জলের অপর নাম জীবন। কারণ জল ছাড়া আমাদের চলে না। তা হলে আগুনের অপর নাম কী ? আগুন ছাড়াও কি আমাদের চলে ? প্রায় চার লাখ বছর ধরে মানুষ আগুন ব্যবহার করে আসছে। কিন্তু আগুন জ্বালানোর সহজ পদ্ধতিটি আবিষ্কার হয়েছে আজ থেকে মাত্র একশো পঞ্চাশ-ষাট বছর আগে। আগুন জ্বালানোর এই সহজ পদ্ধতিটি কী, বল তো?
হ্যাঁ ঠিকই ধরেছ, দেশলাই ।
দেশলাই আবিষ্কার করেন ইংরেজ বিজ্ঞানী রবার্ট বয়েল (১৬৮০ খ্রি.)। তিনিই প্রথম লক্ষ করেন, ফসফরাস প্রলেপ দেওয়া খসখসে কোনও কাগজে যদি গন্ধকের প্রলেপ দেওয়া একটি কাঠি ঘষা যায়, তবে তাতে আগুন ধরে। হামবুর্গের রসায়নবিদ হেনিগ ব্র্যান্ড ১৬৬৯ খ্রিস্টাব্দে ফসফরাস আবিষ্কার করেন। তাঁর এই আবিষ্কার ছিল গুরুত্বপূর্ণ। কারণ তাঁর আবিষ্কারের ফলেই দেশলাই আবিষ্কারের পদার্থ এল।
১৬৮০ সালে রবার্ট বয়েল দেশলাই আবিষ্কারের পরও এক শতাব্দীর উপরে বিষয়টি নিয়ে কেউ গবেষণা করেননি। কারণ সে সময় ফসফরাস তৈরি করা সহজসাধ্য ছিল না। ১৮০৫ সালে ফরাসি বিজ্ঞানী জ্যাঁ সাঁসেল দেখান যে, কাঠির ডগায় পটাশিয়াম ক্লোরেট, চিনি ও আঠার মিশ্রণ লাগিয়ে কাঠিটিতে সালফিউরিক অ্যাসিড লাগালে আগুন ধরে যায়।
দেশলাই-এর ডগায় উৎপন্ন শিখা যাতে এর কাঠিতে সহজে ধরতে পারে সে জন্য ব্যবহৃত হত কাঠির ওপর গন্ধকের প্রলেপ। কিন্তু গন্ধকের ব্যবহার ব্যয়সাপেক্ষ। তাই এখন গন্ধকের বদলে প্যারাফিন ব্যবহার করা হচ্ছে।
দেশলাইয়ে সাদা ফসফরাস ব্যবহারেও দেখা গেল বিপত্তি। সাদা ফসফরাস মানব দেহের ওপর বিষের মতো ক্রিয়া করে, এ কথা জানার আগেই ফসফরাসের বিষক্রিয়ায় মারা যায় দিয়াশলাই কারখানার বহু শ্রমিক।
এ সমস্যার সমাধান পাওয়া যায় প্রথম বিশ্বযুদ্ধের মাত্র কিছুকাল আগে। ১৯১১ সালে একটি আমেরিকান কোম্পানি সাদা ফসফরাস-এর বিকল্প হিসেবে ব্যবহারের উপযুক্ত ফসফরাস ও গন্ধকের একটি নির্বিষ যৌগ উদ্ভাবন করতে সক্ষম হয়। বর্তমান ঘর্ষণ দিয়াশলাইয়ে প্রত্যক্ষ ভাবে রবার্ট বয়েল জড়িত না থাকলেও পরোক্ষ ভাবে এটা তাঁরই অবদান। তাই তাঁকেই দেশলাইয়ের আবিষ্কারক বলা হয়।
সূত্র : বিশ্বের সেরা ১০১ বিজ্ঞানীর জীবনী, আ. ন. ম. মিজানুর রহমান পাটওয়ারি, মিজান পাবলিশার্স, ঢাকা
সর্বশেষ সংশোধন করা : 6/25/2020