প্রাচীন অঙ্কশাস্ত্রবিদ ইউক্লিড যিশুখ্রিস্টের জন্মের বহু আগে গ্রিসে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর জন্ম ও জীবন সম্পর্কে প্রামাণ্য তথ্য পাওয়া যায় না। অনুমান করা হয়, যিশুখ্রিস্টের জন্মের প্রায় ৩০০ বছর আগে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। ইউক্লিডের 'জ্যামিতিক সূত্র'সমূহ সে সময় শুধু নয়, আজও স্কুল কলেজে পড়ানো হয়ে থাকে, কারণ সকল জ্যামিতিক ধারণাই তাঁর সূত্রের উপর ভিত্তি করে তৈরি। ইউক্লিড মহাজ্ঞানী প্লেটোর বিখ্যাত স্কুলে পড়াশোনা করেছেন বলে প্রচলিত আছে। রাজনৈতিক কারণে প্লেটোর স্কুলটি স্থানান্তরিত করা হয়েছিল মিশরের প্রাচীন সমুদ্রবন্দর আলেকজান্দ্রিয়ায়। এই স্কুলে ছিল এক বিশাল ও সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার। এই গ্রন্থাগারে বসে ইউক্লিড পড়াশোনা ও গবেষণা করেন।
ইউক্লিডের অঙ্কশাস্ত্র প্রথমে আরবি ভাষায় রচিত হয়েছিল। পরে লাতিন ভাষায় অনুদিত হয়েছিল।তার লেখা গ্রন্থগুলির মধ্যে মাত্র তিনটির সন্ধান পাওয়া গিয়েছে এগুলো, ডাটা, অপটিক্স ও এলিমেন্টস। এলিমেন্টস বইটি মোট ১৩ খণ্ডে প্রকাশিত হয়েছিল। এই বইটি আলেক্সানড্রিয়ায় প্রায় খ্রিস্টপূর্ব ৩০০ সালে রচিত। এতে রয়েছে সংজ্ঞা, স্বতঃসিদ্ধ, সূত্র ও অনুসিদ্ধান্ত এবং বিভিন্ন প্রস্তাবনার গাণিতিক প্রমাণ। এই ১৩টি বইয়ে অন্তর্ভূক্ত রয়েছে ইউক্লিডিয় জ্যামিতি এবং সংখ্যাতত্ত্বের প্রাচীন গ্রিক সংস্করণ।
ইউক্লিডকে জ্যামিতি শাস্ত্রের জনক বলা হয়। তাঁর ওপর গবেষণা করে জার্মান অঙ্কশাস্ত্রবিদ বার্নহার্ড রাইমান আবিষ্কার করেন 'ইউক্লিডিয়ান জিওম্যাট্রি'। আইনস্টাইনও ইউক্লিডের জ্যামিতিক সূত্রের সাহায্যে আবিষ্কার করেন 'আপেক্ষিকতাবাদ'।
আলেকজান্দ্রিয়ার সম্রাট টলেমিও ছিলেন ইউক্লিডের গুণমুগ্ধ ভক্ত। কিন্তু সম্রাটের কাছে ইউক্লিডের জ্যামিতিক সূত্রগুলো ভীষণ জটিল বলে মনে হত। তাই তিনি ইউক্লিডকে জ্যামিতি শেখার বা বোঝার শর্টকার্ট পথ জানতে চেয়েছিলেন। ইউক্লিড সবিনয়ে সম্রাটকে বলেছিলেন— "মহারাজের জন্যও জ্যামিতি শেখার কোনও সহজ পথ তৈরি হয়নি। জ্ঞানার্জনের জন্য কোনও শর্টকার্ট পথ নেই।"
ইউক্লিডের এই জবাবটি পরবর্তী সময়ে প্রবচনে পরিণত হয়েছে। যথার্থই জ্ঞানার্জনের জন্য কোনও শর্টকার্ট পথ নেই। জ্ঞানার্জনের জন্য চাই অসীম ধৈর্য, অনুশীলন, অধ্যবসায়, মনোযোগ।
সূত্র : বিশ্বের সেরা ১০১ বিজ্ঞানীর জীবনী, আ. ন. ম. মিজানুর রহমান পাটওয়ারি, মিজান পাবলিশার্স, ঢাকা
সর্বশেষ সংশোধন করা : 12/13/2019