহে ধাক্কা খায়। ১৩০০০ বছরে সেটি আন্টার্কটিকার অ্যালান হিল অঞ্চলে পৌঁছয় এবং বরফের মধ্যেই প্রোথিত হয়ে যায়। ১৯৮৪ সালে এই উল্কাটি আবিষ্কার করা হয় এর নাম দেওয়া হয় ALH84001। যে ইতিহাসটি আমরা বললাম, সেটি বহু মানুষ মিলিত ভাবে আবিষ্কার করেছে।
ডেভিড ম্যাকের নেতৃত্বে মার্কিন মহাকাশ বিজ্ঞান সংস্থা নাসার একটি দল কোনও অতীত কালে ওই পাথরে হয়তো প্রাণের অস্তিত্ব ছিল, এমন চিহ্ন পাওয়া গিয়েছে বলে জানায়। ন্যাপথেলিন ধরনের কিছু জৈব অণু ওই পাথরে পাওয়া গিয়েছে (যা মোথবলে ব্যবহৃত হয়)। ব্যাকটেরিয়ার ক্ষয়ের ফলেই ওই ধরনের উপাদান তৈরি হয়। পৃথিবীতে কোনও কোনও ব্যাকটেরিয়া যেমন আয়রন অক্সাইড (চুম্বকত্বের গুণ সম্পন্ন) নির্গত করে, তেমনই সেই উল্কাতেও পাওয়া গিয়েছে। এতে আয়রন সালফাইডও আছে, যেমন কিছু অবাত শ্বসনকারী ব্যাকটেরিয়া উৎপাদন করে থাকে। উল্কাটিতে কিছু কার্বনেট বল মিলেছে, যেগুলি এমন উপাদান থেকে তৈরি হয় যা জীবন্ত বস্তু থেকেই তৈরি হয়। অন্য দিকে পৃথিবীর সকল ব্যাকটেরিয়াই এই বস্তুটির থেকে আকারে ১০০ গুণ বড়। এই উল্কাটিতে কিছু অতি ক্ষুদ্র জীবাশ্মও থাকতে পারে (এক মিলিমিটারের একশো মিলিয়ন ভাগের এক ভাগ আকারের), ন্যানো ব্যাকটেরিয়া এই আকারের হয়।
১৯৬১ সালে আরও একটি উল্কা পাওয়া যায়, যাতে জীবনের চিহ্ন আছে বলে মনে হয়। কিন্তু কিছু দিনের মধ্যেই দেখা যায়, সেগুলি ছাইয়ের দানা । দেখা যায় জীবনের চিহ্নগুলি পৃথিবীরই অংশ। আন্টার্কটিকার উল্কাটির ক্ষেত্রেও এমনটা হতে পারে। সেখানে যে ব্যাকটেরিয়ার চিহ্নগুলি দেখা যাচ্ছে তা হয়তো পৃথিবীরই অংশ। ১৯৭৬ সালে ভাইকিং স্পেসক্রাফ্ট মঙ্গলে এমন কোনও ব্যাকটেরিয়ার সন্ধান করতে ব্যর্থ হয়। কিন্তু হয়তো সেটা জীবনের অস্তিত্ব নেই-মঙ্গলের এমন কোনও জায়গায় পৌঁছেছিল। অথবা হয়তো কোটি কোটি বছর আগে মঙ্গলে ব্যকটেরিয়ার অস্তিত্ব ছিল, এখন নেই।
সর্বশেষ সংশোধন করা : 5/28/2020