একটি নিম্নমধ্যবিত্ত ঘরের মেয়ে দীপা। দীর্ঘ সময় ধরে সাদাস্রাব হওয়ার দরুন নানা সমস্যায় ভুগছিল দীপা। বন্ধুরা দীপাকে জানায় সাদাস্রাব ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে। ভয় পেয়ে দীপা তার মাকে জানায়। এর পর দীপার মা তাকে ডাক্তারের কাছে যান।
ডাক্তারদিদি : সাধারণত ২৮ দিনের যে ঋতুচক্র তাতে ৪ থেকে ৫ দিন ঋতুস্রাবের পর সাদাস্রাব হওয়া নিয়মের মধ্যে পড়ে। শরীরে হরমোনের ওঠানামার ফলেই এই সাদাস্রাব হয়ে থাকে। প্রথমে ৪-৫ দিন জলের মতো বর্ণহীন হয় এবং তার পর সর্দির মতো দেখতে হয়। ১২-১৪ দিনের মাথায় ওভিউলেশন হওয়ার পর জলের মতো বর্ণহীন না থেকে তা সাদা ছানাকাটার মতো রঙ নেয়। এই ভাবে সাদাস্রাব হওয়াটা স্বাভাবিক। না হলে বরং শরীরে নানাবিধ সমস্যা হতে পারে। তখন তার চিকিৎসা করা জরুরি হয়ে ওঠে। মনে রাখতে হবে আমাদের মুখ, চোখ, নাক কোনও চামড়া দিয়ে ঢাকা নয়। তাই বাইরের জীবাণু খুব সহজেই এই ইন্দ্রিয়গুলিতে সংক্রমণ ঘটায়। চোখের জল, মুখের লালা, ভ্যাজাইনাল ডিসচার্জ এই সব কিছুই প্রকৃতির নিয়মেই হয়ে থাকে, যাতে জীবাণুগুলি সংক্রমণ না ঘটাতে পারে। তাই সাদাস্রাব স্বাভাবিক। তবে সাদাস্রাব যদি রক্তমিশ্রিত ও দুর্গন্ধযুক্ত হয় তা হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। চুলকানি হলেও চিকিৎসা দরকার।
সারভিক্স বা জরায়ুর মুখে যে ক্যান্সারের কথা বলা হয়, তা হয়ে থাকে হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাসের (এইচ পি ভি) কারণে। এই ভাইরাস প্রথম শারীরিক মিলনের সময় নারী পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই সংক্রামিত হয়। তার পর নারী-পুরুষের শারীরিক প্রতিরোধই এই ভাইরাসকে নির্মুল করে দেয়। বাকি যাদের শরীরে এই ভাইরাস থেকে যায় তাদের ক্ষেত্রে ১০-১৫ বছর পর এরা ধীরে ধীরে সাধারণ কোষের মধ্যে পরিবর্তন আনে।
সার্ভাইক্যাল ক্যান্সার ভারতীয় মহিলাদের মধ্যে অন্যতম। এখন প্রতি ৮ মিনিটে ১ জন করে ভারতীয় মহিলার এই ক্যান্সারে মৃত্যু হচ্ছে। তবে যে হেতু ভাইরাস থেকে এই ক্যান্সার হয় তাই এর ভ্যাকসিন নিলে এইচপিভি সংক্রমণ আটকানো যায়া।
পৃথিবীর সর্বত্রই মেয়েদের বয়স ৯ বছর পেরোলে এই ভ্যাকসিন দেওয়া হয়। প্রথমে ১টি, দু’মাস পর ১টি, তার চার মাস পর ১টি।
এ ছাড়া প্রথম যখন শারীরিক মিলন হয় তার পর থেকে প্রতি বছর এক বার করে সার্ভাইক্যাল স্মিয়ার অর্থাৎ জরায়ুর মুখ থেকে সাদাস্রাব নিয়ে পরীক্ষা করা হয়। এই স্মিয়ারের রিপোর্ট যদি তিন বছর পর পর ঠিক থাকে তা হলে আর প্রতি বছর এই পরীক্ষা করার প্রয়োজন হয় না। তিন বছর পর পর এই পরীক্ষা করা হয় যতক্ষণ পর্যন্ত না তার ৫৫ বছর বয়স হয়। সম্ভবত এটা একমাত্র ক্যান্সার যা আগে থেকে প্রতিরোধ করা সম্ভব।
দীপার ক্ষেত্রে নিয়ম অনুযায়ী এই ভ্যাকসিন নিতে হবে। কিছু নিয়ম পালন করলে এই সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা কমে। যেমন, বহুনারীসঙ্গকারী পুরুষ বর্জন করা বাঞ্ছনীয়। শারীরিক মিলনের সময় অবশ্যই কনডোম ব্যবহার করা উচিত। এইচপিভি ভ্যাকসিন ডাক্তারের পরামর্শে নিয়ে নেওয়া, এ ছাড়া সার্ভাইক্যাল প্যাপস্মিয়ার টেস্ট নিয়মিত (তিন বছরে এক বার) করলে জরায়ুর মুখের কোষের পরিবর্তন যা কিনা পরবর্তীকালে ক্যান্সারে পরিবর্তিত হতে পারে তা আগেই নির্ধারণ করা সম্ভব ও চিকিৎসার দ্বারা ক্যান্সার প্রতিরোধ করা সম্ভব।
মনে রাখবেন |
---|
|
সর্বশেষ সংশোধন করা : 11/14/2019