শাশ্বতী ঘোষ একটি প্রবন্ধে লিখেছেন, ২০১১ সালেও ৫৩ শতাংশ ভারতীয় বাইরে শৌচকর্ম করতে বাধ্য হন। গ্রামে বা শহরে নিম্নবিত্ত এলাকায় ৭০ শতাংশ বাড়িতেই শৌচাগার নেই। কয়েক দিন আগে সংবাদপত্রে প্রকাশ, হাওড়া শহরে জেলা শাসক, পুলিশ সুপার -- এঁদের বাংলোর পাশেই যে বস্তি রয়েছে সেখানে অধিকাংশ মানুষেরই কোনও শৌচাগার নেই। অনেক স্কুলে শৌচাগার না থাকায় মেয়েরা মাঝপথে পড়াশোনা ছাড়তে বাধ্য হচ্ছে। অথচ আমাদের প্রতিবেশী বাংলাদেশ এই সমস্যা থেকে দেশকে প্রায় মুক্ত করে ফেলেছে। এমনকী আমাদের দেশের কেরলও তাদের রাজ্যে শৌচাগার সমস্যার সমাধান করতে পেরেছ। পরিকাঠামো নির্মাণের অন্যান্য ক্ষেত্রের মতো এ ক্ষেত্রেও তারা দেশের মধ্যে প্রথম সারিতে। পশ্চিমবঙ্গেও কিন্তু এ ব্যাপারে উদ্যোগ শুরু হয়েছিল। রামকৃষ্ণ মিশন লোকশিক্ষা পরিষদ এবং পঞ্চায়েতের যৌথ উদ্যোগে ১৯৯০ সালে মেদিনীপুর জেলায় চালু হয় গ্রামীণ স্যানিটেশন প্রকল্প এবং পরবর্তীকালে সারা দেশেই ছড়িয়ে পড়ে এই প্রকল্প। শৌচাগারের বিভিন্ন মডেলও সেই সময় তৈরি করা হয়। ২০০২ সালের শেষে পশ্চিমবঙ্গের গ্রামাঞ্চলে ৪০ সতাংশ বাড়িতে পাকা শৌচাগারের ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়েছিল। ১৯৯০ সালে এই সংখ্যা ছিল মাত্র ১২.১৩ শতাংশ।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী স্বচ্ছ ভারত অভিযান প্রকল্প জোর কদমে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার উপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। মন্দির নির্মাণের চেয়ে শৌচাগার নির্মাণ বেশি জরুরি বলে তিনি মন্তব্য করেছেন। একটি সমীক্ষায় দেখা যায়, দেশের মোট বাড়ির মধ্যে দেবালয়ের সংখ্যা ১ শতাংশ, অন্য দিকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ০.৭ শতাংশ এবং চিকিৎসা কেন্দ্রের সংখ্যা ০.২ শতাংশ। অর্থাৎ দেবালয়ের সংখ্যা শিক্ষালয় এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সমষ্টির চেয়ে বেশি (দেশ, ২ নভেম্বর ২০১৩)। প্রধানমন্ত্রী ২০১৯ সালের মধ্যে স্বচ্ছ ভারত অভিযান প্রকল্প ১০০ শতাংশ কার্যকর করার লক্ষ্যমাত্রা রেখেছেন। তা ছাড়া প্রতিটি স্কুলে শৌচাগার গড়ে তোলার উপরেও তিনি গুরুত্ব দিয়েছেন।
তবে সরকারি অনুদানের ভিত্তিতে গৃহে শৌচাগার নির্মাণ করে দেওয়া সত্ত্বেও অনেক পুরুষকেই সেটি ব্যবহার না করে উন্মুক্ত পরিবেশে শৌচকর্ম করতে দেখা যায়। এই বদভ্যাস পরিত্যাগের জন্যও ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
সূত্র : যোজনা, জানুয়ারি ২০১৫
সর্বশেষ সংশোধন করা : 1/28/2020