তদেব ভৈষভং যা আরোগ্য কল্পতে -- অর্থাৎ যে দ্রব্য আরোগ্য দান করে বা রোগ নিরাময় করে তাহাই ভেষজ। আমাদের দেশে বিভিন্ন রোগের ওষুধ হিসাবে গাছগাছড়ার ব্যবহার অনেক আগে থেকেই রয়েছে। অভিজ্ঞতা লব্ধ জ্ঞানের উপর ভিত্তি করে ঔষধী হিসাবে এই সব গাছপালাকে ব্যবহার করা হচ্ছে।
আসলে উদ্ভিদ জগতের সঙ্গে মানুষের পরিচয় আবহমান কালের। মানুষ তার জন্মলগ্ন থেকে উদ্ভিদকে নিজের প্রয়োজনে নানা আকারে ব্যবহার করতে শিখেছিল। পৃথিবীর অন্যান্য প্রাচীন সভ্য দেশের মতন প্রাচীন ভারতের মানুষও তার লৌকিক জ্ঞানের দ্বারা গাছ-পালা ও লতা-গুল্ম থেকে প্রাণ ধারণের নানা উপকরণ আবিষ্কার হয়েছিল। প্রাচীন ভারতের মানুষ, মানবগোষ্ঠীর আদি চিন্তাশীল মেধাবী মানুষ। ঋকবেদ (আনুমানিক ৪৫০০-১৬০০খ্রিস্টপূর্ব) ও অথর্ববেদ (আনুমানিক ২০০০-১৫০০খ্রিস্টপূর্ব) আয়ুর্বেদ চিকিৎসা শাস্ত্রে দুখানি প্রামাণ্য গ্রন্থ। এই সব গ্রন্থে উল্লেখিত ভেষজ উদ্ভিদসমূহের বেশির ভাগই ভারতের প্রথাগত চিকিৎসা পদ্ধতি, যেমন, আয়ুর্বেদ, ইউনানি (হাকিমি), সিদ্ধা (দক্ষিণ ভারতীয় চিকিৎসা পদ্ধতি) এবং আদিবাসীয় চিকিৎসা পদ্ধিততে ব্যবহার করা হয়। বহু উদ্ভিদের অলিখিত লোকায়ত ভেষজ ব্যবহার ভারতবর্ষ তথা পশ্চিমবঙ্গের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে আছে। ভারতের প্রথাগত চিকিৎসা পদ্ধতির জ্ঞান এবং স্থানীয় অভিজ্ঞতালব্ধ প্রচলিত জ্ঞান মানুষ তাঁর নিজের ও তার পোষ্য গৃহপালিত জীব-জন্তুর প্রাথমিক চিকিৎসায় ব্যবহার করে রোগব্যাধি প্রতিরোধ ও নিরাময়ে সার্বিক প্রচেষ্টা, স্থিতিশীল স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সহায়ক। জাতীয় ভেষজ উদ্ভিদ পর্ষদ ভারতের লোকায়ত চিকিৎসা পদ্ধতিতে ব্যবহৃত দুষ্প্রাপ্য ৩২টি ভেষজ উদ্ভিদের একটি তালিকা নির্ধারণ করেছে। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য ভেষজ উদ্ভিদ পর্ষদ ২০টি উদ্ভিদ প্রজাতির একটি তালিকা নির্ণয় করেছে। এই রকম কয়েকটি উদ্ভিদ প্রজাতি যেমন - কালমেঘ, তুলসী, বাসক, থানকুনি, কুলেখাঁড়া, ঘৃতকুমারী, ব্রাহ্মী, সর্পগন্ধা, অশ্বগন্ধা, শতমূলী, হলুদ, শিউলি, নিসিন্দা, গুলঞ্চ, নিম প্রভৃতির বহুল প্রচলিত ব্যবহার রয়েছে। এছাড়াও আরও বেশ কিছু গাছ-গাছড়া রয়েছে যাদের ওষুধি গুণ রয়েছে। রোগ প্রতিরোধ ও সাধারণ রোগ নিরাময়ের ক্ষেত্রে এই সমস্ত গাছ-গাছড়ার উপকারি ভূমিকা রয়েছে।
সূত্র : বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সংসদ ও দফতর, পশ্চিমবঙ্গ সরকার
সর্বশেষ সংশোধন করা : 5/20/2020