বেশি মোটা হওয়াটা স্বাস্থ্যকর নয়। হার্টের অসুখ, ডায়াবিটিস, ডিপ্রেশন, ইত্যাদি নানা রোগ হবার সম্ভাবনা কমাতে হলে শরীরের ওজন একটা নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে রাখা উচিত। সেই সীমা নির্ভর করে, দৈহিক উচ্চতা, শরীরের গঠন, পুরুষ-না স্ত্রী - মূলতঃ এই তিনটি জিনিসের উপর। ইদানীং লোকেদের মোটা হবার প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। বহুদিন পর্যন্ত এর মূল কারণ হিসেবে ধরা হত অধিক ভোজন, বেশি ফ্যাটযুক্ত খাবার খাওয়া এবং ব্যায়াম বা পরিশ্রম কম করা। সেই কারণগুলি নিশ্চয় রয়েছে। কিন্তু সেইসঙ্গে বিজ্ঞানীরা সন্দেহ করছেন যে, মোটা হওয়ার পেছনে ভাইরাসেরও একটা অবদান থাকতে পারে - ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েও লোকেরা মোটা বা obese হতে পারে। এই ধরণের মোটা হওয়া বোঝানোর জন্য একটা নতুন শব্দ চয়ন করা হয়েছে Infectobesity। এটি প্রচলন করেছেন ওয়েন স্টেট ইউনিভার্সিটি-র একজন ভারতীয় গবেষক নিখিল ধুরন্ধর। মানুষের শরীরের এক ধরণের ভাইরাস অ্যাডেনোভাইরাস-৩৬ বা Ad-36 এই মোটা হবার জন্য দায়ী। অ্যাডেনোভাইরাসের প্রায় পঞ্চাশ রকমের স্ট্রেইন বা বিকল্প রূপ আছে। এগুলির জন্যেই মূলতঃ আমাদের সর্দি, চোখ লাল হওয়া, পেট খারাপ, ইত্যাদি হয়। ডাঃ ধুরন্ধর ও তাঁর সহকর্মীরা আবিষ্কার করেছেন যে এদের মধ্যে অ্যাডেনোভাইরাস-৩৬, মানুষের ফ্যাট-সেল বা চর্বি-কোষকে প্রভাবিত করে এবং তাদের সংখ্যাবৃদ্ধি করে। ঠিক কী ভাবে এই ভাইরাস ফ্যাটসেলকে প্রভাবিত করে সে ব্যাপারে এখনও কিছু ধোঁয়াশা আছে। গবেষকদের ধারণা Ad-36 -এর একটা বিশেষ জিন (E4Orfl) এই সংখ্যাবৃদ্ধির জন্য দায়ী।
এখন গবেষকরা বার করার চেষ্টা করছেন, কেন কিছু লোককে এই ভাইরাস স্থূলকায় করছে, কিন্তু কিছু লোককে করছে না। তবে এই ভাইরাস নিয়ে নিখিল ধুরন্ধর আগ্রহী হলেন সেটা একটা গল্প। ভারতবর্ষে এভিয়ান অ্যাডেনোভাইরাসে আক্রান্ত মুরগিদের পরীক্ষা করতে গিয়ে তিনি দেখেন মরার আগে মুরগীগুলো মোটা হচ্ছে, রোগা নয়। উনি এই নিয়ে আমেরিকায় গবেষণা করতে এসে দেখলেন মার্কিন সরকারের কৃষি বিভাগ ঐ ভাইরাসকে ভারতবর্ষ থেকে আনার অনুমতি দিচ্ছে না। তখন ধুরন্ধর মানুষের মধ্যে যে অ্যাডেনোভাইরাস রয়েছে সেই নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। সেখান থেকেই আবিষ্কৃত হয় Ad-36। এই ভাইরাস নিয়ে আরও অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষা চলবে। এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ শক্তি গড়ে তোলার জন্য কোনও টিকা আবিষ্কার করা যায় কিনা সেই নিয়েও কেউ কেউ ভাবনা চিন্তা করছেন।
সূত্র: বিকাশপিডিয়া টিম
সর্বশেষ সংশোধন করা : 2/14/2020