অসমীয়া   বাংলা   बोड़ो   डोगरी   ગુજરાતી   ಕನ್ನಡ   كأشُر   कोंकणी   संथाली   মনিপুরি   नेपाली   ଓରିୟା   ਪੰਜਾਬੀ   संस्कृत   தமிழ்  తెలుగు   ردو

স্যার চন্দ্রশেখর ভেঙ্কটরমন

স্যার চন্দ্রশেখর ভেঙ্কটরমন

ভারতীয় উপমহাদেশের যে কোনও বিজ্ঞান-শিক্ষার্থীই স্যার চন্দ্রশেখর ভেঙ্কটরমন বা সি ভি রমনের নাম শুনেছেন। তাঁর আবিষ্কৃত ‘রমন এফেক্ট বা ‘রমন-প্রভাব’ পদার্থবিজ্ঞানের জগতে এক আশ্চর্য মাইলফলক হয়ে আছে ১৯২৮ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে – যে দিন এই আবিষ্কারের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করা হয়েছিল। রমন-প্রভাব আবিষ্কারের জন্য সি ভি রমন পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরষ্কার পেয়েছেন ১৯৩০ সালে। শুধু ভারতীয় উপমহাদেশ নয়, সমগ্র এশিয়ার মধ্যে তিনিই হলেন বিজ্ঞানে প্রথম নোবেল পুরষ্কার বিজয়ী। তাঁর নোবেল-বিজয়ী গবেষণার সবটুকুই সম্পন্ন হয়েছিল কলকাতার ‘ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অব সায়েন্স’-এর ছোট্ট একটা গবেষণাগারে। এই গবেষণাগারের যন্ত্রপাতি সংযোজন, সংরক্ষণ ও পরীক্ষণের কাজে তাঁকে যিনি সারাক্ষণ সহায়তা করেছিলেন তাঁর নাম আশুতোষ দে – আশুবাবু নামেই যিনি পরিচিত ছিলেন।

আশ্চর্যের বিষয় হল এই আশুবাবু জীবনে কোনও দিন বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে পড়াশোনার সুযোগ পাননি। গবেষণার ক্ষেত্রে রমনও নিজেই নিজের পথ খুঁজে নিয়েছিলেন। আর তাঁর এই পথ খোঁজা শুরু হয়েছিল একেবারে ছোটবেলা থেকেই।

১৯১৪ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯১৭ সালে স্যার আশুতোষ মুখার্জি সি ভি রমনকে আহ্বান করলেন বিজ্ঞান কলেজের পদার্থবিজ্ঞানের ‘পালিত প্রফেসর’’পদে যোগ দেওয়ার জন্য। ১৯১৭ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে যোগ দিয়ে প্রফেসর সি ভি রমনের নতুন জীবন শুরু হল। টানা পনেরো বছর এই পদে ছিলেন তিনি।

১৯২১ সালে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে অনুষ্ঠিত হল ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি কংগ্রেস। স্যার আশুতোষ মুখার্জির বিশেষ অনুরোধে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি হিসেবে সেখানে যোগ দিলেন রমন। এটাই রমনের প্রথম বিদেশ ভ্রমণ। কয়েক দিনের এই সংক্ষিপ্ত ভ্রমণেই তাঁর সঙ্গে দেখা হল থমসন, রাদারফোর্ড, ব্র্যাগ সহ আরও অনেক বিশ্ববিখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানীর।

জাহাজে করে লন্ডনে যাওয়া আসার পথে বিশাল সমুদ্রের রূপ দেখে মুগ্ধতার পাশাপাশি বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধিৎসায় ব্যস্ত হয়ে পড়ল রমনের মন। গভীর সমুদ্রের রঙ দেখে তাঁর মনে প্রশ্ন জাগল এই ঘন নীল রঙের প্রকৃত রহস্য কী? ইতিপূর্বে লর্ড রেলেই আকাশের নীল রঙের বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব প্রতিষ্ঠা করেছেন। বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন অণুর সাথে আলোর কণার বিক্ষেপণের ফলে নীল বর্ণের আলোক তরঙ্গ বেশি দেখা যায় বলেই দিনের বেলায় আকাশের রঙ নীল। সমুদ্রের নীল রঙ সম্পর্কে লর্ড রেলেইর তত্ত্ব বেশ সরল। তাঁর মতে সমুদ্রের রঙ আসলে সমুদ্রের জলে আকাশের রঙের প্রতিফলন। রমন লর্ড রেলেইর এ তত্ত্ব ভুল প্রমাণিত করেন জাহাজে বসে করা কয়েকটি সহজ পরীক্ষার মাধ্যমে। একটি পোলারাইজিং প্রিজমের মাধ্যমে সমুদ্রের জলে আকাশের প্রতিফলন আড়াল করার পরেও দেখা গেল সমুদ্রের জলের রঙ ঘন নীল – যেন জলের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসছে নীল রঙ। ফলে এই সিদ্ধান্তে আসা যায় যে সমুদ্রের জলের নীল রঙ আকাশের রঙের প্রতিফলন নয়, জলে আলোককণার বিক্ষেপণের ফল। তিনি সমুদ্রের বিভিন্ন গভীরতা থেকে জল সংগ্রহ করে বোতল ভর্তি করে নিয়ে আসেন কলকাতায়। প্রিজম, টেলিস্কোপ ইত্যাদি নিয়ে গভীর সমুদ্রে রঙের খেলা পর্যবেক্ষণ করতে করতে অনেক উপাত্ত সংগ্রহ করেন রমন। কলকাতায় ফিরে এসে তরল পদার্থে এক্স-রে এবং দৃশ্যমান আলোকের বিক্ষেপণ সংক্রান্ত গবেষণায় মেতে ওঠেন তিনি। সেই গবেষণার ধারাবাহিকতাতেই আবিষ্কার হয় রমন এফেক্ট।

রমন এফেক্ট আলোকতরঙ্গের অজানা পথ খুলে দিয়েছে। শক্তির স্তর এবং অণু ও পরমাণুর গঠন বুঝতে অনেক সহায়তা করেছে। পদার্থবিজ্ঞানের অনেক শাখায় রমন এফেক্ট কাজে লাগছে। জীববিজ্ঞান, রসায়ন, চিকিৎসাবিজ্ঞানেরও অনেক শাখায় রমন এফেক্ট কাজে লাগিয়ে অনেক নতুন নতুন গবেষণা হচ্ছে।

১৯২৯ সালে ব্রিটিশ সরকার সি ভি রমনকে নাইট খেতাব দিলে রমনের নামের আগে ‘স্যার’ যুক্ত হয়। স্যার সি ভি রমন দ্রুত হয়ে ওঠেন ভারতীয় বিজ্ঞানের জগতের জীবন্ত কিংবদন্তী।

সাধারণত বিজ্ঞানের যে কোনও আবিষ্কারের পর অনেক বছর লেগে যায় তার স্বীকৃতি পেতে। বিশেষ করে নোবেল পুরষ্কারের মতো পুরস্কার পাওয়ার ক্ষেত্রে। কিন্তু রমনের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা ঘটে গেল মাত্র দু’ বছরের মধ্যেই। ১৯৩০ সালেই ‘রমন ইফেক্ট’ আবিষ্কারের জন্য নোবেল পুরস্কার পেলেন স্যার সি ভি রমন।

১৯৫৪ সালে রমনকে ভারতরত্ন উপাধি দেওয়া হয়। ১৯৫৭ সালে দেওয়া হয় লেনিন শান্তি পুরষ্কার। জীবনের শেষ কয়েকটি বছরে তিনি সব ধরনের সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ ছিন্ন করে পুরোপুরি স্বাধীন হয়ে যেতে চেয়েছিলেন। ১৯৬৮ সালে রয়্যাল সোসাইটির ফেলোশিপ ফিরিয়ে দেন। রয়্যাল সোসাইটির ইতিহাসে এটা ছিল একটা ব্যতিক্রমী ঘটনা।

১৯৭০ সালের ২১শে নভেম্বর রমনের মৃত্যু হয়।

রমন এফেক্ট আবিষ্কারের দিনটি স্মরণে ২৮শে ফেব্রুয়ারি ভারতের জাতীয় বিজ্ঞান দিবস ঘোষণা করা হয়। ১৯৮৮ সাল থেকে প্রতি বছর এ দিনটিতে সারা ভারতের সবগুলো বিজ্ঞান গবেষণাগার সবার জন্য খুলে দেওয়া হয়। জাতীয় পর্যায়ে বিজ্ঞানের প্রচার ও প্রসারে এ দিনটির ভূমিকা অনেক ।

সূত্র : বিশ্বের সেরা ১০১ বিজ্ঞানীর জীবনী, আ. ন. ম. মিজানুর রহমান পাটওয়ারি, মিজান পাবলিশার্স, ঢাকা

সর্বশেষ সংশোধন করা : 5/23/2020



© C–DAC.All content appearing on the vikaspedia portal is through collaborative effort of vikaspedia and its partners.We encourage you to use and share the content in a respectful and fair manner. Please leave all source links intact and adhere to applicable copyright and intellectual property guidelines and laws.
English to Hindi Transliterate