পরিবারের সকলে মিলে দল বেঁধে স্টুডিওতে যাচ্ছে ছবি তুলতে, সত্তর, আশি কিংবা নব্বইয়ের দশকে আমাদের দেশে হামেশাই চোখে পড়ত এই চিত্র। এখন ডিজিটাল ক্যামেরা সহজলভ্য হয়ে যাওয়ায় ছবি তোলাটা আর কোনও উত্সবের উপলক্ষ নয়। সঙ্গে জুড়ে গিয়েছে মোবাইল ক্যামেরা। যার যখন ইচ্ছে হচ্ছে, সেই মুহূর্তকেই বন্দি করে রাখতে পারছে ছোট্ট একটি মেমোরি কার্ডেই। কিন্তু যদি ভাব আজ থেকে একশো বছর বা তারও আগের কথা, সেখানে কিন্তু দেখতে হবে অন্য চিত্র। তখন মাত্রই আবিষ্কার হয়েছে ছবি তোলার ফিল্ম। জীবনের স্মৃতি বন্দি রাখার উপায় তখন ছিল বেশ খরুচে। আর ছবি তোলাটাও ছিল এক এলাহি কারবার!
১৮৮৮ সালে মার্কিন উদ্ভাবক জর্জ ইস্টম্যান যখন প্রথম বহনযোগ্য ‘কোডাক’ ক্যামেরা বাজারে আনলেন, তখন তার দাম ছিল ২৫ ডলার। এতে প্রায় ১০০ ছবি তোলার মতো ফিল্ম থাকত। বহনযোগ্য হলেও বেশ বড় ট্রাইপডের ওপর বসাতে হত ক্যামেরাটিকে। আর ফিল্ম শেষ হলে ছবি বানাতে ক্যামেরাসমেত পুরো সেটটিকেই পাঠাতে হত কোডাকের ল্যাবরেটরিতে। ফলে ছবি তোলাটা যেমন পরিণত হয়েছিল ধনীদের শখে, তেমনি সাধারণ ব্যবহারের ক্ষেত্রেও এটি ছিল অনুপযুক্ত।
১৯০০ সালে ক্যামেরা শিল্পে যুগান্তকারী এক বিপ্লব ঘটিয়ে ফেললেন ইস্টম্যান। ছোটখাটো গড়নের সত্যিকারের বহনযোগ্য এক ক্যামেরাই তৈরি করে ফেললেন তিনি। এর নাম দেওয়া হল ‘ব্রাউনি’। কার্ডবোর্ড দিয়ে তৈরি সেই ক্যামেরাটিই প্রথম সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের ছবি তোলার স্বপ্নকে সত্যিতে পরিণত করে। ফিল্মসহ ক্যামেরাটির দাম ছিল মাত্র এক ডলার! আর ফিল্ম থেকে ছবি বানাতে খরচ হত আরও দুই ডলার।
রয়্যাল ফটোগ্রাফিক সোসাইটির প্রেসিডেন্ট ড. মাইকেল পিচার্ডের মতে এই ক্যামেরাটিই বিশ্বব্যাপী সকল মানুষের স্মৃতিকে অমর করে রাখতে সহায়তা করেছিল। ‘এর দাম ছিল মাত্র এক ডলার। অর্থাৎ নিজের জীবনের স্মরণীয় মুহূর্তগুলোকে অক্ষয় করে রাখতে আপনার খরচ হত যত্সামান্য। ক্যামেরাটি চালাতে কোন বিশেষ প্রশিক্ষণেরও প্রয়োজন হত না। একটি শিশুও এটি চালাতে পারত। এই স্বল্পমূল্য ও সহজ ব্যবহার পদ্ধতির কারণেই ব্রাউনি ক্যামেরা মানুষের মাঝে বেশি জনপ্রিয় হয়েছিল’।
সময়ের আবর্তনে আজ দুষ্প্রাপ্য হয়ে গেছে ব্রাউনি। যদিও বিশ্বের কোথাও কোথাও এখনও ব্যবহার হয় এটি। তাই মানুষের স্মৃতি বন্দির জাদুকর আজও উজ্জ্বল মানুষের স্মৃতিতে।
সূত্র : বিশ্বের সেরা ১০১ বিজ্ঞানীর জীবনী, আ. ন. ম. মিজানুর রহমান পাটওয়ারি, মিজান পাবলিশার্স, ঢাকা
সর্বশেষ সংশোধন করা : 7/5/2020