ক্রিসমাসের মতোই ইস্টারের বিভিন্ন ধারাতেও খ্রিস্টধর্মের নানা বিবর্তনের, বিশেষত প্রোটেস্ট্যান্ট সংস্কারের প্রভাব পড়ে। প্রেসবিটারিয়ান পিউরিটানদের মতো কোনও কোনও শাখা এই উৎসবকে খ্রিস্টধর্ম-বিরোধী কুসংস্কার মনে করলেও অধিকাংশ ধারাতেই প্রাচীন প্রথার অধিকাংশই বজায় রাখা হয়। আর এখন তো ক্রিসমাসের মতোই ইস্টার মানে বিরাট বাজার, সেটা দোকানে দোকানে স্তূপীকৃত জেলিবিন, চকলেট-ডিম, মার্শমেলো-মুরগি আর ‘ইস্টার বানি’ দেখলেই টের পাওয়া যায়। বিভিন্ন লোকাচার, পেগান ঐতিহ্য এবং আধুনিক জনপ্রিয় প্রথাকে এই পবিত্র দিনটিতে ধর্ম ও ধর্মাচরণের সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে। মার্কিন সংস্কৃতিতে যেমন সান্টা ক্লস, প্রায় সে রকম ভাবেই ইস্টার বানি এক জনপ্রিয় উপহার হিসেবে নিজের জায়গা করে নিয়েছে। ইস্টার মানডে’তে হোয়াইট হাউসের লনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ইস্টার এগ গড়িয়ে দেওয়ার একটি খেলার আয়োজন করেন, শিশুরা তুমুল উৎসাহে সেই উৎসবে যোগ দেয়।
বার্মুডায় ইস্টারের সময় ঘুড়ি ওড়ানোর প্রতিযোগিতা হয়, যাজকরা বলেন, এই উৎসবের মধ্য দিয়ে খ্রিস্টের স্বর্গারোহণের উদযাপন হয়। এই সময় ওখানে ফিশ কেক খাওয়ার খুব ধুম আছে। বাঙালির দারুণ লাগত। জামাইকাতে গুড ফ্রাইডের দিন থেকে ঘরে ঘরে প্রধান কাজ হয়ে দাঁড়ায় কিসমিস দেওয়া কেক তৈরি করা, সেই কেকের মাথায় ছুরি দিয়ে একটা কাটাকুটি করলেই জন্ম নেয় প্রসিদ্ধ ‘হট ক্রস বান’। পূর্ব ইউরোপের কিছু দেশে এই সময় পোতিকা নামে এক বিশেষ বাদাম-কেক বানানো হয়, আবার পোল্যান্ডে তৈরি হয় অতি উৎকৃষ্ট সাদা সসেজ।
শীতার্ত ইউরোপে বসন্তসমাগমে মানুষের মনে পড়ে, এ বার স্নান করার সময়। অতএব হাঙ্গারি ও ভূতপূর্ব যুগোস্লাভিয়ার দেশগুলিতে ঠকঠক করে কাঁপতে থাকা মানুষের গায়ে ঠান্ডা জল ঢালা হয়। অতীতে পুরুষরা এই সময় নানান সুগন্ধি বা সুরভিত জল দিয়ে মেয়েদের মনোরঞ্জন করতেন। তবে সব চেয়ে চমকপ্রদ হল চেক এবং স্লোভাক দেশগুলিতে প্রচলিত একটি প্রথা। সেখানে পুরুষরা সত্যি সত্যিই মেয়েদের পেটায়, তবে উইলোর ডাল কিংবা রঙিন ফিতে দিয়ে। সমাজমানসে এই রীতি এতই দৃঢ়মূল যে, ইস্টার হুইপ দিয়ে না মারলে মেয়েরা নাকি ক্ষুণ্ণ হত! আশা করা যায়, এই ঐতিহ্যের দ্রুত অবসান হচ্ছে। তবে মানুষ একটা ক্ষমতা কোনও দিন হারাবে না। যে কোনও ধর্মীয় অনুষ্ঠান, তা সে যত ভাবগম্ভীর বা বেদনাময়ই হোক, তাকে উপলক্ষ করে সে নিজের বেঁচে থাকাকে উদযাপন করে চলবে। উচ্ছ্বসিত, উৎফুল্ল, উষ্ণ উদযাপন।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা, ৩ এপ্রিল ২০১৫
সর্বশেষ সংশোধন করা : 10/10/2019