আলেসান্দ্রো গিউসিপ্পে এন্টনিও আনাস্তাসিও ভোল্টা। তিনি এক জন ইতালিয়ান পদার্থবিজ্ঞানী। বিদ্যুৎশক্তি উদ্ভাবনে তিনি পথিকৃৎ ছিলেন। অষ্টাদশ শতকে প্রথম ব্যাটারি বা বিদ্যুৎ কোষ আবিষ্কারের মাধ্যমে তিনি চিরস্মরণীয় হয়ে রয়েছেন। তিনি কোমোয় জন্মগ্রহণ করেন। সেখানকার এক সরকারি বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন। ১৭৭৪ সালে কোমোর রয়্যাল স্কুলে পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। এর পরের বছর তিনি ইলেস্ট্রোফোরাস আবিষ্কার করেন যা থেকে তিনি স্থির বিদ্যুৎ উত্পাদনে সক্ষম হয়েছিলেন। তাঁর নামানুসারে এসআই একক পদ্ধতিতে বৈদ্যুতিক বিভবের এককের নাম রাখা হয়েছে ভোল্ট। সুইস সীমান্তের কাছাকাছি বর্তমান ইতালির উত্তরাঞ্চলীয় শহর কোমোয় ১৭৪৫ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি ভোল্টা জন্মগ্রহণ করেন। ইলেক্ট্রোফরাসের মানোন্নয়নে কাজ করেন এবং এর সাহায্যে স্থির বিদ্যুৎ তৈরি করেন। এ আবিষ্কারটি ছিল ভীষণ ব্যয়বহুল যা একই পদ্ধতিতে ১৭৬২ সালে সুইডিশ যোহন উইকের মেশিন পরিচালনার ব্যয়কে হার মানিয়েছিল। গ্যালভানিক ক্রিয়া সংক্রান্ত ব্যাপারে লুইজি গ্যালভানির সঙ্গে মতপার্থক্যের কারণে আলেসান্দ্রো ভোল্টা ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে আধুনিক ব্যাটারির প্রাচীন সংস্করণ ভোল্টার স্তূপ তৈরি করেন। ভোল্টা আবিষ্কার করেন যে, বিদ্যুৎ উত্পাদনের জন্য সব চেয়ে কার্যকর ধাতব পদার্থ হচ্ছে দস্তা ও রূপা। ১৮৮০-এর দশকে আন্তর্জাতিক বৈদ্যুতিক সম্মেলন বৈদ্যুতিক বিভবের (শক্তির) একক হিসেবে ভোল্টকে অনুমোদন করে।
১৭৭৬-৭৮ সালের মধ্যে রসায়নশাস্ত্রে গ্যাস বিষয়ে অধ্যয়ন করেন। তিনি মিথেন গ্যাস আবিষ্কার করেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন কর্তৃক একটি লেখা পত্রিকায় পড়ে তিনি ইতালির বিভিন্ন এলাকায় অনুসন্ধান কর্ম অব্যাহত রাখেন। অতঃপর নভেম্বর, ১৭৭৬ সালে ম্যাগিওর হরদে মিথেনের দেখা পান। এর পর ১৭৭৮ সালে মিথেনকে জমাটবদ্ধ করতে সক্ষম হন।
তাঁর কাজের স্বীকৃতি হিসেবে ১৮০১ সালে তাঁকে কাউন্ট হিসেবে মনোনীত করেছিলেন নেপোলিয়ন বোনাপার্ট। ইতালির ১০ হাজার লিরা মানের মুদ্রায় তাঁর ছবি ছাপা হতো। ইউরো লিরার জায়গা নেওয়ার পর এই মুদ্রাটি এখন আর চালু নেই। ১৮১৯ সালে তিনি অবসর নেন। বসবাস করতে শুরু করেন কোমোর কামনাগোতে। এই জায়গাটিকে এখন তাঁর নামানুসারে কামনাগো ভোল্টা রাখা হয়েছে। ১৮২৭ সালের ৫ মার্চ এই মহান বিজ্ঞানীর মৃত্যু হয়। তাঁর স্মৃতিতে কোমো শহরে গড়ে উঠেছে একটি স্মৃতি জাদুঘর। ইতালির ভাষায় যাকে বলা হয় টেম্পিও ভোল্টিয়ানো। ইংরেজিতে ভোল্টা টেম্পল। একটি বাগানে লেকের পাশে এটি গড়ে তোলা হয়েছে। ভোল্টা তাঁর বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ব্যবহার করতেন- এমন অনেক কিছু সেখানে সংরক্ষিত আছে।
সূত্র : বিশ্বের সেরা ১০১ বিজ্ঞানীর জীবনী, আ. ন. ম. মিজানুর রহমান পাটওয়ারি, মিজান পাবলিশার্স, ঢাকা
সর্বশেষ সংশোধন করা : 4/28/2020