শিশুদের নিগ্রহ এবং সামাজিক শোষণ সম্পর্কে জনপ্রিয় কিছু প্রচলিত ধারণার কথা নীচে বলা হল-
১. প্রচলিত ধারণা : শিশুরা কখনওই নিগ্রহ বা শোষণের শিকার হয় না। সমাজ তার শিশুদের ভালবাসে।
বাস্তব: হ্যাঁ এটা সত্যি যে আমরা শিশুদের ভালবাসি কিন্তু কোথাও একটা ফাঁক থেকেই যায়। সারা পৃথিবীর মধ্যে ভারতবর্ষেই সব থেকে বেশি সংখ্যায় শিশুশ্রমিক রয়েছে। যৌন নিগ্রহের শিকার এমন শিশুর সংখ্যা এ দেশেই সবচেয়ে বেশি এবং ০-৬ বছরের শিশুদের মধ্যে আনুপাতিক দিক দিয়ে কন্যাসন্তানের সংখ্যা সবচেয়ে কম। এর থেকে বোঝা যায় এ দেশে শিশুকন্যাদের জীবন কতটা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এমনকী ছোট শিশুদের দত্তকের নামে বিক্রয় করা হয় বা মেরে ফেলা হয়।
শিশুদের বিরুদ্ধে অপরাধ সম্পর্কিত তথ্য অত্যন্ত জঘন্য চিত্র প্রকাশ করে। সরকারি রেকর্ড অনুসারে ২০০২ থেকে ২০০৩ এর মধ্যে শিশুদের বিরুদ্ধে অপরাধ ১১.১ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এবং অনেক ঘটনা ঘটে যা কখনও খবর হয় না।
২. প্রচলিত ধারণা : বাড়িই শিশুদের সব থেকে নিরাপদ স্থান
বাস্তব : বাড়িতে শিশুদের উপর যে পরিমাণ অত্যাচার চলে, সেই তথ্য স্পষ্টতই এই বিশ্বাসকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে। বাবা-মায়েরা সন্তানদের তাঁদের ব্যক্তিগত সম্পত্তি হিসেবে দেখেন, যে সম্পত্তি তাঁরা যে কোনও ভাবে ব্যবহার করতে পারেন (বা বলা ভালো অপব্যবহার করতে পারেন)।
বাবা তার নিজের মেয়েকে টাকার জন্য বন্ধুর কাছে বা অচেনা লোকের কাছে বিক্রি করেছে, এমন ঘটনার খবর আমরা আকছারই পাই। শিশুদের যৌননিগ্রহ সংক্রান্ত তথ্য থেকে জানা যায়, পরিবারের মধ্যেই যৌন সঙ্গম, নিগ্রহের সব চেয়ে পরিচিত উদাহরণ। বাবা স্বয়ং নিজের মেয়েকে ধর্ষণ করেছে এমন বহু ঘটনা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে এবং কোর্টেও প্রমাণিত হয়েছে। কন্যাভ্রূণ হত্যা, সদ্যোজাত কন্যাসন্তান হত্যা, অন্ধবিশ্বাসের বশবর্তী হয়ে শিশু হত্যা, ভারতের কোনও কোনও অঞ্চলে ‘যোগিনী’ বা ‘দেবদাসী’ প্রথার নামে দেব-দেবীর কাছে কন্যাসন্তানকে উৎসর্গ করা --- এগুলো সবই বাড়িতে শিশুদের উপর হিংসার উদাহরণ। খুব ছোট বয়সে কন্যাসন্তানদের বিয়ে দিয়ে দেওয়ার মধ্যে কোনও রকম ভালোবাসা কাজ করে না। বরং এর মধ্যে তাকে যত্ন করা ও বড় করে তোলার দায় এড়িয়ে যাওয়ার ব্যাপার থাকে। এর ফলে শিশুটি অসুস্থ হয়ে পড়লে বা মানসিক বিপর্যয়ের শিকার হলেও তা নিয়ে অভিভাবকদের হেলদোল থাকে না।
এগুলি সবই হয়তো শিশু নিগ্রহের অত্যন্ত চরম উদাহরণ। তবে বাড়িতে শিশুদের ব্যাপক মারধর করাটা দেশের প্রায় প্রতিটি বাড়িরই চেনা ছবি। ধনী-দরিদ্র সব পরিবারেই শিশুদের অবহেলা করাটা একটা সাধারণ বিষয়ে পরিণত হয়েছে। এর ফলে শিশুদের আচরণগত সমস্যা হচ্ছে, তারা মানসিক অবসাদেরও শিকার হচ্ছে।
৩. প্রচলিত ধারণা : শিশুপুত্রকে নিয়ে চিন্তার কিছু নেই, এদের সুরক্ষার প্রয়োজন নেই।
বাস্তব: বালকরাও বালিকাদের মতোই শারীরিক ও মানসিক নিগ্রহের শিকার হয়। যদিও সামাজিক অবস্থানের দিক থেকে বালিকারা কিছুটা নীচে থাকে বলে, তাদের অবস্থাটা বেশি খারাপ। বালকদের স্কুলে এবং বাড়িতে শাস্তি দিতে মারধর করা হয়, অনেককে শ্রমিকের কাজে পাঠিয়ে দেওয়া হয়, এমনকী বিক্রিও করে দেওয়া হয়। অনেকে যৌননিগ্রহেরও শিকার হয়।
৪.প্রচলিত ধারণা : আমাদের স্কুলে/ গ্রামে এমন হয় না।
বাস্তব : আমরা সবাই ভাবি শিশু নিগ্রহের ঘটনা অন্যত্র হয়, আমাদের বাড়ি, স্কুল বা গ্রামে বা সম্প্রদায়ে হয় না। এর শিকার অন্যদের ছেলেপুলেরা, আমাদের নয়। গরিব বা শ্রমিক শ্রেণি, উপার্জনহীন বা অশিক্ষিত, এমন পরিবারেই এ সব ঘটে। মধ্যবিত্ত পরিবারে এ সব হয় না। ও সব শহর বা মফঃস্বলে হয়, গ্রামাঞ্চলে হয় না। কিন্তু বাস্তব একেবারেই বিপরীত। নিগৃহীত শিশু আমাদের আশেপাশে সর্বত্রই আছে। আমাদের সাহায্যের বড় প্রয়োজন এদের।
৫. প্রচলিত ধারণা: শিশুদের যারা নিগ্রহ করে তারা মানসিক ভাবে অসুস্থ।
বাস্তব : এ কথাটি খুবই প্রচলিত যে নিগ্রহকারীরা মানসিক ভাবে অসুস্থ। কিন্তু এটা সত্য নয়। নিগ্রহকারীরা চারিত্রিক দিক থেকে খুবই স্বাভাবিক এবং বৈচিত্র্যপূর্ণ। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, শিশুদের ওপর যৌন নিপীড়নকারীরা তাদের কাজের পক্ষে নানা যুক্তি দিয়ে থাকে। যে সব লোকে শিশু পাচার করে, তারা সেই শিশুর পরিবারের খুব কাছেরই মানুষ হয়। সেই পরিবারের বিশ্বাসকে ব্যবহার করে তারা তাদের শিশুদের নিয়ে পালিয়ে যায়।
সর্বশেষ সংশোধন করা : 6/19/2020
কেন সুসংহত শিশু বিকাশ প্রকল্প হাতে নেওয়া হল, কী পর...
কী ভাবে যৌন নিগ্রহের শিকার হয় শিশুরা তা এখানে বিস্...