উ : গ্রামের মধ্যেও ডিম পোনা উত্পাদন করা যায়। কোনও উত্সাহী স্বনির্ভর দল বা কোনও উত্সাহী ছেলে বা মেয়ে একক ভাবে বা যৌথ ভাবে হ্যাচারি তৈরি করে প্রণোদিত প্রজনন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ডিম পোনা তৈরি করতে পারে। এর ফলে সাধারণ মাছচাষিরা সস্তায় ডিম পোনা কিনতে পারবে।
উ : দেশি পোনা মাছ যেমন রুই ও কাতলা এবং বিদেশি পোনা মাছ যেমন রুপালি রুই (সিলভার কার্প) ও ঘেসো রুই (গ্রাস কার্প) সাধারণ ভাবে পুকুরে ডিম ছাড়ে না। এরা প্রাকৃতিক পরিবেশের প্রভাবে নদীতে ডিম ছাড়ে। তাই আধুনিক পদ্ধতিতে মাছের পিটুইটারি গ্রন্থির নির্যাস পরিণত স্ত্রী ও পুরুষ মাছে ইনজেকশন দিয়ে পুকুরে বা বদ্ধ জলাশয়েই পোনা মাছের প্রজনন করানো হয়। কৃত্রিম উপায়ে মাছের প্রজনন ঘটানোর এই পদ্ধতিকে প্রণোদিত প্রজনন বলা হয়।
ক) নির্ভেজাল ডিম পোনা বা মাছের বাচ্চা পাওয়া যায়।
খ) প্রচুর পরিমাণে ডিম পোনা পাওয়া যেতে পারে।
গ) ডিম পোনার মান ভালো হয় বলে ডিম পোনার বাজারদরও বেশি পাওয়া যায়।
ঘ) আঁতুড় পুকুরে এই ডিম ফুটিয়ে পোনা উত্পাদন ও বিক্রি করে অনেক আয় করা সম্ভব।
উ : বিঘা প্রতি জলায় ১ থেকে ৩ কিলোগ্রাম ওজনের ৩০০ কিলোগ্রাম মাছ মজুত রাখা দরকার। পুকুরে সার প্রয়োগ করে পুকুরের জলে প্রাণীকণা উত্পাদনের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে নিতে হবে এবং দৈনিক মাছের ওজনের ১ থেকে ২% সরিষার খইল ও চালের কুঁড়ো সম পরিমাণে মিশিয়ে মাছকে খেতে দিতে হবে। মাঝেমাঝে জাল টেনে এদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে দেখতে হবে। বর্ষার শুরুতে পুকুরে জাল দিয়ে ডিম ভরা স্ত্রী ও পরিণত পুরুষ মাছ বেছে রাখা উচিত। প্রজননের সময়ও মাছ যাতে কোনও চোট না পায় সে দিকে লক্ষ রাখতে হবে।
উ : প্রজননের উপযোগী স্ত্রী মাছের পেট বেশ ফুলে থাকে, পায়ুমুখ লাল দেখায় এবং ফুলে গিয়ে একটু বাইরের দিকে বেরিয়ে আসে। স্ত্রী মাছের তলপেটে ধীরে চাপ দিলে দু-চারটি ডিম বেরিয়ে আসতেও পারে। পুরুষ মাছের তলপেটে অল্প চাপ দিলেই ঘন দুধের মতো তরল বীজ বেরিয়ে আসে। পুরুষ মাছের কানকোর দুই পাশে পাখনা খসখসে হয়ে থাকে। স্ত্রী মাছের কানকোর দু’পাশের পাখনা পিচ্ছিল থাকে। এই সমস্ত লক্ষণ ভালো ভাবে মিলিয়ে নিয়ে প্রজননের উপযুক্ত স্ত্রী ও পুরুষ মাছগুলি বেছে নিতে হয়। সাধারণ নিয়মে একটি স্ত্রী মাছের সমান ওজনের দু’টি পুরুষ মাছ নির্বাচন করা হয়।
উ : ইনজেকশনের মাত্রা নির্ভর করে মাছের শরীরের অবস্থার উপর, মাছের ওজনের উপর এবং যে দিন ইনজেকশন করা হবে সেই দিনের পরিবেশের আবহাওয়া ও তাপমাত্রার উপর। স্ত্রী মাছকে ২ বার ইনজেকশন দিতে হবে। পুরুষ মাছকে এক বার ইনজেকশন দিতে হয়। পিটুইটারি হরমোনের মাত্রা নীচের ছকটি অনুযায়ী হওয়া দরকার।
মাছের প্রজাতি |
প্রতি কিলোগ্রাম স্ত্রী মাছের ক্ষেত্রে ১ম ইনজেকশনের মাত্রা |
স্ত্রী মাছের প্রথম ও দ্বিতীয় ইনজেকশন দেওয়ার মধ্যবর্তী সময় (ঘণ্টা) |
প্রতি কিলো গ্রাম স্ত্রী মাছের ক্ষেত্রে ২য় ইনজেকশনের মাত্রা |
প্রতি কিলোগ্রাম পুরুষ মাছের ক্ষেত্রে ইনজেকশনের মাত্রা |
কাতলা |
৩ – ৪ মিলিগ্রাম |
৬ |
৫ – ১০ মিলিগ্রাম |
৪ – ৫ মিলিগ্রাম |
রুই |
২ – ৩ মিলিগ্রাম |
৬ |
৬ – ৮ মিলিগ্রাম |
৩ – ৪ মিলিগ্রাম |
মৃগেল |
১ – ২ মিলিগ্রাম |
৬ |
৪ – ৬ মিলিগ্রাম |
২ – ৩ মিলিগ্রাম |
সিলভার কার্প |
৪ – ৬ মিলিগ্রাম |
৮ |
১২ – ১৬ মিলিগ্রাম |
৫ – ৬ মিলিগ্রাম |
গ্রাস কার্প |
৩ – ৪ মিলিগ্রাম |
৮ |
১০ – ১৪ মিলিগ্রাম |
৫ – ৫ মিলিগ্রাম |
উ : প্রজননের জন্য সাধারণত পাতলা মার্কিন কাপড় বা নাইলনের সূক্ষ্ম জাল কেটে হাপা তৈরি করা হয়। হাপার আয়তন হবে ২ মিটার লম্বা, ২ মিটার চওড়া এবং ২ মিটার উঁচু। হাপার উপরে একটি কাপড়ের ঢাকনা এমন ভাবে সেলাই করা থাকে যাতে মাছ লাফিয়ে বাইরে না চলে যায় এবং ঢাকনার এক পাশে মাছ ঢোকানোর ব্যবস্থা থাকে। বাইরের আলোর ব্যবস্থা রাখা দরকার।
উ : হাপাটি যেখানে খাটানো হবে সেখানকার জল ভালো হওয়া দরকার। জলের গভীরতা প্রায় এক কোমরের মতো হওয়া দরকার। হাপার নীচের চারটি কোনা ও উপরের চারটি কোনা শক্ত খুঁটি পুঁতে সেই খুঁটিতে বেঁধে রাখতে হবে।
উ : স্ত্রী মাছকে প্রথম বার ইনজেকশন দেওয়ার ৬ ঘণ্টা পর দ্বিতীয় বার ইনজেকশন দিতে হবে। স্ত্রী মাছকে দ্বিতীয় বার ইনজেকশন দেওয়ার সময় পুরুষ মাছকে ইনজেকশন দিয়ে স্ত্রী ও পুরুষ মাছকে একত্রে প্রজনন-হাপার মধ্যে ছেড়ে দিতে হবে।
উ : একটি হাপাতে ২টি পুরুষ ও একটি স্ত্রী মাছকে রাখতে হয়।
উ : দ্বিতীয় বার ইনজেকশন দেওয়ার ৪ থেকে ৬ ঘণ্টার মধ্যে স্ত্রী মাছ ডিম ছাড়তে শুরু করবে এবং কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে পুরুষ মাছ ঐ ডিমগুলোর মধ্যে তরল বীজ ছেড়ে দেয়। এই তরল বীজ ও ডিমের মিলনের ফলে ডিম নিষিক্ত হয়। ডিম ছাড়ার পরে মাছগুলোকে হাপা থেকে সরিয়ে নিতে হবে। স্ত্রী মাছের সমস্ত ডিম নিষিক্ত হয় না। নিষিক্ত ডিমগুলি দেখতে পরিষ্কার ও স্বচ্ছ হয় এবং অনিষিক্ত ডিমগুলো সাদা ও অস্বচ্ছ হয়। নিষিক্ত ডিমগুলি হাপায় ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা রেখে ডিমের বাইরের আস্তরণকে শক্ত করে নিতে হবে। এর পর ডিমগুলিকে হাপার এক প্রান্তে জড়ো করে এক লিটার মাপকের সাহায্যে মেপে তুলে নিয়ে ডিম ফোটানোর হাপায় নির্দিষ্ট পরিমাণে স্থানান্তরিত করতে হবে।
উ : একটি বড় হাপা এবং একটি ছোট হাপা নিয়ে ডিম ফোটানো বা হ্যাচিং হাপা গঠিত। বড় হাপাটির মধ্যে ছোট হাপাটি বসানো থাকে। বাইরের বড় হাপাটি মার্কিন কাপড়ের তৈরি। এবং এর মাপ দৈর্ঘ্য ২ মিটার, প্রস্থে ১ মিটার ও উচ্চতায় ২ মিটার হয়। ভেতরের হাপাটি গোল ছিদ্র যুক্ত মশারির কাপড় দিয়ে তৈরি; এর মাপ দৈর্ঘ্যে দেড় মিটার, প্রস্থে ৭৫ সেন্টিমিটার ও উচ্চতায় ৫০ সেন্টিমিটার হয়। প্রজনন-হাপার মতো এদের ওপরে কাপড়ের ঢাকনা থাকে না।
উ : ডিম ফোটানোর হাপা পুকুরের পরিষ্কার জলে ৪টি বাঁশের খুঁটির সাহায্যে খাটানো হয়। বাইরের হাপাটি খাটানোর পর এর মধ্যে ভেতরের হাপাটি প্রায় জলের মধ্যে ডুবিয়ে হাপার ৪ কোণা ফিতের সাহায্যে টান টান করে বেঁধে দিতে হবে। প্রজনন-হাপা থেকে একটি এক লিটার মাপকের সাহায্যে তিন লিটার ডিম মেপে তুলে নিয়ে হ্যাচিং হাপার ভিতরে সমান ভাবে ছড়িয়ে দিতে হবে।
উ : সাধারণত ১ লিটার মাপের ডিম থেকে প্রায় ২৫০০০ এর মতো ডিম পোনা পাওয়া যেতে পারে।
উ : ডিম ফোটানার হাপায় ৩ লিটার বা আনুমানিক ৭৫০০০ ডিম ভেতরের হাপাতে রাখা হয়। ১৪ থেকে ১৮ ঘণ্টা পরে ডিম ফুটে ডিম পোনা বেরিয়ে আসে। খুব সরু সূতোর মতো ডিম পোনাগুলি ভেতরের হাপার গোলাকার ছিদ্র দিয়ে বাইরের বড় হাপাতে চলে আসে, কিন্তু ডিমের খোসা ও অনিষিক্ত ডিম ভিতরের হাপাতে থাকে। জল যাতে দূষিত না হয় তার জন্য ভিতরের হাপা খুলে সরিয়ে রাখা হয়। ডিম পোনাগুলি ৩ দিন বাইরের হাপাতে থাকে। এই সময় এদের কোনও খাবার দিতে হয় না। কারণ ডিম পোনাগুলি এই সময় তাদের কুসুমথলিতে সঞ্চিত খাদ্য গ্রহণ করে। ৩ দিন পরে নার্সারি বা আঁতুড় পুকুরে স্থানান্তরিত করতে হয়।
উ : সাইপ্রানাস কার্পের প্রজনন পদ্ধতি অত্যন্ত সহজ। কারণ এরা বদ্ধ জলাশয়ে ডিম পাড়ে। এদের ডিমগুলি একটু চটচটে হওয়ার জন্য কোনও জলজ উদ্ভিদের গায়ে লেগে থাকে। এদের প্রজননের কাজ ২টি পদ্ধতিতে করা যায়।
সর্বশেষ সংশোধন করা : 12/3/2020
জিওল মাছ চাষ নিয়ে যে সব প্রশ্ন প্রায়শই করা হয়ে থাক...
ডিম পোনার চাষ নিয়ে যে সব প্রশ্ন প্রায়শই করা হয়ে থ...
ডিম পোনার চাষ নিয়ে যে সব প্রশ্ন প্রায়শই করা হয়ে থ...
জিওল মাছ চাষ নিয়ে যে সব প্রশ্ন প্রায়শই করা হয়ে থাক...