নতুন সরকার স্বচ্ছ ভারত অভিযানে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের পূর্ণ সহযোগিতা ও সক্রিয় অংশগ্রহণ প্রার্থনা করেছে। পাঁচ বছর মেয়াদের এই অভিযান শুরু হয়েছে এ বছরের ২ অক্টোবর। কিন্তু সব থেকে আগে প্রয়োজন মানুষকে দিয়ে মলবহন করানোর শতাব্দীপ্রাচীন অমানবিক প্রথার সম্পূর্ণ বিলোপসাধন। বর্তমান আইনের সংশোধন করে প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো নির্মাণের মাধ্যমে দু’ বছরের মধ্যেই এই প্রথা রদ করা সম্ভব। স্বচ্ছ ভারত অভিযানেরও উচিত কেবল সাফাই ও নিকাশি ব্যবস্থার মধ্যে আটকে না থেকে এই বিষয়টিতে মনোযোগ দেওয়া। কেননা, এর সঙ্গে মানুষের সম্মানের প্রশ্ন জড়িত।
মানুষকে দিয়ে মলবহন, ভারতের উন্নয়ন প্রক্রিয়ার ওপর এক কালো দাগ। একবিংশ শতাব্দীতে, স্বাধীনতার ছয় দশক পরেও যে হাজার হাজার পরিবারকে সমাজের নিচু তলায় এমন অমানবিক জীবন কাটাতে হয়, তা ভারতের জাতীয় লজ্জা। জাতির জনক মহাত্মা গান্ধী সারা জীবন ধরে এঁদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন এবং অসম্মানের অবসানের চেষ্টা করে গেছেন।
বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র ভারত এই শতকের প্রথম দশকে অসাধারণ অর্থনৈতিক বিকাশের হার অর্জন করেছে। লক্ষ লক্ষ মানুষের কাছে ভারত হয়ে উঠছে সম্ভাবনার এক দেশ, বিদেশি বিনিয়োগের গন্তব্যস্থল। তবুও এখনও সেখানে বহু মানুষ সমাজের সর্বস্তরে বহু গভীর পর্যন্ত বিস্তৃত জাতপাতভিত্তিক বৈষম্যের শিকার। বহু শতাব্দীর অসম্মানের ভার এঁদের শিরে। মলবহনের মতো অমানবিক কাজ করানো হয় এঁদের দিয়ে। আবার মলবহনের কাজ করেন বলে অন্য কোনও সম্মানজনক কাজও তাঁদের করতে দেওয়া হয় না। হাজার হাজার বছর ধরে তাই তাঁরা বংশানুক্রমে একই কাজ করে চলেছেন। আইন রূপায়ণকারী সংস্থাগুলির নির্বিকার ঔদাসীন্য এবং বর্তমান আইনের ফাঁক এর জন্য দায়ী। বিশ্বের যে প্রান্তেই হোক না কেন, এই প্রথা অমানবিক এবং অস্পৃশ্যতার জ্বলন্ত নিদর্শন। ভারতের সংবিধানে নাগরিককে সমমর্যাদা দানের কথা বলা হয়েছে। তবুও এই জঘন্য প্রথা এখানে এখনও চলে আসছে।
সামাজিক পেশার কারণে নানা স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। শ্রী নারায়ণন সুপ্রিম কোর্টে এ বিষয়ে যে জনস্বার্থমূলক আবেদন দাখিল করেছেন তাতে বলা হয়েছে, মিথেন ও হাইড্রোজেন সালফাইডের মতো বিষাক্ত গ্যাসের সংস্পর্শে এসে অকস্মাৎ মৃত্যুর আশঙ্কা, কার্ডিওভাস্কুলার সমস্যা, অস্টিও আর্থারাইটিসের মতো মাংসপেশি ও মেরুদণ্ডের রোগ, ইন্টারভার্টিব্রাল ডিস্ক হারনিয়েশন এবং হেপাটাইটিস, লেপটোস্পাইরোসিস ও হেলিকোব্যাকটেরর মতো সংক্রমণ, ত্বকের সমস্যা, শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা প্রভৃতি এই পেশার সঙ্গে জড়িত।
মানুষকে দিয়ে মলবহন করানো দীর্ঘদিন ধরেই সভ্য সমাজে অমানবিক এক অপরাধ হিসাবে গণ্য হয়ে আসছে। ১৯১৭ সালে মহাত্মা গান্ধীর নির্দেশে তাঁর প্রতিষ্ঠিত সবরমতী আশ্রমের বাসিন্দারা নিজেরাই নিজেদের শৌচালয় পরিষ্কার করেত শুরু করেন। ১৯৪৮ সালে মহারাষ্ট্র হরিজীবন সেবক সংঘ মলবহন প্রথার বিরোধিতা করে অবিলম্বে এটি রদ করার দাবি জানায়। ১৯৪৯ সালে বারভে কমিটি সাফাইকর্মীদের কাজের পরিবেশ উন্নত করার সুপারিশ করে। ১৯৫৭ সালে এ সংক্রান্ত তদন্ত কমিটি মাথায় করে মলবহনের কুপ্রথা বিলোপের সুপারিশ করে।
১৯৬৮ সালে জাতীয় শ্রম কমিশন ‘ঝাড়ুদার ও মলবাহকদের’ কাজের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে একটি কমিটি নিয়োগ করে। সবক’টি কমিটিই মলবহন প্রথা লোপ করে নিকাশি বা সাফাই কর্মচারীদের উপযুক্ত পুনর্বাসনের সুপারিশ করেছিল। এই সুপারিশ আংশিক গ্রহণ করে ১৯৯৩ সালে ‘মলবাহকদের নিয়োগ এবং জলবিহীন শৌচালয় নির্মাণ (নিষিদ্ধকরণ) আইন’ প্রণয়ন করা হয়। এতে i) মলবাহক নিয়োগ এবং যথাযথ নিকাশিব্যবস্থা ছাড়াই জলবিহীন শৌচালয় নির্মাণ নিষিদ্ধ করা হয়। (ii) এই আইন ভাঙলে এক বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং/অথবা ২ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানার সংস্থান থাকে। তবে ২০০৩ সালের সিএজি রিপোর্টে প্রকাশ, মাত্র ১৬টি রাজ্য এই আইন গ্রহণ করেছে এবং কোথাওই তা কার্যকর হয়নি। শ্রম মন্ত্রকের কর্মী ক্ষতিপূরণ আইনের রূপায়ণ করেছে মাত্র ৬টি রাজ্য। দশম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় (২০০২–০৭) মলবহন প্রথার বিলোপসাধনকে অন্যতম লক্ষ্য হিসাবে গ্রহণ করা হয়।
সুপ্রিম কোর্টে দাখিল করা একটি আবেদন অনুযায়ী, ভারতীয় রেলে এখনও নোংরা পরিষ্কারের জন্য কর্মী নিয়োগ করা হয়। ২,৪০,০০০ কোটি টাকার সংযুক্ত রেল আধুনিকীকরণ পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হলেও এর বিলোপসাধনের লক্ষ্যে কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এ বিষয়ে রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব লক্ষ করেছে। ২০০৩ সালে সাফাই কর্মচারী আন্দোলন ও অন্য ১৩টি সংস্থার দায়ের করা আবেদনের শুনানিতে সুপ্রিম কোর্ট দেখে, ভারতে মলবাহকের সংখ্যা ক্রমশ বেড়েছে। ২০০৫ সালের জানুয়ারি মাসে শীর্ষ আদালত কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিটি মন্ত্রক এবং রাজ্য সরকারগুলিকে এ বিষয়ে হলফনামা পেশের নির্দেশ দেয়। কোনও পদস্থ আধিকারিককে ব্যক্তিগত দায়িত্বে এ সংক্রান্ত তথ্য যাচাই করে ৬ মাসের মধ্যে এই হলফনামা পেশ করতে হবে বলে সুপ্রিম কোর্ট জানায়। এই প্রথা এখনও রয়েছে কি না এবং থাকলে তার বিলোপসাধন ও সংশ্লিষ্ট কর্মীদের পুনর্বাসনের সময় নির্দিষ্ট কর্মসূচি হলফনামায় উল্লেখ করতে হবে বলে সর্বোচ্চ আদালত সংশ্লিষ্ট মন্ত্রককে নির্দেশ দেয়।
সাফাইকর্মীদের বিষয়টি বৃহত্তর প্রেক্ষিতে দেখার লক্ষ্যে ১৯৯৩ সালে ‘মলবাহক নিয়োগ এবং জলবিহীন শৌচালয় প্রস্তুত (নিষিদ্ধকরণ) আইন’ পাশ হয়। অথচ ১৮ বছরের বেশি সময় কেটে গেলেও সরকার এর রূপায়ণে ব্যর্থ। এখনও হাজার হাজার মানুষ এই পেশায় নিযুক্ত। এঁদের অধিকাংশ তফশিলি জাতি ও উপজাতিভুক্ত হওয়ায় ২০১১ সালে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানায়, এঁদের দিয়ে মলবহন ও জঞ্জাল অপসারণ করানো হলে তা ‘তফশিলি জাতি ও উপজাতি (অত্যাচার প্রতিরোধ) আইন’ লঙ্ঘনের আওতায় পড়বে। তা সত্ত্বেও আজ পর্যন্ত একজনকেও ১৯৯৩ সালের আইনের আওতায় দোষী সাব্যস্ত করা হয়নি। ২০১২ সালে ‘ভারতে পানীয় জল ও শৌচালয় ব্যবহারের ক্ষেত্রে দলিতদের প্রান্তিকা’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন রাষ্ট্রসংঘে পেশ করা হয়। এই রিপোর্টে ভারতে মলবাহক ও সাফাইকর্মীদের মানবিক অধিকার সংক্রান্ত পরিস্থিতির বিস্তারিত উল্লেখ রয়েছে।
২০১১ সালের ১৭ জুন, তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ মানুষকে দিয়ে মলবহন ও জঞ্জাল আপসারণকে ‘ভারতের উন্নয়ন প্রক্রিয়ার ওপর কালো দাগ’ আখ্যা দিয়ে ৬ মাসের মধ্যে এই প্রথা অবলোপের কথা বলেন। মলবহন, নর্দমা পরিষ্কার, সেপটিক ট্যাঙ্ক পরিষ্কারের মতো যাবতীয় কাজ বন্ধ করার লক্ষ্যে সরকার নতুন একটি সার্বিক আইন প্রণয়নের কথা ভাবতে শুরু করে। ২০১১ সালের ১০ সেপ্টেম্বর তামিলনাড়ু বিধানসভায় গৃহীত সর্বসম্মত প্রস্তাবে বলা হয়, পুরনো আইনটি অত্যন্ত দুর্বল ও ত্রুটিপূর্ণ। সময় এসেছে নতুন একটি কেন্দ্রীয় আইন প্রণয়নের, যা সব রাজ্য মানতে বাধ্য হবে এবং যেখানে মানুষকে দিয়ে নোংরা অপসারণের বৃহত্তর সংজ্ঞা ও পরিধি, রূপায়ণকারী কর্তৃপক্ষের নিয়োগ, পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধে তার হাতে দেওয়া ক্ষমতা প্রভৃতির সুনির্দিষ্ট উল্লেখ থাকবে।
২০১২ সালের ১২ মার্চ, দেশের তত্কালীন রাষ্ট্রপতি প্রতিভা পাটিল সংসদে দেওয়া ভাষণে বলেন, ‘তাঁর সরকার মানুষকে দিয়ে মলবহন ও নোংরা অপসারণের প্রথা বিলোপ করতে সংসদে একটি নতুন বিল আনবে। এতে সাফাইকর্মীদের যথাযথ পুনর্বাসন ও বিকল্প জীবিকারও সংস্থান থাকবে, যাতে তাঁরা সম্মানের সঙ্গে জীবন কাটাতে পারেন।’ চার দিন পরে সুপ্রিম কোর্টকেও সরকার একই প্রতিশ্রুতি দেয়। বিলটি সংসদের বাদল অধিবেশনে পেশ করার কথা হয়। তবে তার আগেই সুপ্রিম কোর্টে মাদ্রাজ হাইকোর্টের দেওয়া একটি রায় আসে। সেখানে বলা হয়েছিল, কেন্দ্র এখন ১৯৯৩ সালের আইন সংশোধন না করলে প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ কার্যালয়ের উচ্চপদস্থ কাউকে আদালতে ব্যক্তিগত হাজিরা দিতে হতে পারে। নতুন বিলের প্রস্তাবনায় বলা হয়, ‘সাফাই কর্মীরা দীর্ঘদিন ধরে যে ঐতিহাসিক অন্যায় ও অসম্মানের শিকার হয়ে আসছেন, তার অবসান ঘটিয়ে সম্মান ও মর্যাদার জীবনে তাঁদের পুনর্বাসন ঘটানো প্রয়োজন।’
১৯৯৩ সালের আইনের আওতায় শুধুমাত্র মলবাহকদেরই আনা হয়েছিল। ২০১২ সালের নতুন বিলে এই সংজ্ঞা আরও ব্যাপক ও বিস্তৃত করে যাঁরা জলহীন শৌচালয়, খোলা নর্দমা, গর্ত বা রেল লাইনে মল পরিষ্কারের কাজ করেন তাঁদেরও আওতাভুক্ত করা হল।
১৯৯৩ সালে সাফাই কর্মচারী জাতীয় কমিশন আইন অনুসারে কমিশন গঠিত হয়। ওই বছরেরই মার্চে সাফাই কর্মচারী ও তাঁদের ওপর নির্ভরশীলদের পুনর্বাসনে জাতীয় প্রকল্পের সূচনা হয়। রূপায়ণের দায়িত্ব দেওয়া হয় সামাজিক ন্যায় ও ক্ষমতায়ন মন্ত্রককে। ৬০০ কোটি টাকার ওপর খরচ হলেও এই প্রকল্প যে তার লক্ষ্যে অর্জনে ব্যর্থ, সিএজি রিপোর্টে তা স্পষ্ট। রিপোর্টের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, ‘এই প্রকল্পের সদিচ্ছা প্রশ্নাতীত হলেও জটিল সামাজিক প্রেক্ষাপটে, যেখানে জীবিকার সংস্কারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ সহজেই গড়ে ওঠে, সেখানে এর প্রয়োগ আদৌ বাস্তবোচিত নয়। উদ্দেশ্য যতই মহৎ হোক না কেন, এই প্রকল্প তার সামাজিক লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ।‘
দশ বছর ধরে ধারাবাহিক প্রয়াস চালানো হয়েছে ঠিকই, কিন্তু তাতে আত্মবিশ্বাস ছিল না। নীতি রূপায়ণের সঙ্গে বর্তমান আইনের সুবিধার সমন্বয় সাধন করে সুসংহত কোনও নির্দেশিকা প্রণয়নে এই উদ্যোগ ব্যর্থ। প্রথার বিলোপসাধন ও পুনর্বাসনের বিষয়টিকে পৃথক ভাবে দেখায় এই প্রকল্পের মূল ভিত্তিই দুর্বল হয়ে পড়ে। এলোমেলো, সমন্বয়হীন কিছু কাজের সমাহার হয়ে ওঠে এই প্রকল্প। জীবিকার পরিবর্তনের জন্য যা সব থেকে জরুরি, অর্থাৎ সুফল প্রাপকদের দক্ষতার উন্নয়ন — সেই কাজটিই ঠিকমতো করা হয়নি। এই কারণেই বংশানুক্রমিক পেশা থেকে দক্ষতানির্ভর বিকল্প জীবিকায় রূপান্তরের কাজও এগোতে পারেনি। প্রকল্পের মাপকাঠি নির্ধারণে অসামঞ্জস্য, এর রূপায়ণে সদিচ্ছার অভাব একে দিশাহীন করে তোলে।
রাজ্য সরকার ও সহযোগী সংস্থাগুলির দায়বদ্ধতার অভাবের জন্যই এই প্রকল্প সন্তোষজনক পরিণতিতে পৌঁছতে পারেনি বলে জাতীয় সাফাই কর্মচারী কমিশন মনে করে। বহু রাজ্য সরকার তো মলবহন ও নোংরা সাফাইয়ের কর্মীদের নিযুক্ত থাকার ঘটনাই অস্বীকার করে। অথচ এখনও বহু সরকারি কার্যালয়ে জলবিহীন শৌচালয় রয়েছে এবং পুরসভা সেগুলি পরিষ্কারের জন্য সাফাইকর্মী পাঠিয়ে চলেছে।
সিএজি রিপোর্টে সামাজিক ন্যায় ও ক্ষমতায়ন মন্ত্রকেরও সমালোচনা হয়েছে। প্রথমত, তফশিলি জাতি উন্নয়ন আর্থিক নিগমগুলিকে (যারা পুনর্বাসনের কাজ করে) মন্ত্রক সময়মতো টাকা পাঠায়নি। দ্বিতীয়ত, প্রকল্পের কাজ খতিয়ে দেখতে মন্ত্রক, রাজ্য বা জেলা স্তরে নজরদারি কোনও ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়নি। জীবিকা পরিবর্তনের সুষ্পষ্ট কোনও সংজ্ঞা না থাকায় নিগম ও ব্যাঙ্কগুলি তাদের কাজ করতে পারেনি। মহারাষ্ট্রে এ সংক্রান্ত ঋণের আবেদনের ৪৭ শতাংশ এবং তামিলনাড়ুতে ৭৪ শতাংশই খারিজ করে দেওয়া হয় বলে সিএজি রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।
রিপোর্টে বলা হয়, ‘এক জন নিরক্ষর দরিদ্র সাফাইকর্মী বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঋণ পাওয়ার জন্য জটিল যাবতীয় পদ্ধতি পালন করতে পারবেন বলে যাঁরা মনে করেন, তাঁদের দূরদৃষ্টি ও বাস্তবতা ছিটেফোঁটাও নেই।’ সিএজি আরও বলেছেন, ‘কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারি প্রকল্পগুলি এ সংক্রান্ত আইনের প্রয়োগ ঘটিয়ে শক্তি অর্জন করবে, এমনটাই প্রত্যাশিত ছিল। অথচ কার্যক্ষেত্রে আইনের ব্যবহার হয়নি বললেই চলে।’
এর আগে সাফাইকর্মীদের পুনর্বাসনের কর্মসূচি ব্যর্থ হয়েছিল। এর কারণ হল, ৯৫ শতাংশ সাফাইকর্মী মহিলা হওয়া সত্ত্বেও পুনর্বাসন প্রকল্পটি ছিল পুরুষদের জন্য। দেখা গিয়েছিল, অধিকাংশ সাফাইকর্মীই বয়স্কা মহিলা, ব্যাঙ্ক ঋণ ও ভর্তুকি পেতে স্বচ্ছতার অভাব, দুর্নীতি, দেরি, অনিশ্চয়তা ও হেনস্থার কথা ছেড়ে দিলেও এমন প্রকল্প তাঁদের কোনও কাজেই আসবে না। অভিজ্ঞতা বলছে, এঁদের জন্য গৃহীত প্রকল্প সম্পূর্ণ ভাবে অনুদান নির্ভর হতে হবে। ব্যক্তিগত উপার্জন সৃষ্টির কর্মসূচির সহায়ক হিসাবে রাখতে হবে দক্ষতা বৃদ্ধি প্রশিক্ষণ ও পরামর্শদান পরিষেবাকে।
১৯৯৩ সালের নিষেধাজ্ঞামূলক আইন বলবৎ থাকা সত্ত্বেও দেশে এখনও ১৩ লক্ষ মানুষ মলবহন ও নোংরা সাফাইয়ের কাজে নিযুক্ত বলে জানা যাচ্ছে। রাজ্যগুলি এই পেশায় ১ লক্ষ ১৬ হাজার মানুষের নিযুক্তির কথা জানিয়েছে। অথচ কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সুফল পাওয়ার যোগ্য হিসাবে চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে মাত্র ৮০ হাজার জনকে। কর্ণাটকে সাতের দশক থেকে এই প্রথা নিষিদ্ধ। অথচ এখন এই রাজ্যে ৮ হাজার মানুষ এই পেশায় রয়েছেন বলে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন জানিয়েছন।
২০১১ সালের সরকারি তথ্য অনুযায়ী ২০০৭ সালে শুরু হওয়া সাফাইকর্মীদের পুনর্বাসন ও স্বনির্ভর প্রকল্পে এ পর্যন্ত ১,১৮,৪৭৪ জন সাফাইকর্মী অথবা তাঁদের ওপর নির্ভরশীলকে চিহ্নিত করা গেছে। ২০১১ সালের জনগণনায় প্রকাশ, এখনও ২৬ লক্ষেরও বেশি পরিবারে অস্থায়ী শৌচালয় রয়েছে। সাফাইকর্মীরা এগুলি পরিষ্কার করেন। প্রতি দিন ১৩ লক্ষ মানুষ মলবহনে বাধ্য হন। এঁদের ৮০ শতাংশই দলিত মহিলা। এই পেশায় নিযুক্ত মানুষের সঠিক সংখ্যা জেনে, সমস্যার সার্বিক চিত্র নিরূপণের মাধ্যমে প্রকল্পগুলির সুফল সঠিক হাতে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে নতুন করে একটি সমীক্ষা হবে বলে কেন্দ্রীয় সরকার সম্প্রতি জানিয়েছে।
মলবহন ও তার সাফাইয়ের কাজে কর্মী নিয়োগের প্রথা বিলুপ্ত করার লক্ষ্যে এ সংক্রান্ত নতুন বিল সংসদে পেশ হতে চলেছে। এ ক্ষেত্রে সরকারের দায়বদ্ধতা, রাজনৈতিক সদিচ্ছা, স্বচ্ছতা এবং আইন রূপায়ণকারী কর্তৃপক্ষের দক্ষতা নিয়ে যাতে কোনও সংশয়ের সৃষ্টি না হয় সে জন্য একটি কর্ম পরিকল্পনা প্রণয়ন করা প্রয়োজন। এর মধ্যে যে বিষয়গুলি উল্লেখ থাকা উচিত, তা হল —
(লেখক : ‘গ্রামীণ ঋণ ও মাইক্রো–ফাইনান্স’ বিষয়ে আন্তর্জাতিক উপেষ্টা)
email: dramritpatel@yahoo.com
সর্বশেষ সংশোধন করা : 2/14/2020