গত দশকে আমাদের দেশ অর্থনৈতিক দিক থেকে অনেকটাই উন্নতি করেছে। প্রতি বছর অর্থনৈতিক বিকাশের গড় হার ৮ শতাংশ। এই উন্নতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মহাকাশযাত্রা থেকে শুরু করে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রেও উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এসেছে। কিন্তু সামগ্রিক উন্নতির নির্দেশক হিসাবে দেশের মানুষের স্বাস্থ্য ও পুষ্টির মানের দিক থেকে পৃথিবীর অনেক পিছিয়ে পড়া দেশের সঙ্গে তুলনা করলে বোঝা যায়, আমাদের অবস্থান ঠিক কোথায়। অর্থনৈতিক উন্নতির সুফল ঠিক সমান ভাবে পৌঁছয়নি সমাজের বহু মানুষের কাছে। অস্বাস্থ্য, অপুষ্টি আজও আমাদের দেশের মানুষ, বিশেষত, শিশু ও মহিলাদের মধ্যে অত্যন্ত প্রকট। এ কথা আজ সর্বজনবিদিত যে কোনও দেশের বিকাশের জন্য প্রথম প্রয়োজন মানবসম্পদ উন্নয়ন, যা তার আর্থিক সমৃদ্ধির ভিত্তি। দীর্ঘকালীন অপুষ্টি মানবসম্পদের অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। খাদ্য উৎপাদনে বিশেষ উন্নতি, খাদ্য সুরক্ষা, গণ বণ্টন ব্যবস্থা, ব্যক্তিগত স্তরে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি বৃদ্ধি পাওয়া সত্ত্বেও শিশু ও মহিলাদের মধ্যে অপুষ্টির দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব আমাদের অবাক করে। এমনকী অর্থনৈতিক ভাবে স্বচ্ছল পরিবারের সদস্য, বিশেষত, শিশুরাও এর শিকার। আমাদের অনেক প্রতিবেশী দেশ এমনকী, আফ্রিকার অনেক অনুন্নত দেশ যেমন —কঙ্গো, জিম্বাবোয়ে বা সোমালিয়ার তুলনায় দেশবাসীর পুষ্টির মানের নিরিখে পিছিয়ে রয়েছি আমরা। বিশ্বের তিনটি অপুষ্টি আক্রান্ত শিশুর মধ্যে একটি বাস করে ভারতে।
খুব সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন জাগে বিভিন্ন পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা, নানা প্রকল্প, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি কর্মসূচিগুলি কি তা হলে সঠিক ভাবে রূপায়িত করা সম্ভব হয়নি? অপুষ্টি দূর করতে বা সুস্বাস্থ্যের ভিত গড়তে প্রয়োজনীয় পরিষেবাগুলি কি ঠিক ভাবে সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে সুনির্দিষ্ট ভাবে পৌঁছে দেওয়া যাচ্ছে না? নাকি মানুষের মধ্যে এ সব পরিষেবা গ্রহণ করার আগ্রহই নেই? অথচ খাতা কলমের হিসাব কিন্তু অন্য কথা বলছে। আমাদের দেশে অপুষ্টি প্রতিরোধের জন্য রয়েছে শিশু ও মহিলাদের জন্য বিশ্বের বৃহত্তম কল্যাণমূলক প্রকল্প, যাতে তাদের পুষ্টির উপর বিশেষ ভাবে নজর দেওয়া হয়। এর জন্য গৃহীত হয়েছে, ‘‘সুসংহত শিশু বিকাশ পরিষেবা প্রকল্প’’, যা সারা দেশে রূপায়িত হচ্ছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে ৫ বছর বয়স পর্যন্ত শিশু, সন্তানসম্ভবা ও প্রসূতি মায়েদের প্রয়োজনীয় পরিপূরক পুষ্টিকর আহার, প্রতিষেধক, স্বাস্থ্য ও পুষ্টির মান নির্ণয়, পুষ্টি শিক্ষার মতো পরিষেবা দেওয়া সত্ত্বেও গত তিন দশকে অপুষ্টির চালচিত্রে তেমন উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন দেখা গেল না।
সূত্র : যোজনা, জানুয়ারি ২০১৫
সর্বশেষ সংশোধন করা : 3/22/2020