দৃষ্টি সংক্রান্ত চিকিৎসার প্রসঙ্গ উঠলে গড়পড়তা মানুষের মনে হয় ঠিকঠাক চশমা পরলে এবং ছানি কাটিয়ে ফেললে সমস্যার সুরাহা হয়। কিন্তু গ্লকোমা ভিন্ন গোত্রের একটি চোখের অসুখ। প্রায় নিঃশব্দে, কোনও প্রাথমিক উপসর্গ ছাড়াই গ্লকোমা আপনার চোখকে আক্রমণ করতে পারে। ঠিক সময়ে যথাযথ ভাবে গ্লকোমা যদি নির্ণয় না করা যায়, বা গ্লকোমা নির্ধারণে যদি দেরি হয়, তা হলে অন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা প্রবল।
যে হেতু এই অসুখ প্রায় কোনও উপসর্গ ছাড়াই প্রায় নিঃশব্দে আপনার দৃষ্টিকে আক্রমণ করে, তাই এর ভয়াবহ পরিণাম সম্পর্কে সচেতন থাকা একান্ত দরকার। বিশ্বে গ্লকোমা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রায় ৬ কোটি ৭০ লাখ। গ্লকোমা সাধারণত বয়স্ক মানুষের মধ্যে বেশি দেখা যায়। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে রোগটির আক্রান্তের হার ক্রমশ বেড়ে যাচ্ছে।
এটি এমন একটি রোগ যাতে চোখের চাপ বেড়ে গিয়ে চোখের পিছনের দিকের স্নায়ু নষ্ট হয়ে যায়। রোগটির আগে ভাগে কোনও লক্ষণ জানা যায় না। তাই অর্ধেকেরও বেশি রোগী নিজের চোখের অবস্থা সম্পর্কে জানেন না বা কম জানেন। ফলে সঠিক সময় চিকিৎসকের কাছে যান না।
গ্লকোমা কেন অদৃশ্য এক অসুখ এবং কী করেই বা এই রোগ নিঃশব্দে আপনার চোখে বাসা বাঁধে তা একটু বিশদ করে বলা দরকার। এই অসুখটি তার প্রাথমিক পর্বে প্রায় উপসর্গবিহীন। এর সম্পর্কে বলা হয় ‘গ্লকোমা ইস এ গ্রুপ অফ আই ডিসিজ’। অর্থাৎ গ্লকোমা হল কয়েকটি চোখের অসুখের সমাহার। অগ্রসর হতে থাকে অপটিক নার্ভের দিকে। এই ঘটনার অনিবার্য পরিণতি হল, একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর অপটিক নার্ভকে মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করা। এক বার ক্ষতি হয়ে গেলে নার্ভটিকে চিকিৎসার দ্বারা আর আগের অবস্থায় নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। সম্পূর্ণ অজান্তে, কোনও উপসর্গ ছাড়াই গ্লকোমা নীরবে আক্রান্ত ব্যক্তিকে ক্ষীণদৃষ্টি থেকে দৃষ্টিহীন করে দেয়। গ্লকোমাজনিত অন্ধত্ব কিন্তু অপ্রতিরোধ্য নয় একেবারেই।
সাধারণত প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের ক্ষেত্রে তিন রকম গ্লকোমা দেখা যায় :
অ্যাঙ্গল ক্লোজার গ্লকোমার অভিঘাত কখনও কখনও সুতীব্র হতে পারে। যার ফলে চোখে প্রবল যন্ত্রণা, নিরন্তর চোখ জ্বালা এবং নিদারুণ মাথা ধরায় রোগী কষ্ট পান। তবে ওপেন অ্যাঙ্গল এবং নর্মাল টেনশন গ্লকোমা মোটামুটি ভাবে উপসর্গবিহীন। যাঁরা এই দুই শ্রেণির গ্লকোমায় আক্রান্ত এবং প্রাথমিক পর্যায়ের রোগী, তাঁদের অসুখ আপেক্ষিক ভাবে উপসর্গবিহীন হওয়ার কারণে চিকিত্সার আওতায় আসার সম্ভাবনাও বেশ কম। ফলে অনির্নীত অবস্থায় এবং চিকিত্সার অভাবে, অন্তত ত্রিশ শতাংশ ক্ষেত্রে ওই গ্লকোমা আগামী বারো বা বিশ বছর পর রোগীকে সম্পূর্ণ অন্ধ করে দিতে পারে। অন্য দিকে অ্যাঙ্গল ক্লোজার গ্লকোমাতে দৃষ্টিনাশের আশঙ্কা অনেক বেশি। মহিলাদের ক্ষেত্রে অ্যাঙ্গল ক্লোজার গ্লকোমায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা পুরুষদের তুলনায় অনেক বেশি। অ্যাঙ্গেল ক্লোজার গ্লকোমাতে ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে চোখের প্রেসার কখনও কখনও দ্রুত বেড়ে যেতে পারে। উপযুক্ত চিকিত্সায় এটি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।
সূত্র : ডা: টুটুল চক্রবর্তী, এই সময়, ১৩-৩-১৫, http://bengali.cri.cn
সর্বশেষ সংশোধন করা : 6/30/2020