অসমীয়া   বাংলা   बोड़ो   डोगरी   ગુજરાતી   ಕನ್ನಡ   كأشُر   कोंकणी   संथाली   মনিপুরি   नेपाली   ଓରିୟା   ਪੰਜਾਬੀ   संस्कृत   தமிழ்  తెలుగు   ردو

মহাকাশে যুদ্ধে নামছে ভারত! সেনাপতি ‘কেলভিন কুল’

মহাকাশে যুদ্ধে নামছে ভারত! সেনাপতি ‘কেলভিন কুল’

আজ সকাল থেকেই মহাকাশে বড় যুদ্ধে  ভারত। স্বাধীনতার ৭০ বছরের মাথায়। যে যুদ্ধের সেনাপতি এক বাঙালি। যাঁর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে সেই ‘মহাকাশ যুদ্ধে’র কন্ট্রোল রুমের ‘চাবি’!

আর মহাকাশে ভারত সেই যুদ্ধটা লড়তে নামছে পৃথিবী থেকে সাড়ে ছ’শো কিলোমিটার ওপরে। পশ্চিমি দুনিয়ার বুকের ছাতি বাড়িয়ে দেওয়া আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন (আইএসএস) যতটা ওপরে রয়েছে, তার দ্বিগুণ উচ্চতায়।

astrosat-1

সোমবার ভারতীয় সময় সকাল দশটায় (সাড়ে চারটে ইউটিসি) শুরু হচ্ছে সেই যুদ্ধ। মহাকাশের অতল অন্ধকারে তার ‘গোয়েন্দাগিরি’ শুরু করছে ‘অ্যাস্ট্রোস্যাট’। নামছে একেবারেই অভিনব পদ্ধতিতে এই ব্রহ্মাণ্ডের অজানা, অচেনা বস্তু খুঁজে বের করার কাজে। শুরু হচ্ছে তার ‘সায়েন্স অপারেশন’।

অ্যাস্ট্রোস্যাটের সায়েন্স অপারেশনচালাবে যে যন্ত্রগুলি।

ভারতের ১৫০০ কেজি ওজনের এই গর্বের উপগ্রহটিকে মহাকাশে পাঠানো হয়েছিল ছ’মাস আগে, গত বছরের ২৮ সেপ্টেম্বর। তার পর তার যন্ত্র-টন্ত্রগুলো ঠিক ভাবে কাজ করছে কি না, তা দেখে-বুঝে নেওয়ার জন্য একের পর এক ‘প্র্যাকটিস ম্যাচ’ খেলে চলছিল ‘অ্যাস্ট্রোস্যাট’। চলছিল তার ‘শরীর’কে পুরোপুরি ফিট রাখার কায়দা-কসরৎ। হাতে এসে গিয়েছে ফিটনেস সার্টিফিকেট’! বিষুব রেখার দিকে ছয় ডিগ্রি হেলে থেকে সেকেন্ডে সাড়ে সাত কিলোমিটার গতিবেগে আমাদের এই বাসযোগ্য গ্রহটিকে বৃত্তাকার কক্ষপথে চক্কর মারতে মারতে এই ব্রহ্মাণ্ডে একেবারেই নতুন একটি পদ্ধতিতে গোয়েন্দাগিরি চালাবে ‘অ্যাস্ট্রোস্যাট’। যে ভাবে এত দিন নাসা বা ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি (ইএসএ) কেন, বিশ্বের কোনও মহাকাশ গবেষণা সংস্থাই চালাতে পারেনি অনুসন্ধান। দেখা হবে আলোক-তরঙ্গের একটি অজানা প্রান্ত আলট্রা-ভায়োলেট থেকে এক্স-রে, এমনকী সফ্‌ট গামা-রে পর্যন্ত বিশাল একটা এলাকা। এক অ্যাংস্ট্রমের দশ ভাগের এক ভাগ থেকে ৫ হাজার অ্যাংস্ট্রম পর্যন্ত। মানে, একটা সুবিশাল এলাকার অচেনা দেশে। অজানার সন্ধানে।

যাঁকে তাঁর সহকর্মীরা বলেন ‘কেলভিন কুল’ (মহাকাশের মতো ঠাণ্ডা স্বভাবের মানুষ), যুদ্ধের সেই সেনাপতি, মালদহের ছেলে দীপঙ্কর ভট্টাচার্য পুণের ইন্টার-ইউনিভার্সিটি সেন্টার ফর অ্যাস্ট্রোনমি অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজিক্সের (আই-ইউকা) সিনিয়র প্রফেসর। জেলায় জন্মে আর কলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর স্তরের পড়াশোনা শেষ করে দীপঙ্কর তাঁর ডক্টরেট ডিগ্রিটি নিতে চলে যান বেঙ্গালুরুর ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্সে (আইআইএস)। তার পর তাঁর প্রথম পোস্ট-ডক্টরাল থিসিস আমস্টারডাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। আর দ্বিতীয় পোস্ট-ডক্টরাল থিসিসটি স্বীকৃতি পেয়েছে ন্টা বারবারার ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের। বেঙ্গালুরুর রমন রিসার্চ ইনস্টিটিউটে (আরআরআই) বছর কুড়ি কাটানোর পর এখন দীপঙ্করই ‘অ্যাস্ট্রোস্যাটে’র মতো ভারতের ‘ফ্ল্যাগশিপ স্পেস প্রজেক্ট’-এর যাবতীয় ‘সায়েন্স অপারেশনে’র চেয়ারপার্সন। এক এবং একমাত্র ব্যক্তিত্ব।

মহাকাশের ‘লাস্ট ফ্রন্টিয়ারে’ ভারতের এই ‘প্রেস্টিজ ফাইটে’র প্রধান হাতিয়ার ‘অ্যাস্ট্রোস্যাটে’র টার্গেট কী কী?

পুণে থেকে দীপঙ্কর আনন্দবাজারকে বলছেন, ‘‘আপাতত ঠিক হয়েছে পাঁচ বছর ধরে চালানো হবে ওই গবেষণা। তাতে আমরা আলোক-তরঙ্গের এত বড় যে একটা এলাকা জুড়ে এই ব্রহ্মাণ্ডে গোয়েন্দাগিরি চালানোর সুযোগটা পাচ্ছি, বিশ্বের আর কোনও মহাকাশ গবেষণা সংস্থাই এর আগে এই সুযোগটা পায়নি। কোনও তারাকে যখন কোনও ব্ল্যাক হোল গিলে খেতে শুরু করে, তখন তার ‘অ্যাক্রিশন ডিস্কে’ তারার শরারের যে অংশগুলো ছিটকে ছিটকে এসে পড়ে, তা থেকে তৈরি হয় জোরালো আলোক-তরঙ্গের। তৈরি হয় আলট্রা-ভায়োলেট আর এক্স-রে। যে কোনও আলোই আমাদের পথ দেখায় অন্ধকারে। তাই ওই আলোও আমাদের সামনে তুলে ধরবে অনেক অজানা, অচেনা ব্ল্যাক হোলকে। জানাবে, তারা আদতে সত্যি-সত্যি কতটা ভারী। জানাবে, তারা আসলে কতটা গতিতে ঘুরপাক খাচ্ছে। আর কতটা জোরে টেনে নিচ্ছে, গিলে খাচ্ছে কোন কোন তারাদের। যার থেকে হদিশ পাওয়া যাবে অজানা, অচেনা শ্বেত বামন নক্ষত্র আর নিউট্রন নক্ষত্রদেরও। এই আলট্রা-ফাস্ট ব্রাইটনেসে গোটা ব্রহ্মাণ্ডের ওপর গোয়েন্দাগিরি চালানোর সুযোগ এত দিন নাসা বা ইএসএ-র মতো সংস্থার উপগ্রহগুলোও পায়নি। আমাদের এই গর্বের প্রকল্পে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে মুম্বইয়ের টাটা ইনস্টিটিউট অফ ফান্ডামেন্টাল রিসার্চ (টিআইএফআর), বেঙ্গালুরুর ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ অ্যাস্ট্রোফিজিক্স (আইআইএ), ইসরো, আরআরআই, পুণের আই-ইউকা ও আমদাবাদের ফিজিক্যাল রিসার্চ ল্যাবরেটরির (পিআরএল) মতো গবেষণা সংস্থাগুলো ছাড়াও কানাডিয়ান স্পেস এজেন্সি (সিএসএ) ও লিসেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়। আমরা প্রথম ছয় মাসে নজর রাখার জন্য মহাকাশে ৬০টি টার্গেট বেছেছি, প্রাথমিক ভাবে।’’

‘লাস্ট ফ্রন্টিয়ারে’ ভারতের এই নতুন যুদ্ধে কতটা সাড়া মিলেছে বিশ্বের?

দীপঙ্কর বলছেন, ‘‘বিশ্বের যে দেশগুলি মহাকাশে গবেষণা চালাচ্ছে, তারা সকলেই অ্যাস্ট্রোস্যাটকে ব্যবহার করতে ব্যাপক উৎসাহ দেখিয়েছে ইতিমধ্যেই।  কানাডা ও ব্রিটেন ছাড়াও সেই উৎসাহীদের তালিকায় রয়েছে আমেরিকা, জাপান, নেদারল্যান্ডস, ইতালি, জার্মানি, পোল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, স্পেন ও ফ্রান্স। চিন ও রাশিয়াও এ ব্যাপারে তাকিয়ে রয়েছে আমাদের দিকেই। তারা চাইছে, ‘অ্যাস্ট্রোস্যাটে’র তথ্যগুলি তাদের দেওয়া হোক, যাতে সেটা তাদের গবেষণায় সহায়ক হয়ে উঠতে পারে। তা ছাড়াও, তারা চাইছে মহাকাশে তাদের ‘ফেভারিট টার্গেট’গুলোর ওপরেও নজর রাখুক আর গোয়েন্দাগিরি চালাক ‘অ্যাস্ট্রোস্যাট’।’’

জ্যোতির্বিজ্ঞানী দীপঙ্কর ভট্টাচার্য।

সুত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা

সর্বশেষ সংশোধন করা : 4/28/2020



© C–DAC.All content appearing on the vikaspedia portal is through collaborative effort of vikaspedia and its partners.We encourage you to use and share the content in a respectful and fair manner. Please leave all source links intact and adhere to applicable copyright and intellectual property guidelines and laws.
English to Hindi Transliterate